জইশ প্রধান মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে বারবার দাবি করছে ভারত। এই দাবিতে ভারত পাশে পেয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন-সহ বিশ্বের প্রথম সারির সব দেশকেই। কেবলমাত্র চিনের বাধায় আটকে রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সিদ্ধান্ত। কিন্তু চিন যতই মাসুদ আজহারকে বাঁচানোর চেষ্টা করুক, ভারতের বিরুদ্ধে জইশ প্রধান ক্রমাগত যে নিজের রাগ উগড়ে দিচ্ছেন, তা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পেশ করা মাসুদের একটি অডিও টেপ থেকেই পরিষ্কার। এই টেপে মাসুদ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘এ তো সবে শুরু। কাশ্মীরকে পাকিস্তানের কাছে তুলে না দিলে ভারতে আগুন জ্বলবে।’
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি ডসিয়ার পাঠিয়েছে ভারত। এই ডসিয়ারে মাসুদ আজহারের ১৫ মিনিটের একটি বক্তৃতা রয়েছে। এই বক্তৃতাতেই জইশ প্রধান ভারতে আরও হামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অডিও বার্তায় মাসুদ বলেছেন, “পাকিস্তান ও কাশ্মীর আলাদা নয়। কাশ্মীরিরা বলেন, কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু আমি মনে করি পাকিস্তান কাশ্মীরের অংশ। তাই যদি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে না দেওয়া হয়, তাহলে এই আগুন দিল্লি, মুম্বই, লখনৌ হয়ে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়বে।”
ভারতের তরফে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতে গত কয়েক বছরে হওয়া প্রায় সব বড় সন্ত্রাসবাদী হামলার পিছনে রয়েছে জইশ ই মহম্মদ। ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালায় জইশের আত্মঘাতী জঙ্গি সংগঠন। এই হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। এর আগে ২০০১ সালে কাশ্মীরের বিধানসভায় জঙ্গি হামলার পিছনেও ছিলেন মাসুদ। এই হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারতের সংসদেও হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। ২০১৬ সালে পাঠানকোট বায়ুসেনা শিবির এবং ২০১৮ সালে উরির সেনা ছাউনিতেও হামলা চালিয়েছিল মাসুদ আজহারের জঙ্গি দল জইশ ই মহম্মদ।
পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স নতুন করে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয় রাশিয়াও। জইশ প্রধানকে একবার গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করে দিলে, বিশ্বের কোনও দেশে যেতে পারবেন না মাসুদ। এমনকী কোনও দেশ জইশকে কোনও ভাবেই সাহায্য করতে পারবে না। মাসুদকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণার পক্ষে থাকার জন্য ভারত আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের কাছেও আবেদন করে। আমেরিকার তরফে রাষ্ট্রপুঞ্জে জানানো হয়, মাসুদকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা না করলে তাঁর মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি ও ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
একমাত্র পাকিস্তানের বন্ধু বলে পরিচিত চিন এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। এমনকী নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে মাসুদকে যাতে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা না করা হয়, তার পক্ষে সওয়াল করছে বেজিং। ১৩ মার্চ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ দিনও চিন এই প্রস্তাব আটকে দেয়। কিন্তু কী কারণে তারা এই প্রস্তাব আটকাচ্ছে, তার কোনও ব্যাখ্যা চিনের তরফে দেওয়া হয়নি।