বলিউডি ছবির জনপ্রিয়তা পাকিস্তানে প্রবল৷ বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ও কূটনৈতিক গরম হাওয়ার কারণে এই ছবি প্রদর্শনে বাধা পড়ে৷ সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা ও ভারতীয় সেনা সদস্যদের মৃত্যুর জেরে তীব্র উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ তার জেরে পাকিস্তানে আপাতত বন্ধ ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শন৷
তবে আধুনিক নেটিজেন প্রজন্মের কাছে এটা কোনও বিষয়ই নয়৷ কারণ পাক নেটিজেনরা সিনেমা হলে না গিয়েও নেটফ্লিক্সে, ইউটিউবে বা অন্য প্ল্যাটফর্মে বলিউড মুভি দেখছেন৷ ফলে পাকিস্তানের এই নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই প্রতীকী, এ দিয়ে আসলে কিছুই বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে হলগুলি৷
রিপোর্টে উঠে এসেছে,পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর সর্বভারতীয় সিনে ওয়ার্কার্স সমিতি পাকিস্তানি অভিনেতা-কলাকুশলীদের বলিউডে কাজ করতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার জবাবেই পাকিস্তানের তরফে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের হল মালিকরা৷ কারণ ভারতীয় সিনেমা দেখিয়ে পাকিস্তানের সিনেমা হলগুলো বিপুল পরিমাণ মুনাফা করে৷
বিবিসি জানাচ্ছে, এর ফলে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। শুধু সিনেমাই নয়, জনপ্রিয় ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করা হয়েছে৷ এর আগে ২০১৬ সালেও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ঘটনাবলীর সময় পাকিস্তানের ফাওয়াদ খানের বলিউড ছবিতে অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়। তবে পাকিস্তানিদের একটা বড় অংশ আছে – যারা মনে করেন পাকিস্তানে বলিউডি সিনেমা নিষিদ্ধ করলে দেশটির অর্থনীতিতেও একটা প্রতিক্রিয়া হবে। পাকিস্তানের বক্স অফিসকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
ভারতীয় ছবি ও সিরিয়াল সম্প্রচার পাকিস্তানে বন্ধ করার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন বিবিসির সংবাদদাতা ইলিয়াস খান আর শুমায়লা জাফরি৷ তাঁর রিপোর্টে উঠে এসেছে, এটা হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খুবই সহজ, কিন্তু একটা সন্দেহও দেখা দিয়েছে যে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ ভুল জায়গায় আঘাত হেনেছে কিনা। তিনি খতিয়ে দেখেছেন, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সংঘাত বাড়লেও পাক জনগণের বলিউড প্রীতি চিরকালই অটুট৷
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী যেভাবে ঢুকে পড়েছিল বালাকোটে তার প্রতিক্রিয়া পাক বিমান বাহিনীও ভারতীয় সীমান্ত লঙ্ঘন করে৷ ভারতীয় যুদ্ধবিমান চালক অভিনন্দন বর্তমানের বিমান ধংস হয়৷ তাকে বন্দি করার পর কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ পাকিস্তানে অনেকেরই ধারণা, এই অবস্থায় ভারতীয় সিনেমা বন্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত৷
রিপোর্টে উঠে এসেছে, পাকিস্তানে সিনেমা হল আছে প্রায় ১২০টি৷ প্রতিটি ছবি মোটামুটি দু’সপ্তাহ ধরে চলে৷ একটা হলকে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে বছরে অন্তত ২৬টা ছবি দেখাতে হয়। কিন্তু পাকিস্তানের নিজস্ব যে চলচ্চিত্র শিল্প তাতে বছরে মাত্র ১২ থেকে ১৫টি ছবি তৈরি হয়। এরপর থাকে জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমার ভরসা৷ সেখানেই ললিউডকে টেক্কা দেয় বলিউড৷ পাকিস্তানি চলচ্চিত্র শিল্পের ৭০ ভাগ রাজস্বই আসে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে।
এর আগেও পাকিস্তানে বলিউডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৯৬৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৪০ বছর স্থায়ী। কিন্তু তা পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে ধস নামায়, শত শত সিনেমা হল পরিণত হয় শপিং মল বা বিয়ের অনুষ্ঠান স্থলে। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্প আবার উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছিল৷ এরই মাঝে ফের ভারতীয় ছবি প্রদর্শন বন্ধ হওয়ায় অবস্থা গুরুতর৷ পাকিস্তানি চলচ্চিত্র প্রযোজক নাদিম মান্ডভিওয়ালা বলছেন, তিনি আশা করেন এ নিষেধাজ্ঞা হবে সাময়িক এবং শুভবুদ্ধিরই জয় হবে।