না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রবিবার বেলা ১টা নাগাদ থমকে গিয়েছে তাঁর লড়াই। এত কম বয়সে ঐন্দ্রিলার এই মৃত্যু যেন নাড়িয়ে দিয়েছে টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়াকে।
ছবি: সংগৃহীত
০২২০
ঐন্দ্রিলার জীবনের অধ্যায় সীমিত। মাত্র ২৪টি বসন্ত পেরিয়েছিলেন অভিনেত্রী। আরও অনেকটা পথ চলা বাকি ছিল। তার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনেছেন তিনি। ঐন্দ্রিলার এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের জীবনের শেষ সময়টুকুতে তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী।
ছবি: সংগৃহীত
০৩২০
ঐন্দ্রিলার সঙ্গে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন সব্যসাচী। মারণরোগের সঙ্গে লড়াইয়ে বান্ধবীকে কখনও একা ছাড়েননি তিনি। তাঁরা যেন হয়ে উঠেছিলেন একে অপরের জীবনের জিয়নকাঠি।
০৪২০
একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে প্রথম বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। সব্যসাচীর সঙ্গে তখনও তাঁর পরিচয় হয়নি। টানা দেড় বছর মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন ঐন্দ্রিলা। এর পর সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের শুরু।
ছবি: সংগৃহীত
০৫২০
ঐন্দ্রিলার শরীরে আরও এক বার ক্যানসার থাবা বসিয়েছিল। সেই লড়াইয়ে শুরু থেকে ছিলেন সব্যসাচী। এমনকি, কেমোথেরাপির জন্য যখন ঐন্দ্রিলার চুল কেটে ফেলতে হয়, মাথা কামিয়েছিলেন সব্যসাচীও।
ছবি: সংগৃহীত
০৬২০
মূলত, টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়াতেই ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সব্যসাচীর পরিচয় হয়। অভিনয়ের সূত্রেই তাঁদের আলাপ। অভিনয় জগতে সব্যসাচীও বেশ পরিচিত নাম। বাংলা টেলিভিশনে ধারাবাহিক ভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত
০৭২০
সব্যসাচীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’। সেখানে তিনি সাধক বামাক্ষ্যাপার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই রূপেই বাংলা টেলিভিশনে তাঁর পরিচিতি। সব্যসাচী হলেন পর্দার বামাক্ষ্যাপা।
ছবি: সংগৃহীত
০৮২০
এ ছাড়া, আরও কিছু ধারাবাহিকে কাজ করেছেন ঐন্দ্রিলার প্রেমিক। ‘সাত ভাই চম্পা’ ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল রাজা নক্ষত্রজ্যোতি। ‘জড়োয়ার ঝুমকো’ ধারাবাহিকে সব্যসাচীকে দেখা গিয়েছিল অর্ণব চরিত্রে।
ছবি: সংগৃহীত
০৯২০
সব্যসাচী অভিনীত আরও একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ’। সেখানে সব্যসাচীকে দেখা গিয়েছে যুধিষ্ঠিরের ভূমিকায়। ‘ওম নমঃ শিবায়’ ধারাবাহিকে সব্যসাচী ভগবান বিষ্ণুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ছবি: সংগৃহীত
১০২০
সব্যসাচীর অভিনয়ের তালিকায় এ ছাড়াও রয়েছে ‘অগ্নিজল’, ‘এসো মা লক্ষ্মী’ এবং ‘ঝুমুর’-এর মতো ধারাবাহিক। ‘ঝুমুর’-এর সেট থেকেই রূপকথার শুরু।
ছবি: সংগৃহীত
১১২০
২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের সেটে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল সব্যসাচীর। সেখান থেকেই প্রেম। যদিও প্রথম দেখাতেই যে তাঁরা পরস্পরকে মন দিয়ে ফেলেছিলেন, তা নয়।
ছবি: সংগৃহীত
১২২০
ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, ‘প্রথম দেখায় প্রেম’-এ বিশ্বাসী ছিলেন না ঐন্দ্রিলা। প্রথম প্রথম বন্ধুর মতো এগিয়েছিল সম্পর্ক। শুটিং থেকে ছুটি পেলেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে আড্ডা দিতেন ঐন্দ্রিলা। থাকতেন সব্যসাচীও।
ছবি: সংগৃহীত
১৩২০
এর পর ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে ফোনে কথাবার্তা শুরু হয়। বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। প্রেমের সম্পর্কে কোনও রাখঢাক করেননি সব্যসাচী বা ঐন্দ্রিলা, কেউই। সমাজমাধ্যমে তাঁরা দু’জনেই সক্রিয় ছিলেন। একসঙ্গে নানা ছবি পোস্ট করতেন দু’জনেই।
ছবি: সংগৃহীত
১৪২০
২০১৭ থেকে ২০২২— রূপকথার মেয়াদ ৫ বছর। হাত ছাড়লেন ঐন্দ্রিলা। যাঁকে সবচেয়ে বেশি আঁকড়ে ধরেছিলেন, তিনিই সব্যসাচীকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। প্রেমিকাকে ধরে রাখতে পারলেন না পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’। না, অলৌকিক কাজ করল না।
ছবি: সংগৃহীত
১৫২০
রবিবার বেলার দিকে ঐন্দ্রিলার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যায়, সব্যসাচী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডি-অ্যাকটিভেট করে দেওয়া হয়েছে। সমাজমাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অভিনেতা।
ছবি: সংগৃহীত
১৬২০
এর আগে শনিবার ফেসবুক থেকে ঐন্দ্রিলা সংক্রান্ত সমস্ত পোস্ট মুছে দিয়েছিলেন সব্যসাচী। শনিবার সন্ধ্যায় নতুন করে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। হয়তো তখনই অশনি সঙ্কেত পেয়ে গিয়েছিলেন সব্যসাচী। হয়তো তখনই আঁচ করেছিলেন, তাঁর সব চেষ্টা, সব লড়াই ব্যর্থ করে দিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন ঐন্দ্রিলা।
ছবি: সংগৃহীত
১৭২০
রবিবার সব্যসাচীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর বন্ধু তথা অভিনেতা সৌরভ দাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘সব্য ভেঙে পড়েছে। ঐন্দ্রিলার পরিবারও ভেঙে পড়েছে। তবে সব্যকে বলেছি, এক ফোঁটা চোখের জল না ফেলতে। আজ ওকে সামলাতে হবে ঐন্দ্রিলার পরিবারকে।’’
ছবি: সংগৃহীত
১৮২০
সৌরভ আরও জানান, ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর সব্যসাচী কঠিন পণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি আর কখনও ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে কিছু লিখবেন না। সৌরভের কথায়, ‘‘সব্যসাচী ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আর কখনও কিছু লিখবে না। কারণ মিষ্টির কথাতেই ও লিখতে শুরু করে। ঐন্দ্রিলার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর ভাগ করে নিচ্ছিল সকলের সঙ্গে। যদি কেউ আশা করেন, ফেসবুকে কোনও পোস্ট দেবে সব্য, তা আর হবে না।’’
ছবি: সংগৃহীত
১৯২০
ফেসবুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও ইনস্টাগ্রামে সব্যসাচীর অ্যাকাউন্ট এখনও রয়ে গিয়েছে। তবে সেখানে তিনি সক্রিয় নন। শেষ পোস্ট মাসখানেক আগে। অনুরাগীরা উৎকণ্ঠায়, প্রিয় অভিনেতা কি তবে পাকাপাকি ভাবে সমাজমাধ্যম ত্যাগ করলেন?
ছবি: সংগৃহীত
২০২০
স্বল্প সময়ে ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী দর্শকদের মন কেড়েছিলেন। রূপকথার আখ্যান রেখে চলে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। অনুরাগীদের আশা, মৃত্যুশোক কাটিয়ে ফের পর্দায় ফিরবেন ‘বামাক্ষ্যাপা’ সব্যসাচী। তাঁর মাধ্যমেই স্মৃতিতে জেগে থাকবেন ঐন্দ্রিলা।