চাপ বাড়াচ্ছেন অমিত শাহ, মহালয়ায় নিহত কর্মীদের উদ্দেশে তর্পণ করতে নাড্ডাকে পাঠাচ্ছেন কলকাতায়

বাংলায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসে খুন হওয়া দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এই মহালয়ায় তর্পণ করবেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। সম্ভবত কলকাতায় গঙ্গার কোনও ঘাটে সেই তর্পণ করবেন তিনি।

গত কাল দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে বাংলার নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জে পি নাড্ডাও। সূত্রের খবর, বিজেপি নেতা মুকুল রায়, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই বৈঠকেই অমিত শাহকে প্রস্তাব দেন, মহালয়ার দিন তর্পণ করার। তবে অমিত শাহ-র সে দিন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। তাই ঠিক হয়েছে দলের সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট কলকাতায় এসে তর্পণ করবেন।

এ বার মহালয়া পড়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার। শুধু কলকাতায় নয়, জেলায় জেলায় বিজেপি নেতারা ওই দিন নিহত দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তর্পণ করবেন।

পিতৃপুরুষের উদ্দেশে মহালয়া তর্পণ করার কথা শাস্ত্রে বলা রয়েছে। তবে অনেকের মতে, মহালয়ায় দিন পিতৃপক্ষের অবসানের মুহূর্তে যে কেউ তাঁর পরলোকগত কাছের মানুষের জন্য তর্পণ করতে পারেন। এমনকী তা করা যায় মৃত গৃহপালিত পশুর উদ্দেশেও।

বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, “বাংলায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দলের যে কর্মীরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা তো আমাদেরই ভাই বা দাদা-র মতো। তাঁদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক। এই তো সে দিন দিলীপদা এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন”।

বিজেপি-র ওই নেতার কথায়, বাংলায় তৃণমূলের সন্ত্রাস যে ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিচ্ছে, কত মায়ের কোল খালি করে দিচ্ছে সেটা সব শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের বোঝা উচিত। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসানের পর দেবীপক্ষের সূচনা হবে। বিজেপি চায় বাংলারও শুভ দিন আসুক।

বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। লোকসভা ভোটের সময় দু’জনেই বাংলায় প্রচারে এসে বলেছেন, জম্মু কাশ্মীরেও ভোট হয়েছে। কিন্তু সেখানে হিংসা হয়নি। অথচ বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি-র অন্তত ৬৫ জন কর্মী খুন হয়েছেন।

শুধু পঞ্চায়েত ভোটে নয়, লোকসভা ভোটের পরেও বাংলায় মৃত্যু মিছিল চলছে। বিজেপি কর্মী যেমন খুন হয়েছে, তেমনই তৃণমূলের কর্মীও খুন হয়েছে। কদিন আগেই বোলপুরে বিজেপি-র এক কর্মী খুনের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে।
রাজ্য বিজেপি তো বটেই মোদী-অমিত শাহরা এ বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল বিরোধী প্রচার গড়ে তুলতে চান তা অনেক আগেই বোঝা গিয়েছে। লোকসভা ভোটে এ বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর রাইসিনা পাহাড়ে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখনই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, দল তাঁদের পাশে রয়েছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক বার্তাও ছিল তার মধ্যে। এ বার সেটাই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তাঁরা।

তবে তর্পণের কর্মসূচির মধ্যে পর্যবেক্ষকরা অনেকেই এর মধ্যে মুকুল রায়ের রাজনৈতিক কৌশল দেখছেন। অতীতে তৃণমূলে থাকার সময়ে বামেদের বিরুদ্ধে এই কৌশলেই রাজনীতি করেছেন তিনি। জেলায় বাম সন্ত্রাসে খুন হওয়া কর্মীর দেহ কলকাতায় নিয়ে এসেছেন। কখনও বা সতীর্থ কর্মীর মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করেছেন। এ বার তৃণমূলকে সেই রাজনীতিতেই বধ করতে চাইছে বিজেপি।

পিনাকপাণি ঘোষ ও শঙ্খদীপ দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.