ক্রিকেট যে কত মহান অনিশ্চয়তার খেলা, তা আরও এক বার বোঝা গেল পাকিস্তানকে দেখে। যে দলটার বাড়ি ফেরার টিকিট প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তারাই পৌঁছে গেল ফাইনালে!
এ বার প্রশ্ন, রবিবার মেলবোর্নে পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী কে হতে চলেছে। একটা কথা বলে রাখি। বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে কিন্তু ভারত বনাম ইংল্যান্ডের সমানে সমানে লড়াই হবে। কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকবে না। আর এই ম্যাচে সেরা দলটাই খেলাতে হবে ভারতকে।
কী হতে পারে ভারতের সেরা এগারো? বহু দিন নির্বাচক থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটা দল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা তিনটি জিনিস দেখে থাকি। এক, বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা কী। দুই, কোন জায়গায় খেলা হচ্ছে। তিন, পিচ কী রকম আচরণ করতে পারে। এই তিনটে বিষয় মাথায় রেখেই দল বেছে নেওয়ার দিকে এগোতাম। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিও নিশ্চয়ই ওই একই রাস্তায় হেঁটে দল বেছে নেবে।
ইংল্যান্ড এবং অ্যাডিলেডের কথা মাথায় রেখে তা হলে কী হওয়া উচিত ভারতের সেরা একাদশ? এটা স্বাভাবিক যে, নক আউট মঞ্চে এসে দলে বিশেষ পরিবর্তন হবে না। জ়িম্বাবোয়ে ম্যাচ আমি হিসাবের মধ্যে রাখছি না। চলতি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচের দলকে যদি মাপকাঠি ধরি, তা হলে সেখান থেকে দু’টো পরিবর্তন করতে চাই। এক, বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর পটেলের জায়গায় খেলুক লেগস্পিনার যুজ়বেন্দ্র চহাল। দুই, ঋষভ পন্থ আসুক দীনেশ কার্তিকের জায়গায়।
কেন এই দু’টো পরিবর্তনের কথা বলছি? প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ওভারে অক্ষর কুড়ির উপরে রান দিয়ে ফেলার পর থেকে দেখছি ওর আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ওকে কোনও ম্যাচেই পুরো চার ওভার বল করাতে পারছে না। অক্ষরকে আনা হয়েছিল রবীন্দ্র জাডেজার বিকল্প হিসেবে। কিন্তু ব্যাট হাতেও একেবারে দাগ কাটতে পারেনি অক্ষর।
অস্ট্রেলিয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে আসার কারণ হল, এখানকার বড় মাঠ। তাই স্পিনারদের তুলে মারা সোজা নয়। ঘটনা হল, সেমিফাইনালটা এমন একটা মাঠে হচ্ছে, যার স্কোয়ার বাউন্ডারি বেশ ছোট। ফলে স্পিনারদের বিরুদ্ধে বড় শট খেলতে দ্বিধা করবে না ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি বলব, ঝুঁকি নিয়ে চহালকে খেলিয়ে দেওয়া হোক। এ রকম বড় ম্যাচে এই ধরনের ফাটকা ঘুরিয়ে দিতে পারে খেলা।
আরও একটা ব্যাপার আছে। ক্রিকেট ইতিহাস বলে, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা কখনওই লেগস্পিনের বিরুদ্ধে সাবলীল নয়। সেটা সুভাষ গুপ্তে থেকে অনিল কুম্বলে— সবার বিরুদ্ধেই বোঝা গিয়েছে। বিশ্বকাপের একেবারে শেষ দিকে এসে দেখছি, পিচ একটু শুকনো হয়ে গিয়েছে। অ্যাডিলেডে তো আবার স্পিনাররা সাধারণত সাহায্য পেয়ে থাকে। যদি বা নতুন পিচেও খেলতে হয় রোহিতদের, তা হলেও চহালের রিস্টস্পিন উইকেট তোলার পক্ষে বেশি কার্যকর হবে বলেই আমার ধারণা। আর ইংল্যান্ডকে আটকে রাখতে গেলে উইকেট নিতেই হবে। ওদের আট নম্বর পর্যন্ত বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান রয়েছে। উইকেটে থেকে গেলে দ্রুত রান তুলে দেবে। চহাল এবং অশ্বিনের লেগস্পিন-অফস্পিন জুটি কিন্তু ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলতে পারে।
এ বার আসছি ব্যাটিং অর্ডারের কথায়। চোখ বুঁজে সেমিফাইনালে ঋষভ পন্থকে খেলানো উচিত। দীনেশ কার্তিককে আনা হয়েছিল শেষ পাঁচ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু অস্ট্রেলীয় পিচের গতি এবং বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না ও। পাঁচ নম্বরে ঋষভ নামা মানে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের গভীরতা বাড়বে।
তা ছাড়া ইংল্যান্ডের অন্যতম অস্ত্র হল লেগস্পিনার আদিল রশিদ। বাঁ-হাতি ঋষভের পক্ষে রশিদকে আক্রমণ করাটা সহজ হবে। অ্যাডিলেডের স্কোয়ার বাউন্ডারি ছোট বলে আমাদের স্পিনারদের সমস্যা হলে, ওদের স্পিনারদেরও হবে। এখানেই কাজে আসবে ঋষভ। ওর হাতে বড় শট আছে, সেটা সবাই জানে।
কঠিন ম্যাচ জেতার একটা বড় শর্ত, ঠিক দল বাছা। আশা করব, ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি কোনও ভুল করবে না।