সাধারণ একটি বাক্স নিয়ে নীলাচল এক্সপ্রেসের সাধারণ যাত্রীদের কামরায় উঠে পড়েছিলেন এক মহিলা যাত্রী। রেলপুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তাঁর বাক্সটি পরীক্ষা করার জন্য খুলতেই আতঙ্কে সিঁটিয়ে গেলেন কামরার বাকি যাত্রীরা! দেখা গেল বাক্সের ভিতরে নড়াচড়া করছে খান তিরিশেক অজগর সাপ। কিলবিল করছে মাকড়সা, গিরগিটি এমনকি, গুবরে পোকাও।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রেলপুলিশ এবং বন দফতরের একটি দল নীলাচল এক্সপ্রেসে বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল। তারা জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলির প্রত্যেকটিই অত্যন্ত বিরল প্রজাতির এবং এদের বাজারদর সব মিলিয়ে কম করে ৫০ কোটি টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা যাত্রীর নাম দেবী চন্দ্র। তিনি পুণের বাসিন্দা। খড়্গপুরের কাছে হিজলি স্টেশন থেকে দিল্লি যাওয়ার ট্রেন নীলাচল এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। তাঁকে ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের কাছে খুঁজে বের করে পুলিশ। পরে গ্রেফতারও করে।
রেল পুলিশের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা আদিত্য চৌধরি জানিয়েছেন, ওই মহিলাকে জেরা করে জানা গিয়েছে, নাগাল্যান্ড থেকে ওই বাক্সভর্তি সরীসৃপ এবং পোকামাকড় নিয়ে আসছিলেন তিনি। পথে গুয়াহাটিতে নামেন। সেখান থেকে ট্রেনে হাওড়ায় এসে দিল্লির ট্রেন ধরতে হিজলিতে যান।
তবে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ওই সাপের প্রজাতি কী বা দাম কত? সে বিষয়ে প্রায় কিছুই জানেন না। আট হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি শুধু মাত্র ওই বিষধরগুলিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিলেন। তাঁকে ওই বিরল প্রজাতির প্রাণী সরবরাহ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নাগাল্যান্ডেরই এক ব্যক্তি।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার কাছে মোট ২৮টি সাপ ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি অজগর এবং কিছু বিরল প্রজাতির অজগর সাপও ছিল। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানা গেছে, বিরল প্রজাতির ওই সাপগুলির মধ্যে রয়েছে স্যান্ড বোজ, অ্যালবিনো পাইথন, বল পাইথন এবং রেড পাইথন। এছাড়া বিষধর মাকড়সা, বিরল প্রজাতির গিরগিটি এবং গুবরে পোকাও ছিল ওই মহিলা যাত্রীর কাছে। এই সব কিছুই অবশ্য বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদিত্য। এক সাপুড়েকে ডেকে ওই মহিলার সঙ্গে থাকা সাপের বাক্সটি থেকে সাপগুলি উদ্ধার করা হয়।
বিরল প্রজাতির এই প্রাণীগুলি ঠিক কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানা না গেলেও রেলপুলিশের স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত অফিসার এস কে তিওয়ারি জানিয়েছেন, অনেকসময় দেখা যায় এই সমস্ত প্রাণীর বিষ থেকে মাদক তৈরি করা হয়, নেশার জন্য এই ধরনের সরীসৃপ ব্যবহার করেন অনেকে। যদিও সে জন্যই ওই সাপ বা মাকড়সাগুলি পাচার করা হচ্ছিল কি না সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।