ইমরান খানের উপর যে হামলা হতে পারে, তা নাকি আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল পুলিশ। আর সেই মর্মে জারি করা হয়েছিল সতর্কতাও। কিন্তু তৎসত্ত্বেও বিপদ এড়ানো গেল না। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে এমনটাই। ইমরানের উপর হামলার বিষয়ে গুজরনওয়ালা সিটি পুলিশের তরফে ১ নভেম্বরই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এই সতর্কতায় জানানো হয়েছিল যে, গুজরনওয়ালায় লং মার্চ করে প্রচার চালানোর সময় হামলা হতে পারে ইমরানের উপর। তাই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি ইমরান যে গাড়িতে চড়ে প্রচার চালাবেন, তাতে বুলেট প্রতিরোধক বর্ম এবং তাঁর সামনে বুলেট প্রতিরোধী কাচ লাগানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানের গুজরাটের পুলিশ আধিকারিক আখতার আব্বাস সাংবাদিকদের জানান, লাহোর থেকে লং মার্চ শুরু হওয়ার পর থেকেই পুলিশের তরফে ইমরানের পার্টি সদস্যদের বুলেট প্রতিরোধক বর্ম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের সরকার তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ এবং সন্ত্রাস দমন বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে একটি দলও গঠন করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবারের হামলার পরপরই সেনেটর এজাজ চৌধুরি টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য হামিদ চট্টাকে সতর্ক করেছিলেন যে, ওয়াজিরাবাদে তাঁদের দলীয় প্রধানের উপর হামলার চেষ্টা করা হবে। অন্য দিকে, ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতা আসাদ উমর এই ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন শহবাজ শরিফের দলের দিকে আঙুল তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকালে ওয়াজ়িরাবাদ জেলার গুজরনওয়ালার আলওয়ালা চকে একটি এসইউভি গাড়িতে চড়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাক ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ইমরান। সেখানেই তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর ছ’রাউন্ড গুলি চালানো হয়। গুলি এসে লাগে ইমরানের ডান পায়ে। এই ঘটনায় ইমরান এবং তাঁর আপ্ত সহায়ক-সহ একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সমর্থকদের উদ্দেশে লং মার্চে যোগদানের আবেদন জানাচ্ছিলেন ইমরান। সেই সময় এলোপাথাড়ি গুলি চলে তাঁকে লক্ষ্য করে। আহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য লাহোরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তিনি এখন বিপন্মুক্ত বলেই খবর। ইমরানের হামলাকারীকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইমরানের উপর হামলার পর পরই, দলনেতার উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দেশ জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পিটিআই নেতা ও সমর্থকরা। পঞ্জাবের প্রদেশের মন্ত্রী মেহমুদুর রশিদের নেতৃত্বে লিবার্টি চকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। শওকত খানম হাসপাতাল, শাহদারা চক, জিপিও চক, দ্য মল, ফিরোজপুর রোড এবং গভর্নর হাউসের বাইরেও বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন।
করাচিতে প্রতিবাদের জেরে পাওয়ার হাউস মোড় থেকে দীর্ঘ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও ফাইভ-স্টার মোড়ে, টিন তালওয়ারে এবং জেটি ব্রিজে ইমরান-পন্থীরা তাঁর সমর্থনে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্লোগান তোলা হয় ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধেও।