২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল যে শতবর্ষের স্মরণ ভারতবাসীকে করতে হয়েছিল, তা কোনো আনন্দের উৎযাপন ছিল না, কোনো মনীষার শুভ আবির্ভাব দিবসও ছিল না। তা ছিল মানুষের পাশবিক শক্তির অস্তিত্বের পরিচায়ক, ছিল এক কোট-প্যান্ট পরিহিত জাতির বর্বরতার ঝুলি থেকে চুঁইয়ে পড়া লোভ, ক্ষমতাদর্প ও নৃশংসতার প্রকাশ। এই আদিম হিংস্রতার অনুসন্ধান যদি আজকের দিনেও আমরা পৃথিবীতে খুঁজবার চেষ্টা করি, হলফ করে বলতে পারি, তার উৎযাপন পৃথিবী-বাসীকে আবারও দেখতে হবে।
নোয়াখালী, কলকাতা, পুলওয়ামার মত ছোটোবড়ো অসংখ্য নিষ্ঠুরতা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে — জালিয়ানওয়ালাবাগ নানান মেজাজে, নানান পোশাকে নিরীহ মানুষকে গিলে খেতে আসে।
যদি কোনো হত্যাকান্ড শুভঙ্করী মানুষের চিন্তা-চেতনায় কোনো ইতর বিশেষ পার্থক্য বয়ে না আনে, যদি সেই হত্যাকারীরা বারংবার মানুষকে মারার কাজ বহাল-তবিয়তে করে যায়, তবে জালিয়ানওয়ালাবাগের স্মৃতি-চারণ প্রয়োজন হয় না, বরং বাস্তবের মাটিতে অনুক্ষণ ঘটবে বলেই ঘটে যায়। আর যদি সেই নিষ্ঠুরতা পরাজিত জাতিকে শপথের শৌর্যে-সৌকর্যে বলিয়ান করতে পারে, তবেই হবে এই নিষ্ঠুরতা উৎযাপনের যথার্থ তাৎপর্য।
যদি জালিয়ানওয়ালাবাগ মানুষের রক্তে প্রতিশোধের স্পৃহায় দেশ ও জাতি গঠনে প্রেরণা না দেয়, যদি সেই বুলেটবিদ্ধ জাতি বুলেটের শেল ভেতর থেকে উদগীরণ করে তা ঔদ্ধত্য জাতিকে ফিরিয়ে দিতে না পারে, তবে এই ঊনিশের উৎযাপন পরাজয়ের পরাকাষ্ঠা হয়েই চিহ্নিত থাকবে।
১৯১৯ সালের বৈশাখী উৎযাপনের দিনটি যেন সকল ভারতবাসীর মধ্যে অতি ভীষণ কালবৈশাখীর ঝড় হয়ে মগজাস্ত্রে চির নিম্নচাপ হয়েই থাকে। বুলেটের প্রত্যুত্তর কুসুমোদ্যানের ফুল হয়ে না ফুটুক।