পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ। মঙ্গলবার রাজ্যের সব সেতুর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বৈঠকে বসেন মন্ত্রী পুলক রায়। বৈঠকে যোগ দেন দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। দীর্ঘ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে। পাশাপাশি করা হবে সমীক্ষাও। তার পরেই সেতুগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সেতুগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে পূর্ত দফতরের অধীনে ২,১০৯টি সেতু রয়েছে। সেই সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হবে। চালানো হবে সমীক্ষাও।
বৈঠকে হাজির পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সব সেতুর পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই সেতুগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দফতর। কারণ কোন সেতু কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা এখনই জানা সম্ভব নয়। আপাতত দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে চলতি মাসেই একটি রিপোর্ট তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে দফতর। কোনও সেতু ভেঙে নতুন করে তৈরি করার প্রয়োজন হলে তা-ও করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সন্ধ্যায় মাচ্ছু নদীর উপর মোরবীতে আচমকা ভেঙে পড়ে ব্রিটিশ আমলের তৈরি ওই ঝুলন্ত সেতু। সেই সময় ঝুলন্ত ওই সেতুতে শতাধিক মানুষ ছিলেন বলে দাবি করা হয়। কয়েক দিন আগেই সংস্কারের পর গত ২৬ অক্টোবর আবার তা জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তার পাঁচ দিনের মধ্যেই এই বিপর্যয় ঘটে। অভিযোগ, এই সেতু জনসাধারণের জন্য চালু করার আগে প্রশাসনের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত নেওয়া হয়নি। সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে কোনও ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ নেওয়া হয়নি। রবিবার সন্ধ্যার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে কর্তৃপক্ষের এই গাফিলতিকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত দফতর। মঙ্গলবার মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ্যের সেতু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এক বৈঠক হয়। কারণ, দফতরের গাফিলতিতে সেতু নিয়ে গুজরাটের মতো কোনও বিপর্যয় এ রাজ্যে ঘটুক, চাইছে না নবান্ন। তাই তড়িঘড়ি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যখন মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছিল, ঠিক এ ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য পূর্ত দফতর। কিন্তু মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরেই রাজ্যের একের পর সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন সেতু বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের পরামর্শেই ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়েছেন টালা সেতু। যা পুজোর আগেই উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট হাতে পেলে বাকি সেতুগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পূর্ত দফতর।