চার্জশিটে নাম, ‘বাড়ি নেই’ জুঁই
সাদামাঠা জুঁই-ই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ‘মিডল পার্সন’— সিবিআইয়ের চার্জশিটে বলা হয়েছে এমন কথা। আর তা জানতে পেরে একেবারে তাজ্জব প্রতিবেশী এবং সহকর্মীরা।
নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বুধবার আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নেই। তবে সেই চার্জশিটে প্রাক্তন এসএসসি কর্তা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রসন্ন রায়ের পাশাপাশি নাম রয়েছে জুঁই দাসের মতো পূর্ব মেদিনীপুরের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষিকার। চার্জশিটে জুঁইকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ হিসাবেই দাবি করা হয়েছে। নিজে অনিয়ম করে চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে উপরতলায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ জুঁই করতেন বলে অভিযোগ।
কাঁথি-১ ব্লকের গোপালপুরের বাসিন্দা জুঁই হাওড়া জেলার গুঞ্জাপুর সহিবগঞ্জ বিশ্বলক্ষ্মী হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কাঁথির কাছেই গোপালপুর গ্রাম। এখানেই জুঁইয়ের সবুজ রঙের দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনের নলকূপে স্নান করছিলেন জুঁইয়ের বৃদ্ধ বাবা। অসুস্থতার কারণে তাঁর জিভ জড়িয়ে যাচ্ছিল। বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা। নাম বলেন, স্বপ্না দাস। তিনি নিজেকে জুঁইয়ের মা বলে পরিচয় দিলেন।
মেয়ে কোথায়? স্বপ্নার দাবি, ‘‘বাড়িতে তো নেই। দু’তিন দিন অন্তর আসে। ওর যমজ মেয়ে রয়েছে। বাড়ি না-এলে মেয়েদের ভালমন্দ জানতে ফোন করে।’’ স্বপ্না জানাচ্ছেন, মেয়ে স্নাতকোত্তর, বিএড করেছেন। প্রথমে স্থানীয় নার্সারি স্কুলে এবং পরে ডেপুটেশনে একটি স্কুলে পড়াতেন। তার পরে এসএসএসি-তে চাকরি পান। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশে কবে জুঁই চাকরি ছেড়েছেন, বা সিবিআইয়ের চার্জশিটে মেয়ের নাম থাকা সম্পর্কে তাঁর কিছুই জানা নেই বলে দাবি স্বপ্নার। বাড়িতে জুঁই রয়েছেন কি না, ঠিক বোঝা গেল না। কথাবার্তা চলাকালীন ভিতর থেকে এক মহিলাকণ্ঠে ‘মা’ ডাক শোনা গেল। তাঁকে ‘কাজের লোক’ বলে এড়িয়ে গেলেন স্বপ্না।
জুঁইয়ের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দেখা গেল তিন তলার ছাদে তাঁর একরত্তি মেয়ে খেলছে। বাইরে গোটা পাড়াটাই বেশ চুপচাপ। গৌতম দাস নামে এক ব্যক্তি দাবি করলেন, জুঁই সম্পর্কে তাঁর ভাইঝি। গৌতমের কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে জুঁইকে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে দাবি করা হয়েছে, তা বিশ্বাসই করতে পারছি না।’’ জুঁই এক সময় বাড়ির কাছে নামাল কালীপ্রসাদ বিদ্যাপীঠ শিক্ষকতা করেছেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সূর্যকুমার হাজরা বলছেন, ‘‘কয়েক মাস উনি এখানে শিক্ষকতা করেছেন। স্কুলে যোগ দেওয়ার সময় তাঁর সব নথি নিয়ম মেনে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিছু জানি না।’’
জুঁইয়ের বাবা ব্লক অফিসে চাকরি করতেন। জুঁইয়ের স্বামী অতনু ভুঁইয়া ব্যবসায়ী। কাঁথি শহরে তাঁর কাপড়ের দোকান রয়েছে। অতনু বললেন, ‘‘হাই কোর্ট যে দিন একসঙ্গে ২০ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল, তার পর প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ মতো জুঁই আর স্কুলে যায়নি। গত জুনে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম প্যালেসে ডেকেছিল। তখন ওর শিক্ষাগত যোগ্যতার যাবতীয় নথি দিয়ে এসেছি আমরা।’’ অতনু জানালেন, জুঁই স্থানীয় নামাল কালীপ্রসাদ বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক এবং কাঁথি চন্দ্রমণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ থেকে সংস্কৃতে সাম্মানিক স্নাতক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতোকত্তরের পাশাপাশি জুঁই বিএড করেন বলেও তাঁর স্বামীর দাবি।
সিবিআই তো চার্জশিটে জুঁইকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে উল্লেখ করেছে? এ বার অতনুর জবাব, ‘‘কেন এমন অভিযোগ করা হচ্ছে, জানি না। বিষয়টি আইনজীবী দেখছেন।’’