‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করেন কে চোর আর কে নয়’, সৌগতের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা দিলীপের

পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের কাছে বিড়ম্বনা হলেও অনুব্রত মণ্ডল বা মানিক ভট্টাচার্য তা নন। বুধবার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের এই মন্তব্য ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। প্রবীণ সাংসদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে এ বার তৃণমূলকে নিশানা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করে দেন কে চোর আর কে নয়।’’

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-কাণ্ডে গত ২৩ জুলাই গ্রেফতার করা হয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের পদাধিকারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। ওই একই দিনে পার্থ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়। যা ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। পার্থের গ্রেফতারির পর গত ২৮ জুলাই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়। পাশাপাশি একই দিনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে দলীয় পদ থেকে পার্থকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। যত দিন না তদন্ত শেষ হবে, তত দিন পার্থ দল থেকে সাসপেন্ড থাকবেন বলে জানিয়ে দেন অভিষেক।

এর পরের মাসেই গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হয় বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। সেটা ১১ অগস্ট। পার্থের গ্রেফতারির পর তাঁর সঙ্গে দল দূরত্ব তৈরি করলেও কেষ্টর ক্ষেত্রে তেমনটা করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। একাধিক বার অনুব্রতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এর পর গত ১১ অক্টোবর নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি ও পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। মানিকের সঙ্গেও এখনও পর্যন্ত দূরত্ব তৈরি করেনি ঘাসফুল শিবির।

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সৌগত বলেন, ‘‘পার্থের ক্ষেত্রে স্তূপীকৃত নগদ টাকা উদ্ধার হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু মানিকের ক্ষেত্রে টাকা পাওয়া যায়নি। অনুব্রতের ক্ষেত্রেও মোটা পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়নি।’’ এর পরই প্রবীণ সাংসদ বলেছেন, পার্থের সহযোগীর থেকে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেটা সবাই দেখেছে। এর পর দল চুপ করে থাকতে পারে না। বাকিদের ক্ষেত্রে তো কিছুই প্রমাণিত হয়নি।

তৃণমূলের তিন নেতার গ্রেফতারির পর তাঁদের প্রতি দলের অবস্থান ভিন্ন হওয়া নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে বিঁধতে আসরে নেমেছেন দিলীপ। বৃহস্পতিবার সৌগতের মন্তব্যের পাল্টা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করে দেন, কে চোর আর কে নয়। সৌগত রায়দেরও তাই একই কথা বলতে হচ্ছে। তৃণমূলে কোনও নীতি নেই। একটাই আছে দুর্নীতি।’’

বাংলার শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে এর আগেও একাধিক বার সরব হতে দেখা গিয়েছে দিলীপকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সৌগতর মন্তব্যকে সামনে রেখে আবার তৃণমূল নেতৃত্বকে যে ভাবে নিশানা করলেন দিলীপ, তা তাৎপর্যপূর্ণ।

দিলীপের মন্তব্যের পাল্টা সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। মেদিনীপুরের সাংসদকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, ‘‘দিলীপবাবু আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। আবার যদি ওঁকে সভাপতি করা হয়। তাই এই ধরনের মন্তব্য করছেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.