রাশিয়ার উদয়ন পণ্ডিত, বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে হাততালিতে বিদায় নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

সবাই পারে না, তবে ‘হীরক রাজার দেশে’র উদয়ন পণ্ডিত পেরেছিলেন। আর পারলেন পুতিনের দেশের ডেনিস স্কোপিনও। রাজার চোখে চোখ রেখে তিনিও বলেছেন, ‘‘যায় যদি যাক প্রাণ, … রাজা শয়তান।’’

ডেনিস রাশিয়ার সবচেয়ে পুরনো এবং নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সেন্ট পিটার্সবার্গের বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটিই তাঁর পাঠশালা। সেই পাঠশালা ছেড়ে হঠাৎই একদিন সরকার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে গেলেন তিনি। আন্দোলন রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। শাস্তিও জুটল সঙ্গে সঙ্গেই। ডেনিসকে শিক্ষা দিতে ১০ দিন জেলে টানা অত্যাচারের পর সরকারি চাকরি থেকেও ছাঁটাই করা হল তাঁকে। তবে শেষ দিনে তাঁর পাঠশালা ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য মনে করিয়ে দিল উদয়ন পণ্ডিতকে।

শেষ দিনের কাজ শেষ করে যখন তিনি বেরিয়ে আসছেন তাঁর চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে, ঠিক তখনই এসে জড়িয়ে ধরল এক ছাত্র। চোখে জল। স্কোপিন বুঝতে পারেননি ব্যাপারটা কী হচ্ছে। তার পরই তিনি শুনতে পেলেন হাততালির শব্দ। তাঁকে ঘিরে ধরেছেন তাঁর ছাত্ররা। হাততালি দিয়ে বিদায় জানাচ্ছেন প্রিয় পণ্ডিতমশাইকে।

সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে, অনুরূপ দৃশ্যে ছাত্রদের বিদায় সম্ভাষণে উদয়ন পণ্ডিত ছাত্রদের কাছ থেকে ভাল কাজ করার প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন। স্কোপিন হয়তো মুখে কিছু বলেননি। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে ছাত্ররা জানিয়ে দিলেন, তাঁরাও তাঁর যুদ্ধে সঙ্গে আছেন।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। অক্টোবরের শেষেও সেই যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে থাকা শিশুর মৃতদেহ, মহিলাদের নির্বিচারে ধর্ষণের ঘটনায় ক্রমশ ক্ষোভ ছড়াচ্ছে রাশিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যেও। মাঝেমধ্যেই রাস্তায় নেমে চলছে আন্দোলন-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। স্কোপিন তেমনই এক সরকার বিরোধী এবং যুদ্ধ বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। যার শাস্তি পেতে হল তাঁকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.