Primary Recruitment: প্রাথমিকে শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বুমেরাং হবে না তো শাসকদলের কাছে?

রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-অবস্থানের মাঝে ১১ হাজার ৭৬৫ শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ইতিমধ্যেই অনলাইনে আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ বা ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ এবং যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাঁরা সকলেই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন বলে পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রশ্ন হল, ২০১৪ এবং ১৭-র টেট পাশ আন্দোলনকারীদের দাবিগুলির মীমাংসা না করে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি সরকারের পক্ষে বুমেরাং হয়ে যাবে না তো?

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন,’২০১৪ বা ২০১৭ টেট উত্তীর্ণদের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। সবাই আমাদের চোখ সমান।’ সেই সময়ে তিনি জানিয়ে দেন,’কোনও নির্দিষ্ট বছরের টেট উত্তীর্ণদের বাড়তি কোনও নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই।’ অর্থাৎ কোনও রকম বাড়তি সুবিধা ছাড়া পরীক্ষা দিয়েই ওই দুই বছরের টেট উত্তীর্ণদের চাকরি পেতে হবে। এর আগেও এক সাংবাদিক বৈঠক পর্ষদ সভাপতি বলেন, ‘ইন্টারভিউ ছাড়া চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। পদ্ধতি মেনে আবেদন করতে হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে ইন্টারভিউতে ডাকা হবে।’ অর্থাৎ ২০১৪ সালের চাকরিপ্রার্থীদের যে দাবি ছিল–যেহেতু তাঁরা ইতিমধ্যেই একাধিকবার ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন তাই আর তাঁরা তা দেবেন না। তাঁদের সরাসরি চাকরি দিতে হবে। কিন্তু পর্ষদ সভাপতি কার্যত তাঁদের সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন।

কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?

মুখ্যমন্ত্রী যখন উত্তরবঙ্গ সফরে সেই সময় পর্ষদের অফিসে সামনে অনশন আন্দোলনে ২০১৪-র টেট উত্তীর্ণরা। তিনি কলকাতা ফেরার পথে তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’আমি আন্দোলনকারীদের ভালবাসী। যাঁরা ন্যায্য আন্দোলন করেন। আর কোর্টে কেস চলছে। কোর্টের অর্ডারটাও আমরা মানছি, সম্মান দিচ্ছি। আমি তো চাই কারও চাকরি যেন না যায়। আমি তো চাই সকলের চাকরি থাকুক।’ এর পর যা বলার তা বলবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলে জানান তিনি।

কী বললেন ব্রাত্য?

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক সাংবাদিক বৈঠকে পর্ষদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,’ রাজ্য সরকার নিয়োগ চায়। কিন্তু একদল সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপর ভারসা রাখছি।’ সে ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার যে আন্দোলনকারীদের দাবি মানছে না সেটা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন। এই আন্দোলনের পিছনে যে বিরোধীদের হাত রয়েছে তাও অভিযোগ করেন।

কী চাইছিলেন আন্দোলনকারীরা

পূর্ব মেদিনীপুরে রাখি কোলের (২০১৪-র টেট প্রার্থী, যিনি অনশন আন্দোলনের সামনের সারির কর্মী) কথায়,’২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন ২০১৪ সালের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমস্ত টেট পাশ চাকরি প্রার্থীদের চাকরি হবে। প্রথম ধাপে ১৬হাজার এবং পরের ধাপে সাড়ে ৩ হাজার। কিন্তু আমরা আরটিআই (তথ্যের অধিকার আইন) করে জানতে পারি ষোল হাজারের মধ্যে মাত্র সাড়ে হাজার নিয়োগ হয়েছে। পর্ষদ সভাপতি বলেছেন আমাদের দাবি ন্যায্য নয়। তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই ন্যায্য নয়।’

অন্য দিকে ২০১৭-র এক টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীর কথায়, আমরা ২০১৭ সালের টেট প্রার্থী। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা হয় চার বছর বাদে। আমরা এনসিডি-র গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা দিয়েছি। অর্থাৎ টেট পরীক্ষার আগে একটি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আমরা সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে টেট পরীক্ষা দি। কিন্তু পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায় আমরা পাশ করছি ৯,৮৯জন। কিন্তু আমাদের চাকরি হয়নি।’

করুণাময়ীতে ৫০০ মিটারের ব্যবধানে বসে দু’পক্ষই চাইছিলেন তারা আর কোনও পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ দেবেন না। তাঁদের চাই চাকরি। এরই মাঝে আদালতের নির্দেশ আসার পর পুলিশ রাতের অন্ধকারে আন্দোলনকারীদের ওই এলাকা থেকে হঠিয়ে দেয়। তবে আন্দোলনের রেশ ধরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। কারণ, সামনে পঞ্চায়েত ভোট। আন্দোলনকারীরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। তাই এই সুযোগে কাজে লাগাতে সক্রিয় হবেন রাজনীতির কারবারীরা, সেটাই স্বাভাবিক।

এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক,শাসকদলের কাছে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পঞ্চায়েত ভোটে বাড়তি সুবিধা দেবে, নাকি বুমেরাং হয়ে ঘাড়ের উপর আছড়ে পড়বে?

সম্ভাবনা এক: নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র ফের যদি মামলা হয়, তবে প্রক্রিয়া ফের আটকে যাবে। ফলে জাটিলতা বাড়বে বই কমবে না।

সম্ভাবনা দুই: নুতন করে আবেদন জমা পড়া মানেই নতুন চাকরিপ্রার্থীদের দাবি তৈরি হওয়া। ফলে ২০১৪,’১৭-র সঙ্গে যুক্ত হবে ২০২২। 

সম্ভাবনা তিন: যদি মামলাই হয় তবে রাজ্য সরকারের কাছে বলা সুযোগ থাকবে, আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম কিন্তু মামলার গেরোয় তা আটকে গেল। শাসকদল পঞ্চায়েত ভোটে তাকে প্রচারেও নিয়ে যেতে পারে।

সম্ভাবনার জল কোথায় গড়ায় সে দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে এ সঙ্কট যে সহজে মেটার নয় তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.