‘ফণি’, ‘আমপান’, ‘ইয়াস’-এর পর এ বার বাংলার দিকে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিতরাং’! হ্যাঁ, আন্দামান সাগরে তৈরি হতে চলা ঘূর্ণিঝড়ের পোশাকি নাম আপাতত রাখা হয়েছে এটাই। শুক্রবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে জেলাশাসকদের পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। উপকূল থেকে মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
০২২২
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আন্দামান সাগরে ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। আর সেই ঘূর্ণাবর্ত ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হতে পারে গভীর নিম্নচাপে। পরে তা আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
০৩২২
যদিও এখনও তৈরি হতে চলা এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হাওয়া অফিসের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সাগরে তৈরি কোনও ঘূর্ণাবর্ত, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তবেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম ঘোষণা করা হয়। আন্দামান সাগরের ঘূর্ণাবর্ত প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়ালেও এখনও পর্যন্ত তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। তবে আবহবিদদের মতে, এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
০৪২২
‘সিতরাং’ নামটি তাইল্যান্ডের দেওয়া। উচ্চারণ অনুযায়ী, ‘সি-তরাং’।
০৫২২
‘সিতরাং’ আসলে তাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি পদবি। ভিয়েতনামের ভাষায় আবার এর অর্থ পাতা। ২০২০ সালে আবহাওয়া দফতরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় ‘সিতরাং’।
০৬২২
হাওয়া অফিস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে। ক্রমশই এই নিম্নচাপ অঞ্চলের পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
০৭২২
২২ অক্টোবর শনিবার পূর্ব-মধ্য এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে এই ঘূর্ণাবর্ত। পরে এই নিম্নচাপ আরও শক্তি বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
০৮২২
এর পর ২৩ অক্টোবর অর্থাৎ কালীপুজোর আগের দিন পূর্ব-মধ্য এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে গভীর নিম্নচাপে। পরে এই নিম্নচাপ উত্তরমুখে বেঁকে যেতে পারে বলেও আবহবিদরা জানিয়েছেন।
০৯২২
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কালীপুজোর দিনই। ২৪ অক্টোবর অর্থাৎ সোমবার কালীপুজো। সেই দিনই পশ্চিম-মধ্য এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস।
১০২২
আবহবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যাবে। ২৫ অক্টোবর এই ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। তবে এই ঘূর্ণিঝড় আদৌ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কোনও উপকূলে আছড়ে পরবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি আবহবিদরা।
১১২২
উপকূলে সরাসরি আছড়ে না পরলেও ‘সিতরাং’-এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী তিন জেলা— উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
১২২২
বৃষ্টিপাত হতে পারে কলকাতাতেও। কালীপুজোর দিন থেকে কলকাতায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
১৩২২
‘সিতরাং’-এর কারণে সামনের সোমবার বঙ্গোপসাগরে প্রতি ঘণ্টায় হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার।
১৪২২
মঙ্গলবার আরও বাড়তে পারে ঝোড়ো হাওয়ার গতি। সমুদ্রে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে মঙ্গলবার।
১৫২২
হাওয়া অফিসের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই ২৩ অক্টোবর রবিবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয়েছে। যে মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে গিয়েছেন, তাঁদেরও ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ২২ অক্টোবর মধ্যেই।
১৬২২
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ‘সিতরাং’-এর প্রভাবে সামনের সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে হাওয়া অফিস।
১৭২২
‘সিতরাং’-আবহে উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টিপাত তবে পারে এই জেলাগুলিতে। তাই এই জেলাগুলির প্রাথমিক স্কুলগুলিকে আশ্রয় শিবির হিসাবে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
১৮২২
জেলার স্কুল ইনস্পেক্টরদেরও আলাদা করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের তরফে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, আপৎকালীন প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলগুলিকে আশ্রয় শিবির হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে জায়গার অভাব দেখা দিলে স্থানীয় মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিকেও আশ্রয় শিবির হিসাবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৯২২
এর আগেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে একাধিক বার তছনছ হতে দেখা গিয়েছে এই উপকূলবর্তী জেলাগুলির বিস্তীর্ণ এলাকাকে। দুর্বিষহ হতেও দেখা গিয়েছে জনজীবনকে। তাই ‘সিতরাং’ ধেয়ে আসার পূর্বাভাস আসার পর থেকেই আশঙ্কা ফুটে উঠেছে এই এলাকাগুলির মানুষদের চোখে-মুখে।
২০২২
প্রসঙ্গত, দেশবাসী এখন উৎসবের আমেজে মেতে রয়েছে। সপ্তাহ শেষে কালীপুজো এবং দীপাবলির আনন্দে মেতে উঠার জন্যও প্রস্তুত সাধারণ মানুষ।
২১২২
তবে এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুটি দেশবাসীর আলো-উৎসব উদ্যাপনে ভাটা আনতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। ক্ষতি হতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও।
২২২২
দুর্গাপুজোর সময়ও বাংলা-সহ একাধিক রাজ্যে বৃষ্টিপাতের কারণে উৎসবের মজা মাটি হয়েছিল। এ বার কালীপুজোতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে দেশবাসীর মনে।