বিসিসিআই-এর পর আইসিসি-র শিকেও ছিঁড়ল না সৌরভের, চেয়ারম্যান পদে নাম পাঠাচ্ছে না বোর্ড

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি পদে তাঁর তিন বছরের মেয়াদ শেষের পর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এ বার আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেল ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের। বৃহস্পতিবারের খবর, আইসিসি চেয়ারম্যান পদের জন্য ভারত থেকে কোনও নাম পাঠাচ্ছে না বিসিসিআই। অর্থাৎ, সৌরভের নামও পাঠানো হচ্ছে না।

সৌরভকে যে আইসিসি-তে পাঠানো হচ্ছে না, অসমর্থিত সেই খবরে সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনিই জানিয়ে দিয়েছেন, সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠানো হচ্ছে না। সৌরভের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরব হতে গিয়েই ওই মন্তব্য করেছেন মমতা। স্বয়ং সৌরভ ওই বিষয়ে কিছু বলেননি।

বিজেপি সূত্রের খবর, আইসিসি-র জন্য একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন সৌরভ। মঙ্গলবার বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি রজার বিন্নীর হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করার পর মুম্বই থেকে দিল্লি গিয়ে তিনি কেন্দ্রের শাসকদলের কেষ্টুবিষ্টুদের সঙ্গে দেখাও করেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে ‘রাজনীতির ক্রীড়নকেরা’ আইসিসি-র ধারপাশ দিয়ে হাঁটেননি। বরং সৌরভকে বলা হয়, বোর্ডের কোনও সভাপতিই তিন বছর মেয়াদ শেষের পর আবার দ্বিতীয় মেয়াদে আসেননি। সৌরভের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন? তাঁকে আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা-ও তাঁকে আবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যে প্রস্তাব প্রথম পেশ করার সময়েই সৌরভ তাঁর অসম্মতি জানিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে আবার সেই একই প্রস্তাবে রাজি হওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে বুধবার সকালে কলকাতা ফেরার আগেই সৌরভ জেনে যান, আইসিসি-তে তাঁর যাওয়া হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবারই ছিল আইসিসি-তে মনোনয়ন পাঠানোর শেষ দিন। কিন্তু ভারতের তরফে কোনও নাম পাঠানো হয়নি। সূত্রের খবর, বর্তমান সভাপতি নিউজ়িল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলেকেই সমর্থন করবে বিসিসিআই। অর্থাৎ জগমোহন ডালমিয়া, শশাঙ্ক মনোহররা যে ভাবে বিসিসিআই সভাপতি থাকার পর আইসিসির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, সেই পথে যাওয়া হচ্ছে না সৌরভের।

দু’দিন আগে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় আইসিসি চেয়ারম্যান পদে কারও নাম প্রস্তাব করা নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। বোর্ডের কোনও সদস্যই এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেননি। তখনই বোঝা গিয়েছিল, সৌরভের আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার রাস্তা কার্যত বন্ধ। তবু আশা ছিল, বাকি দু’দিনে সমীকরণ বদলে গেলেও যেতে পারে। সৌরভ নিজে মনে করেছিলেন, বিসিসিআইয়ের পর আইসিসি-র চেয়ারম্যান হওয়াটাই তাঁর পক্ষে ‘স্বাভাবিক উত্তরণ’ হবে।

কিন্তু সৌরভ ভাবলেও অমিত শাহেরা যে তা ভাবেননি, তা বুধ এবং বৃহস্পতিবারের ঘটনাপ্রবাহ থেকে স্পষ্ট। তবে সৌরভের পাশাপাশিই এ বার অন্য কাউকেও আইসিসি-র চেয়ারম্যান পদের জন্য পাঠাচ্ছে না ভারত। সৌরভের সঙ্গেই তাঁর বিরোধী শিবিরের জল্পনায় ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসক এন শ্রীনিবাসন এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের নাম। তবে অনুরাগ ঘনিষ্ঠমহলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির সাংসদ হিসাবে তাঁর যা কাজের চাপ, তাতে নতুন করে কোনও বড় দায়িত্ব তাঁর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। আর শ্রীনিবাসনের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা তাঁর শারীরিক অবস্থা। তিনি ৮০ পেরিয়েছেন। আইসিসি চেয়ারম্যানের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর শরীর তাঁকে কতটা সময় অতিবাহিত করার সুযোগ দেবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। সে ক্ষেত্রে সৌরভের নাম পাঠানো বিসিসিআইয়ের কাছে ‘বিকল্প’ হিসেবে ছিল। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হল না।

সৌরভ-ঘনিষ্ঠদের একাংশের বক্তব্য, বিসিসিআই সভাপতি পদে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেই সৌরভ বুঝেছিলেন, আইসিসি চেয়ারম্যান পদ নিয়েও সংশয় রয়েছে। তখনই ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন সিএবি নির্বাচনে লড়ার। গত শনিবার সৌরভ বলেছিলেন, “আমি নির্বাচনে লড়তে চলেছি। আগামী ২২ অক্টোবর মনোনয়ন জমা দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। পাঁচ বছর সিএবি-তে ছিলাম। লোঢা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী আরও চার বছর থাকতে পারব। ২০ তারিখের মধ্যে নিজের প্যানেল তৈরি করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।” পাশাপাশিই জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ইদানীং যে ‘কুৎসা’ চলছে, তার জবাব দিতেই নির্বাচনে লড়তে চলেছেন।

বোর্ডের নতুন সভাপতি পদে রজার বিন্নী বসার আগেও মুখ খুলেছিলেন সৌরভ। গত বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সৌরভ বলেছিলেন, “প্রশাসক হিসাবে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। তবে খেলাধুলো অনেক বেশি কঠিন ছিল। তবে যে সময়টা বোর্ডে কাটিয়েছি, তা উপভোগ করেছি। খেয়াল করলে দেখবেন, গত তিন বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক কিছুই হয়েছে।’’ বোর্ড সভাপতি হিসেবে নিজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে সৌরভ বলেছিলেন, “কোভিডের মতো দুঃসহ সময়ে সফল ভাবে আইপিএল আয়োজন করেছি আমরা। কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল রুপো পেয়েছে। ভারতের পুরুষ দল বিদেশের মাটিতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে একটা অন্য রকম শক্তি দেখা যাচ্ছে। তবে ক্রিকেটার হিসাবে সময়টা আলাদা ছিল। সারা জীবন ধরে কেউ প্রশাসক থাকতে পারে না। নিজের উপর বিশ্বাস রাখা জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রত্যেককেই জীবনে পরীক্ষায় বসতে হয়, প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। তবে নিজের উপর বিশ্বাস কখনও বদলায় না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.