অসামরিক পরমাণু চুক্তিতে শিলমোহর, ভারতে ছ’টি পরমাণু চুল্লি বানাবে আমেরিকা

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তির গিঁট খুললো। পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে যখন উঠে পড়ে লেগেছে বেজিং, তখন দু’দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে ভারতে ৬টি পরমাণু চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা করে ফেলল আমেরিকা।

হোয়াইট হাউসে মার্কিন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী আন্দ্রে থম্পসনের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি, প্রতিরক্ষা-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিজয়কেশব গোখলে। দু’দিনের বৈঠকে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় ছিল পরমাণু চুক্তি নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটানো। কারণ দীর্ঘ ছ’বছর ধরে অসমারিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা কার্যত শেষ হলো বলেই মনে করা হচ্ছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, অসামরিক পরমাণু চুক্তি দু’দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। ভারতে ছ’টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে চলেছে আমেরিকা।

২০০৮ সালে অসামরিক পরমাণু বিষয়ে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১০ সালে পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের জটে গোটা বিষয়টিই থমকে যায়। ওই আইনে বলা হয়েছিল, কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় নিয়ে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকে। এই শর্ত মেনে নিতে রাজি হয়নি আমেরিকা। আইনের পরিবর্তন না হওয়ার কারণে গোটা বিষয়টিই থমকে থাকে গত ছ’বছর ধরে।

ভারতীয় আইন অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দায় তিরিশ কোটি মার্কিন ডলার আর চুল্লি যারা চালাবে, তাদের দায় ১৫০০ কোটি টাকা। ভারতে পরমাণু চুল্লি চালানোর সংস্থাটি হল নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনপিসিআইএল), যা পরমাণু শক্তি দফতরের অধীনস্থ। ২০১০ সালে প্রণীত আইনে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় চাপানোর ব্যাপারে বাছবিচার করা হয়নি। চুল্লি প্রস্তুতকারী সংস্থা যদি ভারতীয়ও হয়, তা হলেও দায়ভার তাদের।তাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেখে, ভারতীয় আইন তাদের পক্ষে বিপজ্জনক। নতুন পরমাণু চুল্লি তো বটেই, এমনকী পুরনোগুলোর যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যাপারে দেশি এবং বিদেশি কোম্পানিগুলো বেঁকে বসছিল।

গত বছর এপ্রিলে ভারতে পরমাণু প্রকল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হয় আমেরিকা। ঠিক হয় অন্ধ্রপ্রদেশে ছ’টি এপি১০০০ চুল্লি বসানো হবে। এই চুক্তি কার্যকর হলে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের পারমানবিক শক্তি তিনগুণ বৃদ্ধি হবে বলে আশা রাখছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.