চাষের কাজ করবে, কলেজের পরই ছেলের পড়ার পাঠ চোকাতে চেয়েছিলেন কে সিবানের বাবা

চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান। সব বাধা কাটিয়ে অভিযান সাফল্যের পথেই যাচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে ছন্দপতন। আচমকাই হারিয়ে গেল যোগাযোগ। ভেঙে পড়লেন বিজ্ঞানীরাল দেশবাসীর এত আশা, স্বপ্ন ভঙ্গ মেনে নিতে পারলেন না কেউ। শনিবার সকালে শিশুর মত কেঁদে ফেললেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিবান। তাঁর নেতৃত্বেই তো এগিয়ে যাচ্ছিল চন্দ্রযান।
তবে তাঁর ঝুলিতে সালফ্যের সংখ্যা অনেক।

একসঙ্গে শতাধিক স্যাটেলাইট উড়িয়েছিল দেশ, এই সিবানের নেতৃত্বে। দেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন তিনি। ভারতের রকেট ম্যান বলে ডাকা হয় তাঁকে। অথচ একসময় মাঠে গিয়ে চাষের কাজ করতে হয়েছিল এই কে সিবানকে। পুরো নাম কৈলাসাভাদিভু সিবান।

পরিবারে তিনিই প্রথম স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। টাকার অভাবে স্কুলের গণ্ডী পার করতে পারেননি তাঁর ভাই ও দুই বোন। বিজ্ঞানী হবেন তিনি, এমন দুঃসাহস বা দুঃস্বপ্ন কোনোটাই ছিল না তাঁর ও তাঁর পরিবারের। অঙ্ক নিয়ে কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। যাতে বাবার সঙ্গে মাঠের কাজে হাত লাগাতে পারেন, তাই তাঁকে কাছাকাছি কলেজে ভরতি করানো হয়েছিল। সদ্য এক সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছেন সিবান নিজে।

সেই কলেজে অঙ্কে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করলেন তিনি। তখনই তিনি ধুতি পরে কলেজ যান। প্যান্ট পরাটা বিলাসিতা। টিউশন বা কোচিং ক্লাসে যাওয়ার পয়সা ছিল না, তাই যতটুকু সম্ভব হত নিজেই পড়াশোনা করতেন। নাগেরকোলির এসটি হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

কলেজে ভাল ফল করার পর তাঁকে আরও পড়াশোনা করানোর কথা ভাবেন তাঁর বাবা। তারপর ভর্তি হন মাদ্রাস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে। সেখানে গিয়ে প্রথম ধুতি ছেড়ে প্যান্ট করতে শুরু করে সিবান।

অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ১৯৮০ তে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন বেঙ্গালুরুর IISC থেকে। ২০০৬-এ আইআইটি বম্বে থেকে পিএইচডি সম্পূর্ণ করেন তিনি।

সেই কৃষকের ছেলেই আজ ইসরোর রকেট ম্যান। ভারতের যতগুলি রকেট লঞ্চের প্রোগ্রাম হয়ে, সবকটিতেই অংশ নিয়েছেন তিনি। ইসরোর দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি, যেখানে রকেট তৈরি হয়। ভারতের PSLV, GSLV কিংবা ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরিতে তাঁর বিশেষ অবদান আছে।

২০১৭-তে একসঙ্গে ১০৪টি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে রেকর্ড করে ইসরো। আর সেই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন এই কে সিবান।

রকেট প্রেমের বাইরে রাজেশ খান্নার ভক্ত তিনি। ‘আরাধনা’ তাঁর প্রিয় ছবি । সময় পেলেই তামিল গান শোনেন। তিরুঅনন্তপুরমে থাকতে বাগানে গোলাপও ফোটাতেন তিনি। তবে, এখনও আর সময় পান না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.