গণপ্রহারে মৃত্যুর শাস্তি প্রাণদণ্ড: এই বিল পাশ কি জনস্বার্থ কল্যাণে নাকি ভোটস্বার্থ কল্যাণে

সম্প্রতি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় কোনো আলোচনা ছাড়াই গণপ্রহারে মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ড দেওয়ার বিল পাশ করিয়ে নিলেন। দেশে বলবৎ ফৌজদারি আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসামির উপযুক্ত সাজা হয়। তাঁর এই বিল আইনে পরিণত করে কার্যকর করতে গেলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। রাষ্ট্রপতি তো চোখ বন্ধ করে বিলে সই করতে পারেন না। তাঁকে আইন বিভাগের পরামর্শের জন্যে পাঠাতে হবে। একথা চোখ বন্ধ করে বলা যায় যেখানে সারা ভারতে এই ধরনের কোনো আক্রোশপ্রসূত আইন লাগু নেই তাই এই বিল পত্রপাঠ নাকচ হয়ে যাবে।

নির্ভয়ার সময় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সরকারকে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধের নজির গণ্য করে প্রাণদণ্ডের আইন প্রণয়ন করতে হয়েছিল। বাস্তবে গণপ্রহারের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পুলিশকে সুয়োমোটো কেস করতে হয়। কেননা ঘটনাস্থলে নিহতের নিকটজন সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকে না। বহু ক্ষেত্রেই বাড়ির লোক পরে অভিযোগ দায়ের করে। অধিকাংশ মামলাতেই প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে দোষীরা ছাড়া পেয়ে যায়। এগুলি আমাদের বিচারবস্থার ফাঁক আর তার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন জরুরি।

বহুক্ষেত্রে ছিঁচকে চোর ধরা পড়লেও অতি উৎসাহী জনতা নিজেদের ব্যক্তিগত হতাশা মেটাতে মানুষ মারা খেলায় নেমে পড়ে। এগুলি ধিক্কারজনক এবং বহুকাল ধরে জগতে হয়ে আসছে, প্রায়শই অপরাধীদের শাস্তিও হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু এগুলি একক পূর্বপরিকল্পিত প্রতিশোধ মেটানো নয় তাই প্রাণদণ্ড দেওয়া বিচারকরা আর একটি নতুন অন্যায়ের জন্ম দেওয়াই মনে করছেন। বিচারকদের রায় কূট যুক্তিজালনির্ভর হলেও অনেক সময়ই তা বিষয়ভিত্তিক হয়। যে কারণে এক কোর্টের রায় অন্য আদালতে বদলে যায়। কিন্তু যা বদলায় না তা হলো সন্ত্রাসবাদীর সম্প্রদায় লক্ষণ।

সারা বিশ্বে যত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হয় নির্ভুলভাবে তার পেছনে থাকে ওই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়। এখন তড়িঘড়ি মহান সেজে প্রাণদণ্ডের সাজার বিল পাশ করার উদ্দেশ নিগূঢ়। ওই সন্ত্রাসবাদী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীই এ রাজ্যে ক্ষমতায় বসে থাকার বিষহর মলম। আগেই এঁদের দুধেল গরুর সঙ্গে তুলনা করে দলনেত্রী এদের দামড়া লাথি খাওয়ার জন্য লালায়িত হয়ে আছেন। মূল কথায় ফিরে আসি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মূলত গরু অপহরণ বা জবাই নিয়েই অধিকাংশ গণহত্যা হয়েছে আর এগুলির উৎসে ওই অপরাধপ্রবণ সম্প্রদায় যারাই আবার ভোট ভগবান।

দেশে অনেক সময় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকজনই হঠাৎ আবেগের তাড়নায় তাদের পূজ্য গোমতার নিধন রুখতে এমন অন্যায় কাজ নিশ্চয় করে ফেলেছে। তবে তার জন্য প্রাণদণ্ডের আইন বহাল করা একান্ত স্বার্থ সম্বলিত তা বুঝতে কারুর বাকি থাকে না। অপরাধপ্রবণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মেসেজ দেওয়া গেল যে দেখো তোমাদের জন্য আমি কত সহজে অন্য লোকেদের ফাঁসি পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু এর চেয়ে বড় ছলনা আর হয় না। ভারতবর্ষে ফাঁসির আইনে তফাৎ থাকতে পারে না, থাকবেও না। উনি সেরকম প্রয়োজন বা কিছু দ্রুত প্রমাণ করার থাকলে অন্য কোন ঢিল ছুঁড়ে মারা বা কত ঘা চাবুক মেরে মেরে ফেলার নিদান চালু করার কথা ভাবতে পারেন।

সারা পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ড উঠে যাচ্ছে। এবিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অতি তৎপর। এই সময় শুধু ভোট ধরে রাখতে একটি কলঙ্কিত প্রাগৈতিহাসিক আইন করে যা কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না তিনি দেশে আইনি নরসংহারকে ভোটে ব্যবহার এর গুপ্ত উদ্দেশ্য প্রকাশ করে ফেললেন। তবে এটি বুমেরাংও হতে পারে। গতকাল রাজ্যে পাঁচটি গণপ্রহারের ঘটনায় দুজন মারা গেছে। তিন জনের অবস্থা খারাপ। মৃতদের একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের এটা নিশ্চিত। অনুসন্ধানে অনেক অপ্রিয় সত্য সামনে আসার সম্ভাবনা যদি না খবর হাপিস হয়ে যায়।

সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.