দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণে আইন চালুর দাবিতে সম্প্রতি সরব হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। দাবি করা হয়েছে, দেশে আসলে জন্মহার কমছে হিন্দুসমাজে। এর পাশাপাশি বর্ণ এবং জাতির ধারণা সম্পূর্ণ ভাবে অবলুপ্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি তুলেছে আরএসএস। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, “বর্ণ ব্যবস্থার কোনও প্রাসঙ্গিকতাই এখন আর নেই।” ভাগবতের দাবি, বর্ণপ্রথা দেশে বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, “যা কিছু বৈষম্য সৃষ্টি করে, সে সব কিছুকেই বাতিল ঘোষণা করা উচিত!”
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরে সঙ্ঘের এই জোড়া চাপের মধ্যেই নতুন আন্দোলনে নামছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ইতিমধ্যেই তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিষদ চায়, ধর্মান্তরণের মাধ্যমে যাঁরা হিন্দু থেকে মুসলমান বা খ্রিস্টান হচ্ছেন, তাঁদের সংরক্ষণের সরকারি সুবিধা দেওয়া বন্ধ হোক। অর্থাৎ তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির হিন্দুরা যদি ধর্ম বদল করেন তবে তাঁদের লেখাপড়া, চাকরি-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিষদ মনে করছে, এমন নীতি চালু হলে দেশে ধর্মান্তরকরণ কমবে।
পরিষদ ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বড় মাপের আন্দোলনে নামতে ‘সামাজিক সমরসতা অভিযান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে। তার প্রধান করা হয়েছে গুজরাতের নেতা তথা পরিষদের সর্বভারতীয় সম্পাদক দেওজিভাই রাওতকে। সোমবার কলকাতায় এসেছেন রাওত। দু’দিনের সফরে ধর্মান্তরণ রুখতে কোন পথে পরিষদ হাঁটবে, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। একইসঙ্গে যোগ দেবেন একটি আলোচনা সভায়। সেখানে পরিষদের পক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে।
রাওত আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষণের সুবিধা শুধু হিন্দুদেরই পাওয়ার কথা। কারণ, জাতপাতের কারণে হিন্দু সমাজের যে অংশ দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চিত, তাঁদের আর্থিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্যই সংরক্ষণ। মুসলমান বা খ্রিস্টান ধর্মে এমন কোনও জাতিভেদ নেই বলেই দাবি করা হয়। তাই যাঁরা হিন্দু থেকে মুসলমান বা খ্রিস্টান হচ্ছেন, তাঁদের আর সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ এ নিয়ে কি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে দাবি জানাবে পরিষদ? উত্তরে রাওত বলেন, ‘‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সামাজিক সংগঠন। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই। আমরা সমাজকে এই বিষয়ে জাগ্রত করতে চাই। অতীতেও পরিষদ সে কাজই করেছে। সমাজ জাগ্রত হলে সরকার সেই পথ নিতে বাধ্য হয়।’’
পরিষদের পক্ষে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, আন্দোলন না হলেও আগেই কেন্দ্রকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণণের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের কাছেও পরিষদ নিজেদের দাবি জানাবে। পরিষদের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি অলোক কুমার সম্প্রতি বিবৃতি জারি করে দাবি করেন, ‘‘গোটা দেশেই তফসিলি জাতি, জনজাতি সমাজের মানুষদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। অনেকেই ধর্মান্তরণের পরেও হিন্দু হিসাবে সংরক্ষণের যাবতীয় সুযোগসুবিধা নিয়ে চলেছেন। এটা বন্ধ করতে দেশের সর্বত্র প্রচারাভিযান চলবে।’’
পশ্চিমবঙ্গেও সেই মতো কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলে পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিষদের দাবি, দক্ষিণবঙ্গে বেশি করে হিন্দুদের খ্রিস্টান করা হচ্ছে। যা তুলনায় বেশি হচ্ছে দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকায়। কিন্তু কেউ ধর্মান্তরিত হলে যে আর সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে না, তা নিয়ে প্রচারের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিষদের বক্তব্য, প্রচারে বলা হবে, ১৯৫০ সালে সংবিধান শুধুই হিন্দুদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিল। পরে ১৯৮৫ সালে সংরক্ষণের আওতায় শিখ ও বৌদ্ধধর্মের কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও খ্রিস্টান বা মুসলমানদের সংরক্ষণের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত নয়।