বাম জমানায় চিটফান্ডের কারবারি ছিলেন মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপস, অভিযোগ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। শনিবার তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত তাপস মণ্ডলের টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার ও বাড়িতেও হানা দিয়েছে ইডি। তাপসের সংস্থা মিনার্ভা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের তথ্যও তদন্তে সামনে এসেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

জানা যাচ্ছে, আদি বাড়ির এলাকা পাঁশকুড়ায় এক সময় চিটফান্ডের কারবারও ছিল তাপসের। প্রায় চার দশক আগে ‘মিনার্ভা ফিনান্স’ নামে চিটফান্ড খুলে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতারণায় গ্রেফতারও হন। তবে এ সব নিয়ে জানার জন্য চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নিতাপসের সঙ্গে।

পাঁশকুড়ার মাইশোরার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে তাপস। জানা যাচ্ছে, বাম আমলে প্রথমে সিপিআই করতেন তিনি। পরে যোগ দেন মার্ক্সসিস্ট ফরওয়ার্ড ব্লকে। আশির দশকে সেই দলের জেলা সভাপতিও হন। অভিযোগ, ওই সময়ই পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে মিনার্ভা নামে চিটফান্ডের অফিস খোলেন তাপস। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের থেকে বেশি টাকা ফেরতের টোপে শুরু হয় টাকা তোলা।

সেই সময় রামানুজ দাস নামে স্থানীয় এক মহন্তকে সংস্থার শেয়ার হোল্ডার করেছিলেন তাপস। রামানুজ সৎ বলে পরিচিত ছিলেন। ফলে, তাঁর সূত্রে অনেকে তাপসের সংস্থায় টাকা রাখেন। প্রায় সাত বছর পাঁশকুড়ায় তাপসের চিটফান্ডের অফিস চলেছিল। রামানুজের অভিযোগ, ‘‘তাপস অন্তত ৩ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে গা ঢাকা দিয়েছিল। লগ্নিকারীরা কেউ টাকা ফেরত পাননি।’’ তবে সে সময় অভিযোগ-বিক্ষোভ কিছুই হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। তাপসকেও আর এলাকায় দীর্ঘ দিন দেখা যায়নি।

জানা যাচ্ছে, বাম আমলের দমকল মন্ত্রী রাম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। অভিযোগ, সেই সময় প্রভাব খাটিয়ে পাঁশকুড়ার বেশ কয়েক জনকে মোটা টাকার বিনিময়ে দমকলে চাকরি পাইয়ে দেন তাপস। চাকরি দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি।

তৃণমূল আমলে ওই মিনার্ভা নামেই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ খোলেন তাপস। ২০১৮ সালে বহরমপুর থেকে তাঁর ওই কলেজ মাইশোরা পাতন্দায় স্থানান্তরিত করেন। তবে তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ অস্বীকার করছে বাম ও তৃণমূল, দুই শিবিরই। ফরওয়ার্ড ব্লকের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সিনহার দাবি, ‘‘১৯৮৫ সালের পর থেকে তাপস মণ্ডলের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ পাঁশকুড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুজিত রায়েরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না।’’

অনিয়মের অভিযোগে হাই কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খুইয়েছেন তাপসের ভ্রাতৃবধূ পারমিতা মণ্ডল। এই পারমিতার নামেই পাতন্দা গ্রামে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। পারমিতার স্বামী, তাপসের ভাই বিভাস মণ্ডল সেটি দেখাশোনা করেন। ওই কলেজের পাশে তাপস টিচার্স ট্রেনিং কলেজ করেন ২০১৮ সালে। এ দিকে, পারমিতার নামের কলেজটি থেকে জাল শংসাপত্র পাওয়া যেত বলে অভিযোগ তুলেছেন সেখানকার ম্যানেজার অমর দাস। রবিবার অমরের অভিযোগ, ‘‘এই কলেজে নানা অনৈতিক কাজ হয়। টাকা দিলেই এমফিল-সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষার শংসাপত্র পাওয়া যায়। শিক্ষকদের বেতনও অনিয়মিত।’’

এই কলেজের সভাপতি হলেন বিভাসের শ্বশুর প্রভাকর জানা। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘আমার কলেজে কোনও অনৈতিক কাজ হয় না।’’ আর মেয়ের চাকরি হারানো সম্পর্কে পারমিতার বাবা প্রভাকরের মন্তব্য, ‘‘তাপস মণ্ডল এখানে আসতেন ঠিকই। তবে ওঁর হাত ধরে আমার মেয়ের চাকরি হয়েছিল, এই অভিযোগ ঠিক নয়।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.