প্রধানমন্ত্রীর ভ্লাদিভোস্তক সফরকালে ৪ সেপ্টেম্বর , ২০১৯ এ সংবাদ বিবৃতির অনুবাদ

মাননীয় রাষ্ট্রপতি পুটিন,

বন্ধুগণ,

নমস্কার,

দোব্রে ভিয়েচার !

সারা বিশ্বে যেখানে প্রথম সূর্যোদয় হয়, যেখানে আমাদের রুশ বন্ধুদের অদম্য সংগ্রামী স্বভাবের মাধ্যমে বিজয় সারা বিশ্বের কাছে প্রেরণার কারণ হয়, যেখানে একবিংশতিতম শতাব্দীর মানবজাতির উন্নয়নের নতুন কাহিনী লেখা হয়, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, এরকম বিশেষ একটি জায়গা ౼ভ্লাদিভোস্তকে আসার জন্য। আর এটা সম্ভব হয়েছে আমার প্রিয় বন্ধু রাষ্ট্রপতি পুটিন আমায় আমন্ত্রণ জানানোর কারণে। আর এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে আমার বন্ধু রাষ্ট্রপতি পুটিনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভ্লাদিভোস্তকে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসবার সুযোগ করে দেবার কারণে।

কাকতালিয়ভাবে রাষ্ট্রপতি পুটিন আর আমি বিংশতিতম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছি। ২০০১ সালে রাশিয়ায় প্রথম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় আমার বন্ধু পুটিন ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি। ভারতের প্রতিনিধি দল এসেছিল তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির নেতৃত্বে । গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমিও ছিলাম সেই দলে । রাষ্ট্রপতি পুটিন এবং আমার এই রাজনৈতিক যাত্রাপথে দুটি দেশের বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে আমাদের উভয় দেশের বিশেষ কৌশলগত অংশিদারিত্বের সম্পর্ক শুধুমাত্র কৌশলগত বিষয়েই আবদ্ধ নেই, বরং তা জনগণের উন্নয়নে এবং তাঁদের প্রত্যক্ষ সুযোগ সুবিধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পুটিন এবং আমি বিশ্বাস ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সম্পর্কটিকে সহযোগিতার নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছি। এর ফলে পরিমানগত এবং গুনগত নানা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা সহযোগিতার বিষয়টি সরকারি স্তর থেকে বের করে নিয়ে এসে জনগণ এবং বেসরকারি শিল্পের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। আজ আমরা অনেকগুলি বাণিজ্যিক চুক্তি করেছি।

আজকে প্রতিরক্ষার মত কৌশলগত ক্ষেত্রে চুক্তির ফলে রুশ যন্ত্রাংশ সারানোর জন্য ভারতে যৌথ উদ্যোগে শিল্প গড়ে উঠবে। ক্রেতা বিক্রেতার সীমিত সম্পর্কের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে এসে এই চুক্তি এবং এবছরের গোড়ায় এ কে ২০৩ এর যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো মজবুত হয়েছে। রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে পারমাণবিক কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ এই ক্ষেত্রে আরেকটি সহযোগিতার উদাহরণ। আর আমরা এখন এই সম্পর্ক ভারতের রাজ্যগুলির রাজধানী এবং রাশিয়ার রাজধানী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছি। এর জন্য আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ আমি দীর্ঘদিন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম আর রাষ্ট্রপতি পুটিন ও রাশিয়ার নানা অঞ্চলের ক্ষমতা এবং সম্ভাবনার কথা জানেন। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই উনি পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক ফোরামের কথা ভেবেছেন এবং ভারতের মত বৈচিত্রপূর্ণ দেশকে এর অংশীদার করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ওঁর আমন্ত্রণ পেয়েই আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করি। সেই কারণে ভ্লাদিভোস্তকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী, চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ১৫০ জনের বেশি ব্যবসায়ী এসেছেন। দূর প্রাচ্যের বিশেষ দূত এবং এই অঞ্চলের ১১ জন গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ খুব ফলপ্রসূ হয়েছে। রাজ্য এবং অঞ্চলগুলির মধ্যে সম্পর্ক নতুন একটি কাঠামোর মধ্যে গড়ে উঠছে। কয়লা, হীরা, খনিজ পদার্থ, রেয়ার আর্থ, কৃষি, কাঠ, মন্ড ও কাগজ এবং পর্যটনের মত ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। চেন্নাই ও ভ্লাদিভোস্তকের মধ্যে সমুদ্র পথের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরো বৈচিত্র এনে তাতে নতুন মাত্রা দিচ্ছি। আগামী ৫ বছরে দূরপ্রাচ্য ও সুমেরুতে হাইড্রো-কার্বন এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে। মহাকাশ ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। মহাকাশে মানুষ পাঠানোর ভারতীয় উদ্যোগ- গগনায়ন প্রকল্পে ভারতীয় নভোচররা রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নেবেন। পারস্পরিক বিনিয়োগের পুরো সুবিধে নিতে আমরা বিনিয়োগ সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিতে শীঘ্রই আবদ্ধ হতে চলেছি। ভারতের ‘রাশিয়া প্লাস ডেস্ক’ এবং মুম্বাইএ রাশিয়ার ‘ফার ইস্ট ইনভেস্টমেন্ট এন্ড এক্সপোর্ট এজেন্সি পারস্পরিক বিনিয়োগে সহযোগিতার লক্ষে কাজ করবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বে আরো নতুন নতুন সংযোজন হতে চলেছে। আমাদের তিন বাহিনীর ‘ইন্দ্র-২০১৯’ মহড়া আমাদের ক্রমবর্ধমান আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। যখনই প্রয়োজন হয়েছে, ভারত ও রাশিয়া তখনই কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এই কাজ হয়েছে সুমেরু , কুমেরুর মত দুর্গম স্থানেও । আমাদের সহযোগিতা আর সমন্বয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আমরা ব্রিকস, এসসিও সহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থায় সহযোগিতা করে চলেছি। আজ আমরা খোলা মনে নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। ভারত মুক্ত, নিরাপদ, ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান দেখতে চায়। আমারা দুটি দেশই যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারো হস্তক্ষেপের বিরোধী। আমরা ভারতের ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগরিয় অঞ্চলের মুক্ত ও সমন্বিত ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছি। সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী, জলবায়ু রক্ষার মত বিষয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌছেছি। আগামী বছর ব্যাঘ্র সংরক্ষণের বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি।

আরো একবার আমি আমার বন্ধু রাষ্ট্রপতি পুটিনকে, আমায় নিমন্ত্রণ ও অভ্যর্থনা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগামীকাল পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক ফোরামে আমি আমার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেব। আগামী বছরে বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পুটিনের ভারত সফরের বিষয়ে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো। ২০২০ সালে রাশিয়া এসসিও এবং ব্রিকস এর নেতৃত্ব দেবে। আমার বিশ্বাস, রাষ্ট্রপতি পুটিনের তত্ত্বাবধানে এইসব সংগঠনগুলি সফল ভাবে কাজ করবে। ভারত এবং আমি এর জন্য সব রকমের সাহায্য করবো।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

স্পাইসিবা বালসোয়া !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.