শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করল ইডি। বয়ানে অসঙ্গতি এবং জেরায় অসহযোগিতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতেই পলাশিপাড়ার বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডির তরফে সোমবার মানিককে সিজিও কমপ্লেক্সে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সেই সময় তিনি ইডি আধিকারিকদের তদন্তে সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় মানিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যে নথি জমা দিয়েছিলেন, সেখানে একাধিক গরমিল রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। সে কারণেই এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। শেষে গ্রেফতার করা হল তাঁকে।
প্রসঙ্গত, সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিককে ইডির আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। সূত্রের খবর, ইডির তরফে তাঁকে যে সময়ে তলব করা হয়েছিল, সেই সময়ের অনেক পরে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন। এরপর রাতভর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাত থেকে তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলায় ইডি যে চার্জশিট দিয়েছিল, তাতেও মানিকের নাম ছিল। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন মানিক। সেই খবর ছিল পার্থর কাছেও। কিন্তু পার্থ এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ইডি সূত্রে খবর, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের মোবাইল বার্তা আদানপ্রদানের প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। চার্জশিটেও এর উল্লেখ রয়েছে।
চার্জশিট জমা দেওয়ার পর মানিককে তলব না করা সত্ত্বেও ২১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি নিজেই ইডি আধিকারিকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন নথি জমা দিয়ে আসেন বলে সূত্রের খবর। সেই নথি ধরে তদন্ত চলছিল।
মানিকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানিক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তদন্ত এড়াতে। তদন্তে সহযোগিতা করেননি। ইডি হেফাজতে নিয়ে ভাল করেছে। এঁদের হেফাজতে নিয়েই তদন্ত করা দরকার। আশা করা যায়, এর পর আরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’
এর আগে হাই কোর্ট এই মামলায় তদন্তভার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে। টেট-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক। প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় শুনানি শেষ হলেও সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা স্থগিত রাখে। পাশাপাশি শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়ে দিয়েছিল, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত মানিককে কোনও ভাবেই গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই। তবে, টেট মামলায় সিবিআই তদন্ত করার যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছিল, তাতেও স্থগিতাদেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু এর মধ্যেই মানিককে গ্রেফতার করল ইডি।
পাশাপাশি মানিককে পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মানিক সেই সবক’টি নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা আবেদন করেছিলেন।
শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মানিক সুপ্রিম কোর্টে গেলেও প্রাথমিকের শিক্ষা পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে গৌতম পালকে নিয়োগ করে রাজ্য।