বন্দে ভারত এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় যারা উল্লাসে ফেটে পড়েছেন তাদের জন্য

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (ট্রেন 18) গতকাল সকাল বেলায় একটি মোষের দলকে রেল লাইনের ওপর ১০০ কিমি/ ঘণ্টা স্পিডে ধাক্কা মারে। এতে চারটি মোষ মারা যায় ও ট্রেনটির “নোজ” সেকশনের একটি FRP (fiber reinforced plastic) বাম্পার ভেঙে যায়। শুধু বাম্পার সেকশনের একটি প্যানেল খুলে যাওয়া ছাড়া ট্রেনটির কোন স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ হয় নি। ছবি নিচে রইল।

এর ফলে একদল লোক উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করতে শুরু করেছে। এই হল নাকি “মেক ইন ইন্ডিয়ায়” বানানো ট্রেন! মোষের ধাক্কায় “ইঞ্জিন” ভেঙে পড়ল!

এরা কারা জানার জন্যে কোন প্রাইজ নেই। এরা সেই বিশেষ প্রজাতির লোকজন যারা ভারতের যে কোন উন্নতিতে যারপরনাই দুঃখিত, ও ভারতের যে কোন ক্ষতিতে বা অপমানে উল্লসিত হন। ট্রেন 18 এর অ্যাকসিডেন্ট এদের সেই “আনন্দকে” বেশ খানিকটা উসকে দিল। এই মর্কটের দল শুধু নেতিবাচক নয়, মিথ্যুক এবং মূর্খও বটে। কিরকম?

১. চারটি মোষের সম্মিলিত ওজন প্রায় তিন টন বা তারও বেশি। ১০০ কিমি/ ঘণ্টায় এই ইম্প্যাক্ট এ ট্রেন ভেঙে যাওয়া শুধু নয়, ডিরেইল্ড পর্য্যন্ত হয়ে যেতে পারত, এবং অনেক যাত্রীর জীবনহানি হতে পারত। সেটা যে হয়নি তার জন্য এই ট্রেনের ডিজাইন ও সেফটি ডিপার্টমেন্টকে অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানানো উচিত।

২. এই ধরনের ট্রেনে কোন একটি ইঞ্জিন থাকে না। প্রাইম মুভার গুলো চার বা আরো বেশি কম্পার্টমেন্টের মধ্যে “ঢোকানো” থাকে। সুতরাং যেটিকে “ইঞ্জিন ভেঙে গেল” বলা হচ্ছে, সেটি ট্রেনের নাক বা “নোজ” এরিয়া। এবং এটি সেফটি ডেফিনেশন অনুযায়ী একটি crumple zone, যার কাজই হল ইম্প্যাক্ট হলে ভেঙে গিয়ে, শক অ্যাবসর্ব করে বাকি ট্রেনকে বাঁচানো।

এই মূর্খের দলেরা এখনও অ্যাম্বাসেডর গাড়ির যুগে পড়ে আছে, যেখানে অ্যাকসিডেন্ট হলে গাড়ির লোহার বাম্পার একটুও টোল খেত না, কিন্তু সওয়ারীদের জান চলে যেত। আর লোকজন এসে বলত যে কি শক্ত পোক্ত গাড়ী দেখেছ? এতবড় অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেল, একটুও টোল খায় নি! একই যুক্তিতে আজকের মার্সিডিজ বা অডির মতন দামী গাড়িতে কেন “প্লাস্টিকের” বাম্পার থাকবে? অ্যাকসিডেন্ট হলে এত দামী গাড়ির সামনের অংশটা যেন “অক্ষত” থাকে সেটাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত। পারলে কাস্ট আয়রনের বাম্পার লাগানো উচিত। প্যাসেঞ্জার আর ড্রাইভারদের কি হল আর জানার দরকার কি? গাড়ী যেন টোল না খায়, তাহলেই হল!

৩. যে ব্যাপার নিয়ে আজ ট্রেন 18 এর ডিজাইন টিমকে পিঠ চাপড়ানো অবশ্যই উচিত, সেটা হল এত হাই স্পিড ইম্প্যাক্ট হবার পরেও ট্রেন বেলাইন হয় নি, কেউ হতাহত হন নি, সামান্য আহত পর্য্যন্ত নয়। সেটা না করে মূর্খের দল একটা FRP প্যানেল নিয়ে পড়ে আছে।

প্রসঙ্গত জানাই যে ট্রেনটির প্যানেল এর মধ্যেই বদল হয়ে গিয়েছে ও ট্রেনটি ফিট ফর রান ডিক্লেয়ারড। আরো একটা ইনফরমেশন, বেচারা মোষগুলির মৃতদেহ ট্র্যাকের ওপর থেকে সরিয়ে নেবার পর, ওই “ভাঙ্গা ইঞ্জিনের” ট্রেন যাত্রা শুরু করে ও নিরাপদে ও ঠিক সময়েই গান্ধীনগর পৌঁছয়। সো মাচ ফর দ্যা ব্রোকেন ইঞ্জিন!

৪. ট্রেনটি মেক ইন ইন্ডিয়া নয়, এটি মেড ইন ইন্ডিয়া। এরা দুটোর তফাৎ পর্য্যন্ত জানে না!

নিচে চীনের একটি হাই স্পিড ট্রেন অ্যাকসিডেন্টের ছবি দিলাম। বেশি দিন আগের নয়, 04 June 2022 এর ঘটনা। ট্রেনটি একটি স্টেশন পেরোনোর সময়, ট্র্যাকের ওপর কিছু ফেলা মাটির সাথে “ধাক্কা” খায়, তারপর সেই ইমপ্যাক্ট এ ট্রেনের ড্রাইভার প্রাণ হারান। আটজন যাত্রী আহত হন। ট্রেনটির সামনের অংশের অবস্থা দেখুন।

কলমে : শান্তনু সোম (Shantanu Som
(পেশায় সফটওয়্যার কোম্পানির কর্ণধার। শিক্ষায় ইঞ্জিনিয়ার, শখ পাখীর ছবি তোলা।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.