“অতীতের নোয়াখালী থেকে শিক্ষা না নেবার ফলেই বর্তমানের মোমিনপুর ঘটছে। আরো ঘটবে।“ সোমবার বেলা ১০টা নাগাদ টুইটারে এটা লিখলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। পরে দুপুরে ১টা ৪০ নাগাদ ফেসবুকে তিনি এই পোস্ট করেন। সামাজিক মাধ্যমে এই পোষ্ট করার ২৩ মিনিটের মধ্যে লাইক, মন্তব্য ও শেয়ারের সংখ্যা হয় যথাক্রমে ৪৫৬, ৪১ ও ৪২। দ্রুত বেড়ে চলেছে প্রতিক্রিয়ার সংখ্যা।
জয়ন্ত কর্মকার লিখেছেন, “পুজোর খিচুরীর সাথে ইদের সিমুই মেশানোর ফল! বদহজম হয়ে গেলো কলকাতার ভদ্দরনোক খত্তরনাক দাদাবাবুদের!“
উৎপল ঘোষ লিখেছেন, “এসব হচ্ছে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।” শিমূল রায় লিখেছেন, “পাকিস্তান, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র, তাই ভারতবর্ষ হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত।” অভিষেক বিশি লিখেছেন, “একটাই প্রশ্ন…..
আগের বার ওপার থেকে পালিয়ে এপারে চলে এসেছিল, কিন্তু এবার যাবে কোথায়?”
এস কান্ত লিখেছেন, “চলুক সেকুলারি।” প্রসেনজিৎ ঘোষ লিখেছেন, “ঘটনাক্রমে রবিবার একই দিনে প্রধান তিন ধর্মের তিনটি ধর্মীয় উৎসব পড়েছে। এটা নিয়ে হিন্দুদের মাত্রাতিরিক্ত ন্যাকামিতে ফেসবুক হোমপেজ ভরে গেছে। অথচ এটা নিয়ে অন্যপাড়ার মিয়াভাইদের কোনও ন্যাকামিপনা চোখে পড়ে নাই। কারণ তারা অন্য কোনও ধর্মকে স্বীকারই করে না এবং এইজন্যই তারা এগিয়ে।”
খোদাবক্স শেখ লিখেছেন, “গুজরাট দিল্লি মুজাফ্ফার নগর মোমিনপুর ভাটপাড়া ধুলাগড় কাঁকিনাড়া……..”। প্রতিক্রিয়ায় অপূর্ব দাস লিখেছেন, “ওরে চটি চাটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, শোন গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আসল ক্রিমিনাল হচ্ছে তোদের শান্তির দূতরাই। আর দিল্লি দাঙ্গার কান্ডারী ঝাড়ুবালার দল। আর পশ্চিম বাংলাতে গেল ১১ বছরে যা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো হয়েছে তার সবই তোদের শান্তির দূতরাই ক্রিমিনাল।”
দেবব্রত বেরা লিখেছেন, “নোয়াখালী থেকে তাড়া খেয়ে মোমিনপুরে এসেছিলো, মোমিনপুরে এসে আবার ভাই-ভাই তত্ত্বে বিশ্বাস রেখে ৩৪ বছর সিপিএম ও ১১বছর তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আর আজ মোমিনপুর থেকে তাড়া খেয়ে হয়তো বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার দিকে আসবে এলিট বাবুরা, আর এখানে এসেও সেই ভাই-ভাই তত্ত্বে বিশ্বাস রাখবে…..
নোয়াখালী থেমেছিল ভাগলপুরের বিহারীদের জন্য, আর আজ সেই নোয়াখালীর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বংশধররা ‘বাংলা পক্ষ’ তৈরী করে বিহারীদের বাংলা ছাড়া করার জন্য চক্রান্ত তৈরী করছে…..
এই স্বার্থপর মানসিকতার মানুষদের শিক্ষা নোয়াখালীতেও হয়নি আর মোমিনপুরেও হবে না, তাই চিৎকার করে লাভ নেই শেষে এরাই বলছে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ‘সাম্প্রদায়িক বিভেদ’ সৃষ্টি করছে……।”
সঞ্জীব নন্দী লিখেছেন, “খিদিরপুর-মোমিনপুর-একবালপুর এর গত পরশুর ঘটনা আস্তে আস্তে মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে। চলুন ফিরে যাই ১৯৮১ সালে — হ্যাঁ ৮০’র দশক।
কলিমুদ্দিন শামস ওখানকার ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা। আরে বাবা যে সে নেতা নয়, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পীকার তখন। হ্যাঁ, “রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায়” “ধর্ম মানে আফিম বলা নাস্তিক” বামফ্রন্টের নেতা তখন কলিমুদ্দিন শামস। ১৯৮১ সালে কলিমুদ্দিন শামস-এর নেতৃত্বের খিদিরপুরে কালীপুজোতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা হয়। পুলিশের শান্তি আলোচনায় যোগদানই করে না বঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার কলিমুদ্দিন শামস। খিদিরপুরে একাধিক উর্দু পত্রিকা শামস-এর নেতৃত্বে হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ায়। এরপরেও সে নাস্তিক পার্টি মনোনিত সম্প্রীতির পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পীকার।
শামস চিরকালই নিজেকে মুসলিম নেতা বলে দেখিয়ে এসেছে — তার জন্য ধর্মবিরোধী বামফ্রন্টে থাকতে, বড় পদ পেতে তার অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সুভাষ চক্রবর্ত্তী তারাপীঠে পুজো দিতে গেলে ক্ষমা চাইতে হয়। হ্যাঁ, “রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায়” ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ এটাই।
তাই আবারো বলছি, দিনের শেষে আমাদের অস্তিত্ত্ব ও পরিচয় কোনও পার্টির ঝাণ্ডার তলায় নয় — মা ঠাকুমার তুলসীতলায়।”