গত ৫ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর দশমীর দিন বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডল। কিন্তু একাদশীর দিনও সে বাড়ি না ফেরায় থানায় অভিযোগ দায়ের করে তাঁর পরিবার।
০২১৪
৬ অক্টোবর, অর্থাৎ একাদশীর দিন অয়নের বাড়ি আসেন তাঁর বান্ধবী। এসে অয়নের মা মঞ্জুদেবীর কাছে জানতে চান, অয়ন কোথায়? অয়নকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
০৩১৪
সে দিনই অয়নের মাকে তাঁর বান্ধবী জানান যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অয়নের মায়ের দাবি, তখন তিনি বলেন বিষয়টি পাঁচ কান না করতে। ছেলে বাড়ি ফিরলে এ বিষয়ে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে, দশমীর রাতে যে অয়নের সঙ্গে তাঁর পরিবারের ‘সামান্য ঝুটঝামেলা’ হয়েছিল, তা অয়নের মাকে জানিয়েছিলেন তাঁর বান্ধবী।
০৪১৪
৭ অক্টোবর মগরাহাট থেকে একটি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অয়নের পরিবার দেহটি শনাক্ত করে জানায়, তাঁদের ছেলেকে বান্ধবীর পরিবার খুন করেছে।
০৫১৪
এই ঘটনায় ত্রিকোণ সম্পর্কের ইঙ্গিত পুলিশ আগেই পেয়েছিল। অয়নের মৃত্যুর পরেই তাঁর বাবা সংবাদমাধ্যমের সামনে বান্ধবী এবং তাঁর মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “মা এবং মেয়ে দু’জনেই আমার ছেলেকে চাইত। ও কী করবে?”
০৬১৪
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে দশমীর রাতে মত্ত অবস্থায় বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছন অয়ন। পুলিশি রিপোর্টে বলা হয়, ওই বান্ধবী এবং তাঁর মাকে হেনস্থা করায় অয়নের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে বান্ধবীর ভাই।
০৭১৪
তদন্তকারীরা বান্ধবী, তাঁর পরিবারের সদস্য-সহ মোট সাত জনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বান্ধবীর নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িতে অয়নকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু জল দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে দেওয়ায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা সেখান থেকে কোনও তথ্যপ্রমাণ পাননি।
০৮১৪
এ বার আসরে অবতীর্ণ হন অয়নের বন্ধু অয়ন ওরফে রাজু। তিনি দাবি করেন, কাঁদো কাঁদো গলায় অয়ন তাঁকে জানিয়েছেন, বান্ধবীর মা তাঁর বুকে ঘুষি মেরেছে, তাই খুব ব্যথা করছে।
০৯১৪
ওই বন্ধু আরও দাবি করেন যে বান্ধবীর মা-ই অয়নকে দশমীর রাতে ডেকে পাঠান। বান্ধবীর বাড়িতে ঢোকার আগে অয়ন বলে যান, বান্ধবীর বাবা বাড়িতে ঢুকছে কি না, তা দেখার জন্য দরজার সামনে পাহারা দিতে।
১০১৪
এর পর বান্ধবীর বাবা বাড়িতে এলে অয়ন ছাদে উঠে যান বলে দাবি করেন এই বন্ধু। অয়ন ছাদ থেকে তার উদ্দেশে হাত নেড়েছেন বলেও জানান তিনি।
১১১৪
বন্ধুটির কথায়, “৩টের সময় আমার শেষ বারের মতো ওর সঙ্গে কথা হয়। ও আমাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে বারণ করে।” দীর্ঘ ক্ষণ অয়ন ওই বাড়ি থেকে না বেরোনোয় বন্ধু রাজু বান্ধবীকে ফোন করেন (সঙ্গে সেই স্ক্রিনশট)।
১২১৪
অয়নের বান্ধবী তখন দাবি করেছিলেন যে, রাত আড়াইটে নাগাদ অয়ন তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাজুর দাবি, তিনি তখনই বুঝেছিলেন যে, অয়নের খারাপ কিছু হয়েছে।
১৩১৪
তদন্তকারীরা আগেই অনুমান করেছিলেন, অয়নের ফোনে অনেক তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু অয়ন নিরুদ্দেশ হওয়ার থেকে সেই ফোনটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
১৪১৪
তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই ফোনে বান্ধবী এবং তাঁর মায়ের কোনও ‘আপত্তিকর’ ছবি থাকতে পারে। এই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করাও হতে পারে অয়নের বান্ধবীর পরিবারকে। তবে এই নিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানা গিয়েছে পুলিশের তরফে। অয়নের ফোন উদ্ধার হলে এই রহস্যের সমাধান হতে পারে বলে ধারণা তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রে খবর, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অয়নের ফোন উদ্ধার করা যায়নি।