সরকারি কাজে ইংরেজির বদলে হিন্দি আনার প্রস্তাব, রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে

রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হোক, কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের ভাষা হিন্দি হোক, হিন্দিভাষী রাজ্যে হাই কোর্টের কাজ হিন্দিতে হোক, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজির পেপার তুলে দিয়ে হিন্দি আসুক— সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি এই সবই সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, মন্ত্রক সেই রিপোর্টই সেপ্টেম্বর মাসে পৌঁছে দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।

হিন্দিতে শিক্ষাদান প্রসঙ্গে কমিটি বলেছে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের ভাষা এবং তার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কাজকর্মের ভাষা হিন্দি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। ইংরেজির ব্যবহার ঐচ্ছিক হতে পারে। প্রযুক্তিপাঠের ক্ষেত্রেও একই নীতি। অতএব কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, নবোদয় বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি, আইআইএম, এমস— সবই এর আওতায় আসা উচিত। যেখানে একেবারেই উপায় নেই, শুধু সেখানেই ইংরেজিতে শিক্ষাদান চলতে পারে। সেটাও ধাপে ধাপে যাতে হিন্দিতে করা যায়, সেটা দেখা দরকার বলে কমিটির মত। এই নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজির পেপার তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তার বদলে হিন্দি পেপার আনার কথা বলা হয়েছে। কমিটির বক্তব্য, বাধ্যতামূলক ইংরেজির পেপার এমন একটা ধারণা তৈরি করে যেন ইংরেজি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হতে না দেওয়াই কমিটির লক্ষ্য।

সরকারি চাকরির পরীক্ষা শুধু নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মও যাতে হিন্দিতে হয়, তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। তদনুযায়ী, কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হিন্দির জ্ঞান অন্যতম মাপকাঠি যেন হয়, সে দিকে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। যে সব অফিসার এবং কর্মী ‘ইচ্ছা করে’ হিন্দিতে কাজকর্ম এড়িয়ে যান, তাঁদের কাছে তার সদুত্তর চেয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। ‘সন্তোষজনক ব্যাখ্যা’ না পেলে সেটা তাঁদের বার্ষিক পারফরম্যান্স রিপোর্টে যেন নথিভুক্ত হয়, সুপারিশ করা হয়েছে তা-ও। হিন্দি ভাষার জ্ঞান প্রয়োজন, এমন সরকারি পদ যদি তিন বছরেরও বেশি খালি থাকে, তা হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার দায় নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁর বার্ষিক পারফরম্যান্স রিপোর্টে তা নথিভুক্ত হবে।

যে সব রাজ্যের সরকারি ভাষা হিন্দি, সেই সব রাজ্যে হাই কোর্টের কাজ হিন্দিতে করার কথাও বলা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রয়োজন দেখা দিলে হিন্দি কার্যসূচির ইংরেজি তর্জমা হাই কোর্টে দেওয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্বায়ন ও উদারনীতিবাদের সৌজন্যে হিন্দি আজ বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মন্তব্য করে কমিটি বলেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের ভাষা হিন্দিই হওয়া উচিত।

ঘরের মাটিতে হিন্দির জনপ্রিয়তা আরও বাড়ানোর জন্য কমিটির নিদান, সরকারি বিজ্ঞাপনের বাজেটের অর্ধেকের বেশি যাওয়া উচিত হিন্দি বিজ্ঞাপনে। হিন্দি এবং আঞ্চলিক ভাষার বিজ্ঞাপনকে উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে। হিন্দি বিজ্ঞাপন বড় করে প্রথম পাতায় এবং ইংরেজি বিজ্ঞাপন ছোট করে ভিতরের পাতা বা শেষের পাতায় দেওয়ার প্রস্তাবও আছে।

ঘটনাচক্রে আজই কর্নাটকে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় রাহুল গান্ধীকে ভাষা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি তাঁর উত্তরে বলেন, সকলের মাতৃভাষাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সব ভাষাভাষীরই সংবিধানে সমান অধিকার। প্রসঙ্গত সরকার হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই সরব। দক্ষিণের রাজ্যগুলি তাদের বিরোধিতা আগেই জানিয়ে রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.