দীর্ঘদিনের ক্রাউড পুলার সর্বজনীন দুর্গাপুজো গুলির মধ্যে একটি সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের দুর্গাপুজো , প্রসঙ্গক্রমে বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ এর সঙ্গে এটির আশৈশব নিবিড় যোগ বাবা প্রদীপ ঘোষের সময় থেকেই। তথাকথিত তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের পুজো গুলির জনসমাগমকে টেক্কা দিচ্ছে বলেই কি তাই দর্শনার্থী সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে এলো। নাকি আজদি কা অমৃত মহোৎসব এর জাতীয়তা বোধে সম্পৃক্ত থিম মাননীয়া তথা অন্যান্য তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের চক্ষু শূল হয়ে উঠল। কয়েকদিন আগে এও শোনা গিয়েছিল যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই পুজোর উদ্বোধন করতে আসতে পারেন।
প্রশাসনিক তরফে কেউ কেউ বলছেন যে গত বছর রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো হিসেবে পরিচিত শ্রীভূমির প্যান্ডেলেও লেজার শো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখা দরকার জনসমাগমের কারণে নয়, সেই লেজার শো-এর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল খোদ বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম। কারণ এয়ারপোর্ট নিকটবর্তী ওই পুজোর আকাশচুম্বি লেজার শো বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হতে পারতো। যা এবারের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। তাহলে আসল কারণটা কী?
অজুহাত কি?
ভিড়! পুজোতে ভিড় হবেনা তো কি হবে? পুজোতে ভিড় হবে বলেই না মমতা ব্যানার্জী “নির্দেশ” দিয়েছিলেন পুজোতে শিক্ষকতার চাকরীর আশা ছেড়ে, যে কোন চাকরির আশা ছেড়ে চপ, ঘুগনির দোকান দেওয়ার। তাহলে এখন ভিড়ে কি সমস্যা?
পুজোতে ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক। সন্তোষ মিত্র পার্কের মতো পুরনো বনেদী পুজোগুলোতে ভিড় হবে এও পুলিশ আগে থেকেই জানে। আর সন্তোষ মিত্র পার্কে কি গত বছরের শ্রীভূমির মতো অব্যবস্থা ছিল? তাহলে? সমস্যাটা কি? সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যাটা বোধহয় সন্তোষ মিত্র পার্কের থিমে। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের বছরে অসাধারন লাইট এন্ড সাউন্ড শো ছিল সন্তোষ মিত্র পার্কের থিম। যা দেখার জন্য ভেঙে পরছিল লাখো মানুষের ভিড়। বনগাঁ, বারাসাত, ক্যানিং থেকে আসা মানুষগুলো লাইট এণ্ড সাউন্ডে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী দেখে, লালকেল্লার বুকে নেতাজীকে দেখে উচ্ছাসে ফেটে পরছিলেন কখনও, আবার কখনও তাদের চোখের কোণ চিকচিক করে উঠছিল। আর এটাই বোধহয় মমতা ব্যানার্জীর সহ্য হোলনা। এতো ঢক্কনিনাদ করে, এতো বার ভুল মন্ত্র পরে, ঢাক বাজিয়ে, গরবা নেচেও লোকে পুজোয় তাকে নিয়ে আলোচনা করছেনা। তার উদ্বোধন করা “হাজার হাজার” পুজোয় যা ভিড় হচ্ছে তার থেকে বেশী ভিড় হচ্ছে সন্তোষ মিত্র পার্কে এটাই মমতা ব্যানার্জীর মনে হয় সহ্য হোল না।
একই সাথে জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদ ঘিড়ে সাধারন মানুষের এই উচ্ছাস, এই ভিড়ও বোধহয় উনি ঠিক পছন্দ করতে পারছিলেননা। সংগ্রাম মানে তো লোকে জানবে সিঙ্গুর। সংগ্রাম মানে যদি লোকে জানে সেলুলার জেল, তাহলে এতোদিন ধরে সিলেবাসে এতো হাবিজাবি আবোল তাবোল ঢুকিয়ে, ক্ষুদিরামকে “সন্ত্রাসবাদী” বলে কিইবা লাভ হোল।
একে তো ঘরের ছেলেটাকে এই পুজোতেও বিদেশ বিভুইতে গিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে, তার মধ্যে এসব কি আর ভালো লাগে কারুর!
এইসব কারনেই বোধহয় সপ্তমীতেই নিভে গেল সন্তোষ মিত্র পার্কের পুজোর আলো।
বিদ্র – জনসাধারণের চাপে পরে আবার চালু হোল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের লাইট এন্ড সাউন্ড শো। তবে রিপোর্টটি তুলব না, কারণ আলো নেভানো হয়েছিল অসৎ উদ্দেশ্যে এটা আরও পরিষ্কার হোল চাপে পরা মাত্রই আবার লাইট এন্ড সাউন্ড শো শুরু করতে দেওয়ায়।
দীপ্তস্য যশ