০১১৭
শনিবার ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল লিগে জাভার দুই ক্লাব আরেমা এবং পার্সিবায়া সুরাবায়ার মধ্যে খেলা চলছিল। এই ম্যাচে আরেমা ২-৩ ব্যবধানে হেরে যায়। আরেমা ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েন দু’দলের সমর্থকরা। কার্যত দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। হামলা চালানো হয় ফুটবলারদের উপরেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করলে সমস্যা আরও বাড়ে। কানজুরুহান স্টেডিয়ামের ভিড়ে ঠাসা গ্যালারিতে তখনই আতঙ্ক ছড়ায়। স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যায়। তাতেই পদপিষ্ট হয়ে এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বহু মানুষের। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত সেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বহু বার খেলার মাঠ পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে।
০২১৭
১৯৮২ সালের ২০ অক্টোবর। এফসি স্পার্টাক মস্কো এবং এইচএফসি হারলেমের মধ্যে উয়েফা কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ চলছিল রাশিয়ার সেন্ট্রাল লেনিন স্টেডিয়ামের। সেই সময় স্টেডিয়ামের ‘গ্র্যান্ড স্পোর্টস এরিনা’য় হঠাৎই ঘটে যায় বিপর্যয়। খেলা দেখতে আসা এফসি স্পার্টাক মস্কোর এক তরুণী সমর্থকের জুতো হারিয়ে যায়। তিনি সেই জুতো খুঁজতে নামলে অন্য সমর্থকেরা তাঁর পিছু পিছু জুতো খুঁজতে নামেন। এর পরই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। জুতো খুঁজতে নেমে পদপিষ্ট হয়ে মোট ৩৪০ জন এফসি স্পার্টাক মস্কোর সমর্থক মারা গিয়েছিলেন।
০৩১৭
১৯৬৪ সালের ২৪ মে। পেরুর লিমার জাতীয় স্টেডিয়ামে পেরু এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে খেলা চলছিল। আর্জেন্টিনা তখন ১-০ গোলে জিতছিল। পেরুর একটি গোল বাতিলের পর হঠাৎই মাঠ জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। পেরুর সমর্থকেরা গোল বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমে আসে। পুলিশ তাঁদের মাঠে যেতে বাধা দিতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে। এই বিশৃঙ্খলার ফলে প্রায় ৩১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনা ‘এস্তাদিও ন্যাসিওনাল ডিসাস্টার’ বা লিমা ফুটবল দাঙ্গা নামে পরিচিত।
০৪১৭
১৯৮৯ সালের ১৫ এপ্রিল। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের হিলসবরো স্টেডিয়ামে লিভারপুল এবং নটিংহাম ফরেস্ট ক্লাবের মধ্যে এফএ কাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ চলছিল। সমর্থকদের ভিড়ে ঠাসা ছিল স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে অনেক সমর্থকই ভাল করে খেলা দেখতে পাচ্ছিলেন না। এই সময় স্টেডিয়ামের সামনের দিকের বেড়া টপকে পছন্দের খেলোয়াড়দের খেলা দেখার চেষ্টা করেন দুই দলের সমর্থকেরা। ভিড়ের ঠেলায় উঁচু একটি বেড়া ভেঙে গিয়ে সমর্থকেরা একে অপরের উপর পড়তে থাকেন। এই ঘটনায় মোট ৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা হিলসবোরো বিপর্যয় নামে পরিচিত।
০৫১৭
১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের ত্রিভুবন চ্যালেঞ্জ শিল্ডের খেলা চলছিল জন্য জনকপুর সিগারেট ফ্যাক্টরি ক্লাব এবং বাংলাদেশি লিবারেশন আর্মি ক্লাবের মধ্যে। খেলা চলাকালীন শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে স্টেডিয়ামের দর্শকেরা দৌড়াতে শুরু করেন। এই ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মোট ৯৩ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ।
০৬১৭
১৯৯৬ সালের ১৬ অক্টোবর। গুয়াতেমালার এস্তাদিও মাতেও ফ্লোরেস স্টেডিয়ামে গুয়াতেমালা এবং কোস্টারিকার মধ্যে ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলা চলার কথা ছিল। খেলা শুরুর কয়েক মুহূর্ত আগে, হাজারো সমর্থক স্টেডিয়ামের ‘জেনারেল সুর’ বিভাগে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে। স্টেডিয়ামের দুর্বল নকশা এবং অত্যধিক দর্শকের ভিড়ে ৮৩ জন ফুটবল অনুরাগী স্টেডিয়ামের ভিতরেই মারা যান। প্রায় দেড়শো জন আহত হয়েছিলেন।
০৭১৭
২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। মিশরের পোর্ট সাইদ স্টেডিয়াম আল-মাসরি এবং আল-আহলি ক্লাবের মধ্যে মিশরীয় প্রিমিয়ার লিগের ফুটবল ম্যাচ চলছিল। খেলা চলাকালীন রণক্ষেত্রে পরিণত হয় স্টেডিয়াম। আল-মাসরির সমর্থকেরা হঠাৎই ছুরি-পাথর নিয়ে আল-আহলির সমর্থকদের উপর আক্রমণ করতে শুরু করেন। এই দাঙ্গার কারণে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়।
০৮১৭
১৯৬৮ সালের ২৩ জুন। আর্জেন্টিনার বুয়েনাস আইরেসের চির-প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল বোকা জুনিয়র্স এবং রিভারপ্লেটের মধ্যে একটি ম্যাচের পরে স্টেডিয়ামের ১২ নম্বর গেটের কাছে হুলস্থুল শুরু হয়। ওই গেট দিয়ে বেরোনোর ভিড় লেগে যায় সমর্থকদের মধ্যে। আর এই ভিড়ের নীচে চাপা পড়ে ৭১ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহত হন। আর্জেন্টিনার ফুটবলের ইতিহাসে এই ঘটনাকে সবচেয়ে খারাপ ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়।
০৯১৭
১৯৮৫ সালের ১১ মে। ইংল্যান্ডের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নি বিপর্যয়ের দিন। ব্র্যাডফোর্ড সিটির ভ্যালি প্যারেড স্টেডিয়ামে ব্র্যাডফোর্ড সিটি এবং লিঙ্কন সিটির মধ্যে একটি ম্যাচ চলছিল। খেলা চলাকালীন স্টেডিয়ামের একটি অংশে আগুন লেগে যায়। প্রবল হাওয়ার কারণে সেই আগুন শীঘ্রই সারা স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ৫৬ জন নিহত এবং অন্ততপক্ষে ২৬৫ জন আহত হয়েছিলেন।
১০১৭
১৯৭৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মিশরের জামালেক স্টেডিয়ামে জামালেক এসসি এবং চেকোস্লোভাকিয়ার দুকলা প্রাগ ক্লাবের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ চলছিল। এই স্টেডিয়ামে ৪০ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা ছিল । কিন্তু খেলা দেখতে উপস্থিত হন এর প্রায় দ্বিগুণ মানুষ। এর ফলে পদপিষ্ট হয়ে ৫০ জন নিহত হন।
১১১৭
২০০১ সালের ১১ এপ্রিল। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গের এলিস পার্ক স্টেডিয়ামে সমর্থকেরা নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু করে। এর ফলে স্টেডিয়ামের কাঁটাতারে আটকে গিয়ে মৃত্যু হয় ৪৭ জন সমর্থকের। ওই স্টেডিয়ামে সেই দিন কাইজার চিফস্ এবং অরল্যান্ডো পাইরেটসের মধ্যে ফুটবলের ম্যাচ চলছিল।
১২১৭
১৯৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি। এলিস পার্ক স্টেডিয়ামের দশ বছর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্কনির ওপেনহেইমার স্টেডিয়ামে আরও একটি বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। কাইজার চিফস্ এবং ওরলান্ডো পাইরেটসের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচ চলছিল। রেফারি কাইজার চিফসে্র পক্ষে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ওরলান্ডো পাইরেটসের সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর পরই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওপেনহেইমার স্টেডিয়াম। এই ঘটনায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়।
১৩১৭
১৯৮৫ সালের ২৯ মে। ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল ম্যাচ। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল লিভারপুল এবং জুভেন্টাসের মধ্যে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগেই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। দুই দলের সমর্থকদের মাঝে থাকা স্টেডিয়ামের প্রাচীর ভেঙে পড়ার পর এই ঝামেলা শুরু হয়। এই ঘটনায় মোট ৩৯ জন জুভেন্টাস সমর্থক মারা গিয়েছিলেন।
১৪১৭
১৯৪৬ সালের ৯ মার্চ। ইংল্যান্ডের বার্নডেন পার্ক স্টেডিয়ামের বিপর্যয়ে ৩৩ জন মারা গিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। স্টেডিয়ামের যত জনের বসার ব্যবস্থা ছিল, তার থেকে অনেক বেশি দর্শক মাঠে উপস্থিত হওয়ায় পদপিষ্ট হয়ে মারা যান এত জন মানুষ।
১৫১৭
১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট। ইডেন গার্ডেন্সে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি ম্যাচ চলছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় অর্ধে রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে মুহূর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ইডেন গার্ডেন্স। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতিতে ১৬ জন মারা যান। মাঠ ছাড়িয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাস্তাতেও। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল।
১৬১৭
১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর। পশ্চিম জার্মানির মিউনিখে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইজরায়েলি অলিম্পিক দলের ১১ সদস্যকে গুলি করে খুন করে প্যালেস্টাইনের একটি জঙ্গি সংগঠন ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’। নিহত ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে একজন জার্মান পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি ২৩৪ জনের মুক্তির দাবিতে এই ঘটনা ঘটায় ওই জঙ্গি গোষ্ঠী।
১৭১৭
১৯৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের একটি ম্যাচে ক্যামেরুন এবং কঙ্গোর দলের মধ্যে লড়াইয়ের সময় দু’জন দর্শক নিহত হন। ক্যামেরুনকে পেনাল্টি কিক দেওয়ার পর কঙ্গোর গোলরক্ষক রেফারিকে আক্রমণ করেন। এর পরই মাঠ জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়।