জঙ্গি ঢোকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান, লস্করের শাগরেদ দুই পাকিস্তানিকে ধরেছি: কাশ্মীরের সেনা কর্তা

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে ভারতে জঙ্গির স্লিপাল সেল ঢোকাতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান, সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন সেনা বাহিনীর ১৫ নম্বর কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল যোগেন্দ্র সিংহ ধিঁলো। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে লস্কর, জইশের একাধিক জঙ্গি সীমান্ত পার করার চেষ্টা করেছে। সেনার গুলিতে তারা বেশিরভাগই পিছু হটেছে। এই সব জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করতে সাহায্য করছে পাকিস্তানের বেশ কিছু গ্রামবাসী। তাদের মধ্যেই দু’জনকে হাতেনাতে ধরা গেছে। জানা গেছে, এই দু’জনই লস্কর জঙ্গিদের হয়ে কাজ করে।

কী ভাবে পাকড়াও করা হয়েছে দুই পাকিস্তানিকে?

সেনা সূত্র জানিয়েছে, ২২ অগস্ট গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখায় অতন্দ্র প্রহরায় ছিল ভারতীয় বাহিনী। বারামুলার বোনিয়ার সেক্টরের সেনা ক্যাম্পের পিছনের দিকে আচমকাই ঝোপঝাড় নড়ার শব্দে সতর্ক হয়ে ওঠেন জওয়ানরা। শব্দের দিক লক্ষ্য করে এগিয়ে ঘিরে ফেলা হলো গোটা জায়গা। সেনা দেখেই পালাবার তালে ছিল দুই যুবক। তাদের আপাদমস্তক ঢাকা ছিল কালো পোশাকে। কম্যান্ডারের অভ্যস্ত চোখ এক ঝলক দেখেই বুঝে নিয়েছিল এরা পাকিস্তানের বাসিন্দা। গোপন সুড়ঙ্গের খোঁজ চালাচ্ছে।

খালিল আহমেদ ও মোজাম খোকার। নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছিই তাদের ঘাঁটি। সেনা সূত্রে খবর, পাকিস্তানের এই দুই যুবক আসলে জঙ্গিদের গুপ্তচর। ভারতীয় সেনার উপর নজর রাখাই তাদের কাজ। পাশাপাশি, সীমান্ত পার করিয়ে জঙ্গিদের ভারতে ঢোকার রাস্তা বাতলে দেওয়া তাদের পেশা।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকেই জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা দ্বিগুণ করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ রেখায়। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি জঙ্গি সংগঠন। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদী দলে নাম লেখানোর হিড়িক পড়ে গেছে সেখানকার অধিকাংশ লোকজনের। ‘অধিকারের লড়াইয়ে’ ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছে বেশ কিছু প্রাক্তন জঙ্গিও। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, খালিল ও মোজাম সেই দলেই পড়ে। পাকিস্তানের লস্কর সংগঠনের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে লস্করের স্লিপার সেল আগেও উপত্যকায় ঢুকিয়েছে তারা। তবে এ বার সেই চেষ্টা বানচাল করা হয়েছে।

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্ট জানিয়েছে, জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং তালিবানদের ১৫০ জন সক্রিয় সদস্যের অর্ধেক কোটলির কাছে ফাগুশ ও কুন্ড ক্যাম্পে জড়ো হয়েছে। বাকি শাভাই নাল্লা, আবদুল্লা বিন মাসুদ ক্যাম্পে নাশকতার ছক কষছে। জইশ মাথা মৌলানা মাসুদ আজহারের ভাই ইব্রাহিম আথারকে ইতিমধ্যেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দেখা গেছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে জঙ্গিদের ১৪টি শিবির তৈরি হয়েছে। সেখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে লস্কর, জইশের কম্যান্ডাররা।

বস্তুত ভারতীয় গোয়েন্দাদের এও দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে তালিবানদের পুরনো একটি গোষ্ঠী। খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকায় তাদের ক্যাম্পও দেখা গেছে। পাশাপাশি জইশের নতুন শিবির হয়েছে জঙ্গল মান্ডি, শিনকিয়ারি, গারহি হাবিবুল্লাহ, ওঘি, ইলাকা-ই-ঘর, আন্ধের বেলা ইত্যাদি অঞ্চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.