উনিশে বিষ! বার বার রোহিতদের ভোগাচ্ছে ১৯তম ওভার

রোহিত শর্মার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৯তম ওভার। ভারত ম্যাচ জিতুক বা হারুক, রোহিতের কাছে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওই ওভারটাই। কখনও ভুবনেশ্বর কুমার, কখনও হর্ষল পটেল, কখনও আরশদীপ সিংহ, ১৯তম ওভারে যিনিই বল করতে আসেন, তিনিই রান দিয়ে যান। নির্বিষ ১৯তম ওভারটাই বিষ হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় দলের কাছে।

বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা আরশদীপ চার ওভারে ৩২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। এর মধ্যে ১৯তম ওভারেই ১৭ রান দিয়েছিলেন আরশদীপ। ওই ওভারে রান তুলেই ১০০ রানের গণ্ডি টপকেছিলেন প্রোটিয়ারা। এই রোগ যদিও নতুন নয়। এশিয়া কাপ থেকেই চলছে ১৯তম ওভারে রান দেওয়া।

এশিয়া কাপ | ভারত বনাম পাকিস্তান (গ্রুপ পর্ব)

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। তিনি ১২ রান দেন। ওই ওভারে দু’টি উইকেট নিলেও শাহনাওয়াজ দাহানি তাঁকে ছক্কা হাঁকান। সেই ম্যাচ জিততে যদিও কোনও অসুবিধা হয়নি। পাঁচ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল ভারত।

এশিয়া কাপ | ভারত বনাম হংকং (গ্রুপ পর্ব)

এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ৪০ রানে জিতেছিল ভারত। কিন্তু সেই ম্যাচে ১৯তম ওভার বল করতে এসে আবেশ খান দিয়েছিলেন ২১ রান। চার ওভারে ৫৩ রান দিয়ে শেষ করেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচের পর আর সুযোগ পাননি আবেশ।

এশিয়া কাপ | ভারত বনাম পাকিস্তান (সুপার ফোর)

সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯তম ওভার। সেই ওভারে বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। ১৯ রান দিয়েছিলেন তিনি। শেষ দু’ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। আসিফ আলি এবং খুশদিল শাহ একের পর এক বল মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন। সেই ওভারে একটি ওয়াইডও করেন ভুবনেশ্বর। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ বোলারের থেকে এটা আশা করেননি কেউই।

এশিয়া কাপ | ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (সুপার ফোর)

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারের পিছনেও ছিল ১৯তম ওভার। সেই ম্যাচেও বল করেছিলেন ভুবনেশ্বর। শেষ দু’ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর দেন ১৪ রান। দাসুন শনাকা দু’টি চার মারেন। দু’টি ওয়াইড দেন ভুবনেশ্বর। ভারতের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় ওখানেই। শেষ ওভারে আরশদীপের পক্ষে ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভার করেছিলেন অক্ষর পটেল। সেই ম্যাচে মাত্র পাঁচ রান দিয়েছিলেন তিনি। ব্যতিক্রম হয়েই রয়ে গিয়েছে সেই ম্যাচ।

ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় (প্রথম ম্যাচ)

সেই ম্যাচেও ভারতের ম্যাচ জয়ের সব আশা শেষ হয়ে যায় ১৯তম ওভারে। শেষ দু’ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। বল তুলে দেওয়া হয় দলের অন্যতম অভিজ্ঞ পেসার ভুবনেশ্বরের হাতে। তাতেই আঁতকে উঠেছিলেন সমর্থকরা। এশিয়া কাপের স্মৃতি যে তখনও বেশ টাটকা। আশঙ্কাই সত্যি হয়। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর দেন ১৬ রান। ওভারের প্রথম বলটাই ওয়াইড করেন তিনি। সেই ওভারের শেষ তিনটি বল বাউন্ডারিতে পাঠান ম্যাথু ওয়েড। শেষ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ়ের দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে মাত্র আট ওভারের ম্যাচ হয়। সেই ম্যাচ এই তালিকার বাইরে।

ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় (তৃতীয় ম্যাচ)

এই ম্যাচে ১৯তম ওভার করতে আসেন যশপ্রীত বুমরা। ভারতের অন্যতম সেরা পেসার মনে করা হয় তাঁকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর কাঁধেই ১৯তম ওভার করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে তিনিও ব্যর্থ। ১৮ রান দিয়েছিলেন ১৯তম ওভারে। ড্যানিয়াল স্যামস সেই ওভারে একটি চার এবং একটি ছক্কা মারেন। টিম ডেভিড ব্যাট করার সময় ওভার থ্রোয়ে ছ’রান হয়ে যায়। চার ওভারে ৫০ রান দিয়ে শেষ করেন বুমরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম বার চার ওভারে ৫০ রান দেন তিনি।

ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ় (প্রথম ম্যাচ)

রোগ সারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও। নিজের প্রথম ওভারে তিন উইকেট নেওয়া আরশদীপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ১৯তম ওভারে বল করার। ১৭ রান দিয়েছিলেন তিনি। সেই ওভারের আগে পর্যন্ত তিন ওভারে ১৫ রান দেওয়া আরশদীপ কেঁপে যান ১৯তম ওভারে এসে। কেশব মহারাজ তাঁকে সেই ওভারে দু’টি চার এবং একটি ছক্কা মারেন। যদিও তাতে আরশদীপের ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ভারত ম্যাচও জিতে নেয় আট উইকেটে।

জিতলেও ১৯তম ওভারের বিষ গিলতেই হল ভারতকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই একটি ওভারের ভুলে ম্যাচ হারাতে হতে পারে রোহিতদের। সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরার আগে এই বিষের ওষুধ বার করতেই হবে রাহুল দ্রাবিড়দের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.