হত্যার আড়াই মাস পরে শেষকৃত্য, কী ভাবে সংরক্ষণ করা হল জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দেহ?

৮ জুলাই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর শেষকৃত্য আয়োজিত হল। অনেকের মনেই প্রশ্ন, এত দিন কী ভাবে পচন থেকে রক্ষা পেল তাঁর দেহ?

মরদেহ সংরক্ষণের কথা উঠলে প্রথমেই মাথায় আসে মিশরের মমির কথা। হাজার হাজার বছর ধরে কী ভাবে প্রাচীন মিশরের ফারাওদের দেহ সংরক্ষণ করা হত, তা আজও বিস্ময়। আবের ক্ষেত্রে কোন পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও মৃত্যুর পর দেহকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিজ্ঞানের ভাষায় বিষয়টিকে বলে ‘এমবামিং’। এ ভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ কিন্তু আগেও হয়েছে। রুশ রাষ্ট্রনায়ক লেনিনের মৃতদেহ আজও সংরক্ষিত রয়েছে মস্কোতে।

মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর ২৬ সেপ্টেম্বর শিনজো আবের শেষকৃত্য আয়োজিত হল।

ঠিক কী ভাবে হয় এই কাজ?

ব্রিটানিকা বলছে, স্থান ভেদে এই পদ্ধতি আলাদা ছিল। যেমন, মিশরে মরদেহে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মাখিয়ে তার উপর কাপড় পেঁচিয়ে দেওয়া হত। শোনা যায়, আলেকজান্ডারের দেহ ব্যাবিলন থেকে ম্যাসিডোনিয়া আনা হয়েছিল মধুর পাত্রে নিমজ্জিত করে। ট্রফলগারের যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল লর্ড নেলসনের দেহ নাকি ইংল্যান্ডে আনা হয়েছিল ব্র্যান্ডির পাত্রে। এমনকি ভিনিগার বা অন্যান্য মদে চুবিয়ে মরদেহ সংরক্ষণের কথাও শোনা যায়।

আধুনিক এমবামিংয়ে ধমনীর মধ্যে দিয়ে দেহ সংরক্ষণকারী তরল প্রবেশ করানো হয় মরদেহে। এই পদ্ধতির সূচনা হয় সতেরো-আঠেরো শতকে, ইংল্যান্ডে। বর্তমানে সাধারণত মরদেহ সংরক্ষণ করতে হলে আগে শিরা থেকে রক্ত বার করে নেওয়া হয়। বদলে প্রবেশ করানো হয় ফর্ম্যালিন বা ফরম্যালডিহাইড জাতীয় তরল। দেহ গহ্বরের ভিতরে থাকা তরল একটি লম্বা সুচ দিয়ে টেনে বার করে নেওয়া হয়। এই সুচটির নাম ট্রোকার। এর পর তার বদলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ফরম্যালডিহাইড, অ্যালকোহল ও ইমালসিফায়ার জাতীয় পদার্থের মিশ্রণ। তবে এই রাসায়নিকগুলি এক বার ভরলেই হয় না। কিছু দিন পর পর বদলাতে হয় তরল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.