হ্যাঁ! বর্বর বাবরের পূর্বপুরুষ তৈমুর লং- যার হিন্দু মন্দির ধ্বংস,সম্পত্তি লুট এবং লাশের পাহাড় বানানো ছিল নেশা, সেই তৈমুর লং এর মৃত্যু হয়েছিলো এক সামান্য অখ্যাত গুর্জর রমণীর নেতৃত্বে ।
তৈমুর লং তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে সমরখন্ড থেকে যাত্রা শুরু করে, আলেকজান্ডারের মত বিশ্ব জয় করার ইচ্ছায়, আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্যএশিয়ার অধিকাংশ- যেমন,কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, চীনের কাশগর দখল করে আধুনিক ভারতবর্ষে সিন্ধু নদ পেরিয়ে উত্তর অংশের অধিকাংশ জায়গা জয় করে, লুট করে, ধংস লীলা চালিয়ে দিল্লী হয়ে যখন গঙ্গা যমুনার দ্বারে পৌঁছল, তখন এই বর্বরকে প্রথম গুর্জররা প্রতিহত করে। গুর্জর সেনাপতিদ্বয় ছিলেন জগজিৎ সিংহ গুর্জর-৮০,০০০ সেনানীর নেতৃত্বে, আর একজন ইতিহাসে উপেক্ষিত দুর্ধর্ষ মহিলা সেনাপতি রাম পেয়ারী গুর্জর, ৪০,০০০ মহিলা সেনানীর নেতৃত্বে।
শুরু হয় ভয়ঙ্কর যুদ্ধ বর্তমান মিরাটে। সারাদিন ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর রাতেও চলে অনবরত প্রতিঘাত। সমগ্র যুদ্ধে রাতের বেলা অন্ধকারে, গেরিলা আক্রমন করে, তৈমুর সেনাদের খাবার ও অস্ত্রশস্ত্র লুট করেছেন এই রাম পেয়ারীর নেতৃত্বে মহিলা সেনাদল। খাবার অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছেন নিজের সেনাদলকে। কখনো সম্মুখ সমরে, কখনো পেছন থেকে, সহযোগিতা করেছেন।
মার খেয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে তৈমুর পালিয়ে যেতে থাকে হরিদ্বারএর দিকে। কিন্তু পিছু নেয় গুর্জর সেনারা।মুজ্জাফরপুর ও সাহারানপুরেও আবার যুদ্ধ হয় ভয়ঙ্কর। যখন হরিদ্বার পৌঁছয় তৈমুর, তখন পাহাড়ের উপর থেকে তীর ছোঁড়ে পাহাড়ি সৈন্যদল আর রাম পেয়ারীর গেরিলা গুর্জর বাহিনী। এখানেই হরবীর সিংহের বর্শা বেঁধে তৈমুরের বুকে l আহত,পরাজিত, মৃতপ্রায় তৈমুর কোনরকমে পলায়ন করে ফিরে যায় সমরখন্দেI ওখানেই মারা যায় এই বর্শা’র ক্ষতে। হরিদ্বার থেকে যতক্ষন না আহত তৈমুর লং তার সেনাদল নিয়ে পলায়ন করে, রাম পেয়ারীর নেতৃত্বে মহিলা গুর্জর সেনানিরা যুদ্ধ করে গেছেন বিজয়কে ধরে রাখতে ।
নামটা খুব অপরিচিত! তাই না ! কিন্তু ইনিই হলেন প্রথম মহিলা যোদ্ধা, ঝাঁসি রানী লক্ষী বাই এর অনেক, অনেক, আগের- চৌদ্দশ শতাব্দীর প্রথমদিকে। সেই সময়ের বিখ্যাত যোদ্ধা যোগরাজ সিংহের যোগ্য শিষ্যা ছিলেন রাম পেয়ারী । ছোট থেকেই যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করেছেন। তরোয়াল, বর্শা, লাঠি এসব নিয়ে যুদ্ধ করতে পারতেন। ভয়ংকর যোদ্ধাদের নিয়ে ৪০,০০০ মহিলা সেনানী তৈরি করেছিলেন এবং সেই বাহিনীই তৈমুর লঙ্গ এর সাথে সম্মুখ সমরে মুখোমুখি হয়েছিল। প্রাচীন ভারতের এই বীরগাথা কেউ মনে রাখিনি, আর ইতিহাসেও স্থান পায় নি-পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও সমানভাবে দক্ষ ছিলেন যুদ্ধ বিদ্যায় ।ভুলে গেছি যোগ্যতায় সেই সমানাধিকারএর কথা,ভুলে গেছি বীরাঙ্গনা রাম পেয়ারীকে, সাথে তাঁর ৪০,০০০ মহিলাসেনানীদেরকেও।
(নারীশক্তি শ্রেষ্ঠশক্তি)