ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের পরে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রায় ইতি টেনেছে পাকিস্তান। সীমান্ত পেরিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ। কূটনেতিক স্তরে ভারতের সঙ্গে পাক সরকার সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্তে নাজেহাল সেখানকার সাধারণ মানুষ। জীবনদায়ী ওষুধের জন্য হাহাকার সর্বত্র। চাপের মুখে তাই নিষেধাজ্ঞার রাশ আলগা করতে চলেছে ইমরান খানের সরকার। পাকিস্তানের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত থেকে জীবনদায়ী ওষুধ আমদানি ও রপ্তানিতে আর কোনও বাধা থাকবে না।
সোমবার পাকিস্তান বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, আগের মতোই ভারত থেকে জীবনদায়ী ওশুধ আমদানি করা হবে। একই সঙ্গে ভারতেও ওষুধ পাঠানো হবে। কূটনৈতিক মহলের দাবি, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার ফলে সে দেশে বাজারের হাল বেহাল। বাড়ছে রোজকার ব্যবহারের জিনিসের দাম। ভারত থেকে যাবতীয় জীবনদায়ী ওষুধ যায় পাকিস্তানে। আমদানি বন্ধ হওয়াতে লোকসানে চলছে সেখানকার ড্রাগ ইন্ডাস্ট্রিগুলো।
শুধু ওষুধ নয়। টান পড়েছে আনাজ থেকে নিত্য ব্যবহারের পণ্যেও। ভারত থেকে পেঁয়াজ ও অন্যান্য আনাজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় টান পড়েছে হেঁশেলেও। একদিকে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে চিন-বিরোধী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে পাকিস্তানে। গত কয়েক বছরের হিসেব বলছে, পাকিস্তান থেকে চিনে পণ্য রফতানির পরিমাণ ৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। আর চিন থেকে পাকিস্তানে পণ্য আমদানি ২৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ করিডর তৈরি হওয়ার পর চিন নিজেদের পণ্য হু হু করে ঢোকাচ্ছে পাকিস্তানে। কিন্তু পাকিস্তানি পণ্য সে ভাবে চিনে ঢুকতে পারছে না। পাকিস্তানের বাজারও সস্তা চিনা পণ্যে এমন ভরে যাচ্ছে যে পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা ব্যাপক মার খাচ্ছে। সেই নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। প্রসঙ্গত দিন কয়েক আগেই ভারত থেকে জীবনদায়ী ওষুধ আমদানিতে ছাড়পত্র দিয়েছে চিনও।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব পাকিস্তান। পাক সংসদেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান-সহ অন্য মন্ত্রীরা কড়া সমালোচনা করেছেন। ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিলের বৈঠকের পর ইসলামাবাদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার করে ইমরানের সরকার। এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ-সহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কই ছিন্ন করে ইসলামবাদ।
কূটনৈতিক স্তরের সব পন্থা যাতে আগের মতোই থাকে তার জন্য পাকিস্তানকে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা এবং পুনর্বিবেচনার আর্জিও জানানো হয়েছিল নয়াদিল্লির তরফে। বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আকাশসীমাও বন্ধ। সমঝোতা ও থর এক্সপ্রেস পরিষেবাও বাতিল করে দিয়েছে তারা। পুলওয়ামা হামলার পরে পাক পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লি। ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বড় ধাক্কা খেয়েছিল তখন। এখন কাশ্মীর নিয়ে দড়ি টানাটানিতে বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ।