অতিমারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে জটিল হয়েছে স্নায়ুরোগ, জানাচ্ছেন চিকিৎসক কৌশিক দত্ত

করোনা পরিস্থিতি ছিল বিশ্বের কাছে বিভীষিকার মতো। মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু! চারিদিক জুড়ে যেন হাহাকার পরিস্থিতি! আর যাঁরা করোনাকে জয় করেছেন, তাঁরা এখনও বিভিন্ন শারীরিক ও স্নায়বিক অবস্থায় ভুগছেন। এই অতিমারি পরিস্থিতি সেই সমস্ত চিকিৎসক কর্মীদের জন্যও কঠিন ছিল, যাঁরা সাহসের সঙ্গে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

তবে সেই লড়াই এখনও শেষ হয়নি। বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা কোভিড পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্নায়ুর রোগে ভুগছেন। ঠিক কী কী সমস্যা হচ্ছে তাঁদের? কী ভাবেই বা সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকুরিয়া আমরির নিউরোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট, চিকিৎসক কৌশিক দত্ত।

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, কিছু স্নায়বিক সমস্যার সরাসরি কোভিডের সঙ্গে যোগ রয়েছে। অতিমারি পরিস্থিতিতে যে যে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তাতে রোগীদের শারীরিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছিল। কারও কাছে সাহায্য চাইতে না পারা, চিকিৎসকের সঙ্গে ঠিকমতো পরামর্শ না করা, ক্লিনিকে না যেতে পারার মতো সমস্যাগুলি দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ককে সুদূরপ্রসারী করে তুলেছে।

কোভিডের প্রথম দুই তরঙ্গে যে ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনও স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে পেরিফেরাল স্নায়ুতে মারাত্মক সমস্যা দেখা গিয়েছে। কখনও বা মৃগীর মতো সমস্যা, যা মস্তিষ্কে কাঠামোগত পরিবর্তন করেছে। এই সময়ে স্ট্রোকের সংখ্যাও বেড়েছে রোগীদের মধ্যে। ঠিক কত শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, সেই তথ্য এখনও অসম্পূর্ণ। কারণ তৃতীয় ও চতুর্থ তরঙ্গে আক্রান্তদের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম দিকের তথ্য অনুসারে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কোভিড রোগীর স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে।

চিকিৎসক কৌশিক দত্ত জানাচ্ছেন, স্নায়বিক রোগীর যত দ্রুত চিকিৎসা হবে, সেই রোগী তত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। দেরি হলে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিল হতে থাকবে। যে কোনও স্নায়ুর রোগের ক্ষেত্রেই এ’কথা প্রযোজ্য। এর সঙ্গে চিকিৎসক এও জানালেন যে অনিদ্রা, ভুলে যাওয়া বা চোখ-মুখ কালো হয়ে যাওয়া ইত্যাদির মতো কোনও স্নায়ুর সমস্যা পরিলিক্ষিত হলেই দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

বলা বাহুল্য, অতিমারি পরবর্তী সময়ে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের মতো সমস্যাও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন; প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। চার দেওয়ালের চৌহদ্দিতে এখনও বন্দিদশা কাটছে বহু মানুষের। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে হতাশা আরও বেড়েছে বৈ কমেনি।

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, প্রতিরক্ষার প্রথম অর্থই হল একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, সমর্থন করা। প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য পেশাদারদের সঙ্গে পরামর্শ করা। তাই আপনি যদি কোনও স্নায়বিক বা মনস্তাত্বিক সমস্যার মুখোমুখি হন, তা সে কোভিড পরবর্তী হোক বা না হোক, আমরি ঢাকুরিয়ার বিশেষজ্ঞ, নার্স এবং চিকিৎসকেরা আপনার সেবায় সদা প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.