২৩ শে সেপ্টেম্বর,মোহনপুর।
ঋগ্বেদে আছে ‘কৃষিমিৎ কৃষস্ব’ অর্থাৎ ‘কৃষিকাজ কর ও শুধু কৃষিকাজই কর’। কৃষিকাজ করলে অন্ন-বস্ত্রের অভাব হয় না সেটা আমরা সকলেই জানি। ‘পরজীবী’ মানসিকতা ত্যাগ করে আমাদেরই সকলেরই অল্প অল্প ফসল ফলানো শেখা প্রয়োজন।
এই ভাবনা সমাজের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি কৃষিকাজ করেও যে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেটা বিবেচনা করেই এখন চাষের প্রতি শিক্ষিত বেকারদেরও আগ্রহ বাড়ছে। সেই আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়েই বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর কেন্দ্রের ‘সর্ব-ভারতীয় ফল গবেষণা কেন্দ্র'(ICAR-AICRP on Fruits) প্রকল্পের অধীনে, SC sub-plan-এর অর্থানুকূল্যে গতকাল একদিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল -‘Good Propagules: Production Multiplication and Distribution অর্থাৎ উত্তম মানের চারা উৎপাদন,সংখ্যা বৃদ্ধি ও তার বাণিজ্য-বিপণন। উক্ত শিবিরে অবিভক্ত নদিয়া, অবিভক্ত উওর ২৪ পরগনা, অবিভক্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ দিনাজপুর প্রভৃতি জেলা থেকে ৪৫ জন উদ্যান পালক ও কৃষি উদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন। এই শিবিরে প্রশিক্ষণ দেন প্রফেসর দিলীপ কুমার মিশ্র ও প্রফেসর কল্যাণ চক্রবর্তী।
এই অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধিকর্তা গোরাচাঁদ হাজরা। তিনি তার বক্তব্যে ফল চাষের উপকারিতা, স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে ফল খাওয়া কতটা উপকারী তা তুলে ধরেন সকলের সামনে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ১৩০ গ্রাম করে ফল খাওয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
এরপর বিভিন্ন প্রকারের কলম – কাটা কলম, গুটি কলম, জোড় কলম দেওয়া হাতে কলমে শেখান প্রফেসর চক্রবর্তী। গাছের ডগা ছেদন করা, মাটি লাগানো, সুতো দিয়ে বাঁধার কাজে ড. চক্রবর্তীকে সাহায্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র অরিত্র ঘোষ দস্তিদার ও কুনাল সাহা। সাধারণত জাতভেদে ২৫-৪০ দিনের মধ্যেই কলম থেকে নতুন চারা তৈরি হয়ে যায়। উন্নত মানের চারা থেকে ছাদবাগান তৈরি করে নিজের বাড়িতে প্রয়োজনীয় ফলের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো সম্ভব বলে জানান ড. চক্রবর্তী । টবে শুধু ফুল চাষ না করে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য কিছু ফল-সবজিও চাষ করার কথা বলেন তিনি।
তারপর প্রফেসর মিশ্র ফল চাষের গুরুত্ব,ফল চাষ করে কতটা মুনাফা রোজগার করা যায়,উৎপাদিত ফলে রোগ-পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে উপস্থিত চাষিদের জানান। এছাড়াও Vermicompost কীভাবে তৈরি করতে হয় সে বিষয় নিয়েও প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
আজকের শিবিরের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রকল্প আধিকারিক অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র জানান যে,-“প্রথাগত চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমছে, সেই স্থান দখল করছে ফল চাষ। আমাদের দেশে প্রতি বছর আশি হাজার কোটি টাকার ফল আমদানি করতে হয়। আগ্রহী চাষিরা ফল চাষ করলে নিজেরা যেমন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে তেমনি দেশের অর্থও দেশের মধ্যেই থাকবে। সে-ই সাথে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে।”
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি মূল ফল – আম,কলা,পেয়ারা,কাঁঠাল ও লিচু ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার Minor Fruits(আঁশফল, সবেদা, ড্রাগন, গোলাপ জামুন, চেরি প্রভৃতি)-এর বাগান ঘুরে দেখান এই বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক/গবেষিকা বৃন্দ। কখন কোন ফলের চাষ করা হয়,কী কী সার দেওয়া হয়, কখন ফুল আসে গাছে, কখন ফল পরিনত হয় ইত্যাদি বিষয় তারা উপস্থিত চাষিদের বুঝিয়ে বলেন। এরা হলেন মৌমিতা পান্ডা, রোহন দাস, তৃষিতা ভূঁইয়া,রুকসার পারভিন,তন্ময় মন্ডল ,সঙ্ঘমিত্রা লায়েক, কিরণ রাঠোড়।
এদিনের শিবিরে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন ড.দেবলীনা মাঝি। শিবির শেষে উপস্থিত চাষিদের প্রত্যেককে (একটি করে মৌসম্বী লেবু ও একটি করে নিজের পছন্দের ফল গাছ) দুটি করে ফল গাছ দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রত্যেক চাষিদের তিন কেজি করে Vermicompost, কৃষি সাহিত্য ও কিটস ব্যাগ দেওয়া হয়।
মিলন খামারিয়া।