সৌদি আরবের মাটিতে বিপুল পরিমাণ সোনা এবং তামার মতো আকরিক ‘গুপ্তধনের’ হদিস মিলল। সম্প্রতি সৌদির মদিনা শহরে ওই বিপুল খনিজ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন সে দেশের ভূতাত্ত্বিকরা। এই ‘আবিষ্কারের’ জেরে দেশের খনি শিল্পের চেহারা আমূল বদলে যেতে পারে বলে মনে করছে সৌদি সরকার। তাদের আশা, এ বার কোটি কোটি ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে সৌদিতে।
০২১৫
বৃহস্পতিবার সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) টুইটারে সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভে (এসজিএস)-কে উদ্ধৃত করে এই ‘আবিষ্কারের’ কথা জানিয়েছে । এসজিএসের তরফে ‘সার্ভে অ্যান্ড মিনারেল এক্সপ্লোরেশন সেন্টার’-এর ভূতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, ওই বিপুল সোনা এবং তামার আকরিক মজুদ ছিল মদিনায়। যার হদিস আগে মেলেনি।
০৩১৫
মদিনা শহরের আবা আল-রাহা এলাকায় আকরিক সোনা মিলেছে। অন্য দিকে, ওয়াদি-আল-ফারা অঞ্চলের আল-মাদিক এলাকার চারটি জায়গায় আকরিক তামা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যদিও এই বিপুল খনিজ সম্পদের মোট পরিমাণ কত, তা খোলসা করেনি সৌদি সরকার।
০৪১৫
বৃহস্পতিবার একটি টুইটে সৌদির জিওলজিক্যাল সার্ভে লিখেছে, ‘আমাদের এই আবিষ্কারের ফলে বিশ্বের দরবারে বিনিয়োগের নতুন দরজা খুলে গিয়েছে।’
০৫১৫
আল আরাবিয়া নামে সৌদির এক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি, এই নতুন খোঁজের ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ব্যবসার ক্ষেত্র হিসাবে সৌদিকে বেছে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর জেরে দেশের অর্থনীতির ভোল পাল্টে যাবে বলেও দাবি ওই রিপোর্টে। একই আশা প্রকাশ করেছেন সৌদি প্রশাসন।
০৬১৫
সৌদি প্রশাসনের দাবি, এই বিপুল খনিজ আকরিক সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর এ বার মদিনার ম আবা আল-রাহা এবং আল-মাদিক এলাকায় খনি শিল্পে বিনিয়োগের জোয়ার বইবে।
০৭১৫
সরকারের আশা, মদিনায় ওই এলাকাগুলিতে ৫৩.৩ কোটি ডলারের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে তাতে প্রায় ৪,০০০ কর্মসংস্থান হতে পারে বলেও মনে করছে সরকার।
০৮১৫
আল আরাবিয়ার দাবি, এই বিপুল খনিজ সম্পদের টানে নয়া উচ্চতায় পৌঁছবে সৌদির খনি শিল্প। তার জোয়ারে অনুসারী শিল্পগুলিতেও যে লাভবান হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।
০৯১৫
সরকারি সূত্রের মতে, সৌদির মাটিতে প্রভূত পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। জানুয়ারিতে সে দেশের জিওলজিস্টস কো-অপরেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুলআজিজ বিন লাবনের মতে, সৌদিতে ৫,৩০০-র বেশি খনিজ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।
১০১৫
অধ্যাপক লাবনের পর্যবেক্ষণ, আকরিক সোনা বা তামা ছাড়াও সৌদিতে বিভিন্ন ধরনের ধাতু এবং অধাতব শিলা, আলংকারিক শিলা এবং রত্ন পাথর রয়েছে। সেই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়, এমন ধরনের সামগ্রীও ছড়িয়ে রয়েছে এ দেশে।
১১১৫
মূলত তৈল এবং তৈলজাত দ্রব্যের রফতানির উপর নির্ভর করছে সৌদির অর্থনীতি। সেই সঙ্গে খনি শিল্পের থেকে বিপুল আয়েও যে দেশের কোষাগার ভরে উঠতে পারে, তা মনে করছে সৌদি সরকার। এই শিল্প ক্ষেত্রের প্রসারের লক্ষ্যমাত্রাও নিয়ে তারা।
১২১৫
বস্তুত, তৈল-নির্ভর অর্থনীতির পরিচিতি থেকে বেরোতে ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। গত জুনে আল আরাবিয়ায় একটি সাক্ষাৎকারে সেই পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন তিনি।
১৩১৫
যুবরাজের দাবি, ‘ভিশন ২০৩০’ রূপায়ণের অঙ্গ হিসাবে শুধুমাত্র খনি শিল্পেই ৩,২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি সরকারের। ইতিমধ্যেই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানতে নেমে পড়েছেন সৌদির শিল্প এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রক।
১৪১৫
‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা মারফত তৈল-নির্ভর অর্থনীতির বাইরেও পা রাখতে চাইছেন যুবরাজ। সরকারের লক্ষ্য, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, পর্যটনের মতো এমন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানা, যে সব ক্ষেত্রে বিপুল আর্থিক সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদির অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য এই সব ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ টানতে চায় সরকার।
১৫১৫
দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বিনিয়োগ টানতে বিশ্বের দরবারে নিজেদের রক্ষণশীল সামাজিক ভাবমূর্তিতে বদল আনতে চান যুবরাজ। সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য সরকারি খরচ কমিয়ে তা শিল্পক্ষেত্রে ঢালার লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে সৌদি সরকারের। এই বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলার ফলে যে বিনিয়োগকারীর সৌদির দিকে আগ্রহী হবেন, তা-ও মনে করছে তারা।