এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় কার্যত রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি। সোমবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা চার্জশিটে ইডি-র তদন্তকারীরা আরও জানান, সন্তান দত্তক নিতে চেয়েছিলেন অর্পিতা। সেই বিষয়ে পার্থ তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
চার্জশিটে ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, পার্থের স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরে বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার অর্পিতার নামে হস্তান্তর করা হয়েছিল। পার্থ-ঘনিষ্ঠ এক হিসাবরক্ষক তাঁকে চাপ দিয়ে ওই শেয়ার হস্তান্তর করিয়েছিলেন বলে লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন অর্পিতা। ওই হিসাবরক্ষক তাঁকে বলেছিলেন, ‘পার্থের মেয়ে বিদেশে আছেন। কলকাতায় ফিরলে ওই শেয়ার তাঁর নামে ফেরত দেওয়া হবে। আপাতত অর্পিতার নামে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’
ইডি-র দাবি, সন্তান দত্তক নেওয়ার একটি সুপারিশপত্র পাওয়া গিয়েছে অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে। সেই সুপারিশপত্রে পার্থেরও সই আছে। অর্পিতার ওই দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা অনাপত্তি শংসাপত্র দিয়েছিলেন পার্থ।
তদন্তকারীদের জেরার মুখে পার্থের বক্তব্য, তিনি জনপ্রতিনিধি। কারও সুপারিশপত্রে স্বাক্ষর করাটা তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক বিষয়। আইনজীবীদের একাংশের মতে, বিয়ে না-হওয়ায় অর্পিতার সন্তান নেই। সেই কারণেই হয়তো তিনি সন্তান দত্তক নিয়ে মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ওই সুপারিশপত্র তৈরি করিয়েছিলেন।
অর্পিতার ডায়মন্ড সিটি ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে পাওয়া নগদ প্রায় ৪৯.৮০ কোটি টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার গয়না পার্থের বলে জেলে থাকাকালীন লিখিত বয়ান দেন অর্পিতা। চার্জশিটে তার উল্লেখ করে ইডি জানাচ্ছে, নেপাল, তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং আমেরিকার মুদ্রাও পাওয়া গিয়েছে অর্পিতার ফ্ল্যাটে। জেরায় অর্পিতার দাবি, ওই টাকা বা গয়না তাঁর নয়। বিভিন্ন সময়ে কিছু লোক ওই টাকা রেখে গিয়েছিলেন।
চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতার নামে ৩১টি জীবন বিমার প্রায় দেড় কোটি টাকা বার্ষিক প্রিমিয়াম জমা দিতেন পার্থ। প্রাক্তন মন্ত্রীর মোবাইলের ফরেন্সিক পরীক্ষা করার পরে জীবন বিমার প্রিমিয়াম দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। চার্জশিটে এসএসসি কাণ্ডে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যেরও নাম উঠেছে বলে জানানো হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, পার্থের মোবাইল ফোনের মেসেজে পাওয়া একটি তথ্যে জানা গিয়েছে, মানিক যা-তা ভাবে টাকা তুলেছেন। মানিককে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাদের হেফাজতে থাকাকালীন পার্থের সামনে বসিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। বার বার চেষ্টা করেও এই বিষয়ে মানিকের বক্তব্য জানা যায়নি। ফোন বন্ধ। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর মেলেনি।