এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এ বার গ্রেফতার করা হল এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে। সোমবার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল সুবীরেশকে। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্তোষজনক উত্তর না পাওযায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আধিকারিকরা তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
কিছু দিন আগে নিজের কলকাতার ফ্ল্যাটের ছাদে দাঁড়িয়ে এই সুবীরেশই দাবি করেছিলেন, তাঁর আমলে শিক্ষক নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সে দিন তাঁর বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাট সিল করেছিলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। কিন্তু সুবীরেশ সেখানে ঢুকতে না পেরে সোজা তাঁর ফ্ল্যাটের ছাদে পৌঁছে যান। ছাদে দাঁড়িয়েই কথা বলেন উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে। সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর আমলে একটি নিয়োগেও দুর্নীতি হয়নি। পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। তবে ওটুকুই। সোমবার সেই ছাদ-বিহারী এবং একটিও দুর্নীতিতে জড়িত না থাকা সুবীরেশকে গ্রেফতার করা হল।
উল্লেখ্য, এসএসসি দুর্নীতি মামলায় বাগ কমিটির রিপোর্টে নাম ছিল সুবীরেশের। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেও চার বছর তিনি ছিলেন এসএসসির চেয়ারম্যানের পদে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাঁর জমানায় শিক্ষকদের নিয়োগপত্রও দিয়েছেন। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্তে সুবীরেশের বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযান চালান সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি সুবীরেশকে নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জেরায় সুবীরেশের বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার হওয়া সুবীরেশকে নিজাম প্যালেসেই রাখা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। উল্লেখ্য, নিজাম প্যালেসে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিংহ, এমনকি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও। এর মধ্যে এ বার নিজামে ঢুকলেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশও। অনুমান করা হচ্ছে, নিজাম প্যালেসে এঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে। আরেকটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবীরেশকে মঙ্গলবারই তোলা হতে পারে আদালতে। সেখানেই তাকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করবে সিবিআই।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ অগস্ট নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সুবীরেশের বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সেদিন খবর পেয়েই উত্তরবঙ্গ থেকে সস্ত্রীক সুবীরেশ চলে আসেন কলকাতায়। সিবিআই আধিকারিকরা তাঁর ফ্ল্যাট সিল করে দিয়েছিল। সুবীরেশ আবাসনের ছাদে উঠে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেদিন সুবীরেশ বলেছিলেন, ‘‘আমার অফিসেও তল্লাশি চালিয়ে সিবিআই কিছু পায়নি। তা ছাড়া বাগ কমিটির রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কোনও অভিযোগও নেই। স্ক্যান সাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। হাজার হাজার মার্কশিটে স্ক্যান সাক্ষর ব্যবহার করা হয়। কেউ যদি তার অপব্যবহার করে থাকে, তবে আলাদা ব্যাপার।’’
সোমবার অবশ্য সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবীরেশকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর বক্তব্যে অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। অন্য দিকে, এর আগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ তদন্তকারীদের বলেছিলেন তিনি নিজে নিয়োগের বিষয় কিছু জানতেন না। এ ব্যাপারে অধীনস্থ কর্মচারীদের উপর ভরসা করেছিলেন। সুবীরেশ গ্রেফতার হওয়ায় মনে করা হচ্ছে, নিয়োগ পত্র দেওয়া নিয়ে পার্থ এবং সুবীরেশকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাঁর জমানায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে জানতেই সুবীরেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।