তিন কারণ: রাজস্থান, গুজরাত নয়, কেন মধ্যপ্রদেশের কুনোতেই ঘর পেল আফ্রিকান চিতারা?

আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা নিয়ে আসা হয়েছে ভারতে। মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যান এখন তাদের নতুন ঠিকানা। শনিবার চিতাগুলিকে খাঁচামুক্ত করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কেন এই নির্দিষ্ট উদ্যানকেই বেছে নেওয়া হল আফ্রিকান চিতাদের জন্য?

ভারতে চিতা আনার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল আগেই। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়কালে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, গুজরাত এবং উত্তরপ্রদেশের মোট ১০টি এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। তবে শেষমেশ মধ্যপ্রদেশের কুনোই চিতাদের ঠিকানা হিসাবে নির্বাচিত হয়। ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া আবহাওয়া, খাদ্য, বন্য পশুর সংখ্যা প্রভৃতি নানা বিষয় এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছিল। কোন তিন কারণ রয়েছে কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যানে চিতা রাখার নেপথ্যে?

এক

কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যান ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সাত দশক আগে ভারতে শেষ বার চিতা দেখা গিয়েছিল ছত্তীসগঢ়ের কোরিয়া জেলার শাল বনে। সেই স্থান থেকে কুনো পালপুরের দূরত্ব খুব বেশি নয়।

দুই

চিতা সাধারণত মানুষ মারে না। তবে বিশ্বের দ্রুততম এই প্রাণীর থাকার জন্য অনেকটা জায়গা প্রয়োজন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তারা থাকতে পারে না। চিতার চাই নিরিবিলি এবং বিস্তীর্ণ ঘন সবুজ জঙ্গল। ভারতে তেমন জঙ্গলের সংখ্যা কম। মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর জাতীয় উদ্যান তার মধ্যে অন্যতম। বন্য পশুদের আশ্রয়ের জন্য সেখানকার ২৪টি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তিন

কুনোতে একই সঙ্গে বাঘ, সিংহ, চিতা এবং চিতাবাঘ— চার প্রকার হিংস্র শিকারি প্রাণীকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদের সহাবস্থান যাতে নির্বিঘ্নে সম্ভব হয়, তার জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। ভারতে এই মুহূর্তে সিংহ রয়েছে শুধু গুজরাতে। কুনোতেও তাদের দ্বিতীয় ঠিকানা হতে পারে।

এ ছাড়া এই স্থানে চিতা ছাড়ার নেপথ্যে কিছু আশঙ্কাও বিশেষজ্ঞদের মাথায় কাজ করেছে। কুনো জঙ্গলে প্রচুর চিতাবাঘ রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে এখানে চিতাবাঘের সংখ্যা নয়। আফ্রিকা থেকে আনা চিতাদের সঙ্গে এই পশুগুলির সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, চিতাবাঘগুলি তুলনামূলক শক্তিশালী। তবে চিতাবাঘ আর চিতার সহাবস্থান বিরল নয়।

এই মুহূর্তে কুনো জাতীয় উদ্যানে ২১টি চিতার থাকার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে ৩৬টি চিতার জন্যও জায়গা হবে কুনোতে। প্রাথমিক ভাবে কুনো থেকে চিতার সংখ্যা বাড়িয়ে বাছাই করা অন্যান্য জঙ্গলেও চিতা পাঠানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে সরকারি সূত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.