নবান্নের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে রাজ্যে কোনও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। বিধানসভার ভিতরে হোক বা বাইরে, একই দাবি সরকার পক্ষের। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার উল্টো। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরে গত এক বছরে আত্মঘাতী হয়েছেন ১২২ জন কৃষক। সম্প্রতি এক আরটিআই-এর জবাবে এই তথ্য মিলেছে। তারপরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে।
বিশ্বনাথ গোস্বামী নামক এক ব্যক্তি একটি আরটিআই (তথ্য জানার অধিকার আইন) ফাইল করে পশ্চিম মেদিনীপুরে কৃষক মৃত্যু সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানতে চান। এরই প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশের তরফে একটি তথ্য পেশ করা হয়। যেখানে ২৩টি পুলিশ স্টেশন থেকে এই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ১২২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন এবং ২০২২ সালে এখনও পর্যন্ত কৃষক আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যাটা ৩৪ জন।
কৃষক আত্মহত্যা যে কতটা জ্বলন্ত সমস্যা এই রাজ্যে, তা এই একটি জেলার পরিসংখ্যান দেখলেই কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে। আরটিআই-এর ওই তথ্যে জেলার প্রতিটি থানা এলাকা ধরে ধরে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে সবথেকে করুণ ছবি ঘাটালে। সেখানে গত বছর ৬৩ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। এই বছর এখনও পর্যন্ত হিসেব ১৩। এরপরই রয়েছে গোয়ালতোড় থানা এলাকা। সেখানে গতবছর ১৪ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। এই বছরের হিসেব এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন।
বিরোধীরা নয়, আরটিআই-এর এই উত্তর দিয়েছে এই রাজ্যের সরকারি দফতরই। নথি অনুযায়ী উত্তর দিয়েছে রাজ্যের ‘দ্য স্টেট পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার অ্যান্ড ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ(ডি অ্যান্ড টি), পশ্চিম মেদিনীপুর। আর এখানেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। তাহলে কি রাজ্য সরকার কৃষক আত্মহত্যা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে? কিংবা তথ্যে কি কোনও কারচুপি করা হচ্ছে? নাহলে এনসিআরবি রিপোর্ট (যা রাজ্যের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি) এবং আরটিআই-এর তথ্যের মধ্যে এই বিশাল ফারাক কেন? প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাজ্য সরকার সঠিক তথ্য দেয়নি এনসিআরবিকে? রাজ্য কি কৃষক আত্মহত্যা চেপে যেতে চাইছে? রাজ্যে কি কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ? এত কৃষক আত্মহত্যা করলেও একটি পরিবারও কেন সাহায্য পেল না?