ছেলেধরা সন্দেহে মহারাষ্ট্রের সাংলি জেলায় চার জন সাধুকে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠল উত্তেজিত জনতার বিরুদ্ধে। যদিও সাধুরা ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। এমনকী, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরও তাঁরা কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি বলেই জানিয়েছেন পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে জাট তহসিলের লাভঙ্গা গ্রামে।
ওই ঘটনার সময় উত্তরপ্রদেশের চার জন সাধু একটি গাড়িতে চেপে কর্ণাটকের বিজাপুর থেকে পান্ধারপুর মন্দির শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। সোমবার সেই সময় তাঁদের গাড়িটি একটি মন্দিরে থেমেছিল। মঙ্গলবার পুনরায় যাত্রা শুরুর সময়, তাঁরা একটি স্থানীয় নাবালকের কাছে জানতে চেয়েছিল, কোন রাস্তায় যেতে হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এতে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, ওই চার জন গেরুয়া পোশাকের আড়ালে শিশু চুরি করতে এসেছে। তার জেরেই বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা গাড়ি থেকে ওই সাধুদের নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা শুরু করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ‘এই ঘটনার খবর গুজবের আকারে ছড়িয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন ছেলেধরা ধরা পড়েছে। দলে দলে স্থানীয় বাসিন্দা লাঠি নিয়ে ঘটনাস্থলে জমা হন। তাঁরা ওই সাধুদের মারধর করেন।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় স্থানীয় থানার পুলিশ। তাঁরা উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই সাধুদের রক্ষা করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই সাধুরা উত্তরপ্রদেশের এক সাধু আখাড়ার সন্ন্যাসী। সাধু সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই তাঁরা গাড়িতে চেপে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই এলাকায় এর বেশ কিছুদিন আগে একাধিক শিশু নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই সব নিখোঁজ হওয়া আসলে শিশুচুরির ঘটনা ধরে নিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে ছিলেন।
চার জন সাধুকে শারীরিক নিগ্রহ করার একটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, একটি মুদি দোকানের বাইরে লাঠি হাতে বেশ কয়েক জন স্থানীয় মানুষ ওই সাধুদের মারধর করছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাংলির পুলিশ সুপার দীক্ষিত গেদাম জানিয়েছেন, ‘‘আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে ভাইরাল ভিডিয়োগুলি খতিয়ে দেখে সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক রাম কদম এই ঘটনার নিন্দা করে জানান, মহারাষ্ট্র সরকার সাধুদের সঙ্গে এই ধরনের দুর্ব্যবহার সহ্য করবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এক ভিডিয়ো বার্তায় জানান রাম।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার গাদচিনচালে গ্রামে দুই সাধু এবং তাঁদের গাড়িচালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই এলাকায় গুজব ছড়ায় অঙ্গ পাচারের উদ্দেশ্যে বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এই সময়ে ওই সাধুদের গাড়ি গ্রামে এসে উপস্থিত হলে তাঁদের ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এর ঘটনা নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চার পুলিশ সদস্য ও এক জন সিনিয়র পুলিশকর্তা আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় মোট ১১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।