বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরেও তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে জট পুরোপুরি কাটল না। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে হাসিনার বৈঠকের পর কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন-সহ মোট সাতটি ‘মউ’ সই হলেও সেই তালিকায় নেই তিস্তা। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে হাসিনা বলেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। আশা করব আগামী দিনে বকেয়া বিষয়গুলি নিয়েও সমঝোতায় আসা সম্ভব হবে।’’
তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে ঐকমত্য না হলেও, কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন চুক্তি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণঁ অধ্যায়। কারণ ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির আড়াই দশকেরও বেশি সময় পরে ফের কোনও নদীর জলের ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা করল নয়াদিল্লি এবং ঢাকা। প্রসঙ্গত, ২০২৬-এ গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণ করতে হবে দু’দেশকে। ১৯৯৬-এ যখন ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি হয়েছিল, সে সময়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হাসিনা। তাঁর আশা, মোদীর জমানাতেই ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ ভারতের সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে সমঝোতায় হয়ে যাবে।
বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিন বছর আগেই দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর নজরদারিতে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে নজরে রাখা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা। প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের স্বার্থে একটি পৃথক জলাধার তৈরি করতেও মোদী সরকার উদ্যোগী হতে পারে বলে ওই সূত্রের খবর।
হাসিনার সফরের আগে ভারতের তরফে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর জলের ভাগাভাগি নিয়ে একটি সামগ্রিক বোঝাপড়ার। কুশিয়ারা-চুক্তি সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে যৌথ নদী কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে অন্য নদীগুলির ক্ষেত্রেও সমঝোতা সম্ভব হবে বলে নয়াদিল্লির আশা।
প্রসঙ্গত, অগস্টে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে গঙ্গা, তিস্তা, মনু, মুহুরি, খোয়াই, গুমতি, ধরলা, দুধকুমার এবং কুশিয়ারা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বন্যার সময়ের তথ্য বিনিময় ছাড়াও নদী তীরবর্তী এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা এবং সাধারণ অববাহিকা অঞ্চলের সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা হয় ওই বৈঠকে। সে সময় ঢাকার তরফে অসম এবং সিলেটের মধ্যে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদী থেকে জল প্রত্যাহার করে নেওয়া সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে সই করতে নয়াদিল্লিতে অনুরোধ করা হয়। মঙ্গলবার সই হল সেই চুক্তি।
২০১১ সালে মনমোহন সিংহের সরকার তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তিতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে সায় দেননি। তাঁর আপত্তির কারণ ছিল, তিস্তার জলচুক্তি হলে শুখা মরসুমে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে জলের অভাব দেখা দেবে। এর পর গত এক দশকে তিস্তা-সহ কোনও নদীর জলবণ্টন নিয়ে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। মঙ্গলবার মোদী-হাসিনা বৈঠকে কুশিয়ারা চুক্তিতে অতিক্রম করা গেল সেই ‘অচলাবস্থার’ প্রথম ধাপ।