উইকেটের পিছনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির থাকা না থাকায় কতটা পার্থক্য হতে পারে, সেটা দেখা গেল মঙ্গলবারের দুবাইয়ে।
শেষ দু’বলে বাকি ছিল দু’রান। দাসুন শনকা অফস্টাম্পের বাইরের বলটা ফস্কানোর পরে একটু ইতস্তত করে দৌড় শুরু করে। ঋষভ পন্থ তিনটে স্টাম্প দেখতে পাচ্ছিল। সময় ছিল হাতে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে স্টাম্পে বল মারতে পারল না। উল্টো দিকে বোলার আরশদীপ বলটা ধরেও নন স্ট্রাইকার এন্ডের স্টাম্প ভাঙতে পারল না। বাই-এ দু’রান নিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ভারতকে ছ’উইকেটে হারিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা।
উইকেটকিপার ছিলাম বলে জানি, এখানে আরও একটা কাজ করতে পারত ঋষভ। দু’বল আগেই ডান হাতের কিপিং গ্লাভসটা খুলে ফেলতে পারত। আরশদীপ নিখুঁত জায়গায় বলটা রাখছিল। ওকে মারা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। একটু অভিজ্ঞতা থাকলেই বোঝা যায়, শ্রীলঙ্কা তখন যে করে হোক খুচরো রানের জন্য ছুটবে। মনে আছে, ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এ রকম একটা পরিস্থিতিতে কিপিং গ্লাভস খুলে দাঁড়িয়েছিল ধোনি। শেষ বলে মাথা ঠান্ডা রেখে রান আউট করে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। কিন্তু সেই মাথা ঠান্ডা রাখার লোক এখানে পাওয়া গেল না।
পাকিস্তান ম্যাচে শেষ দিকে একটা ক্যাচ। এই ম্যাচে শেষ ওভারে একটা রান আউট ফস্কানো। যার জেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায়ের মুখে ভারত। রোহিতদের সামনে অঙ্কটা এখন খুবই কঠিন। পাকিস্তানকে পরের দু’টো ম্যাচ (আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা) হারতে হবে। ভারতকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে আফগানিস্তানকে। তার পরে আসবে নেট রান রেটের অঙ্ক। এই অবস্থায় ভারতের ফাইনাল খেলার আশা প্রায় দেখছিই না।
এ দিন আবার পাকিস্তান ম্যাচেরই রিপ্লে দেখলাম যেন। শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল সাত রান। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার ১৪ রান দেওয়ার পরে আবার শেষ ওভারে সেই আরশদীপ। ছেলেটা পাঁচটা বল অসাধারণ জায়গায় রাখল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভারতকে জেতাতে পারল না। ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দু’টো ম্যাচেই দেখলাম, ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বরের অভিজ্ঞতা কোনও কাজে লাগল না। এ দিন স্কোয়ার লেগ, ফাইন লেগকে বৃত্তের মধ্যে রেখে ১৯তম ওভারে বল করছিল। যে কারণে ভুবির লাইনটা খুব প্রত্যাশিত হয়ে পড়ে। অফস্টাম্পের অনেক বাইরে। এই করতে গিয়ে দু’টো ওয়াইড, দু’টো চার দিয়ে দিল। একটা কথা পরিষ্কার। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের উপরে বল করতে না পারলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কিছু করা কঠিন। তা ছাড়া ষষ্ঠ বোলারের ধাঁধারও চটজলদি সমাধান চাই। এ দিন যদি দীপক হুডার বদলে সাহস করে রবি বিষ্ণোইকে খেলাত ভারত, তা হলে হয়তো হারতে হত না।
ম্যাচে আরও একটা জায়গায় পার্থক্য হয়ে যায়। পাওয়ার প্লে। ছ’ওভারে ভারতের রান ছিল ৪৪-২। শ্রীলঙ্কার বিনা উইকেটে ৫৭। রোহিত শর্মা দারুণ আগ্রাসী ব্যাট করলেও সে ভাবে কাউকে সঙ্গে পায়নি। উল্টো দিকে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারই ১৪০-এর উপরে স্ট্রাইক রেট রেখে গেল। পাথুম নিসঙ্ক (৩৭ বলে ৫২) এবং কুশল মেন্ডিস (৩৭ বলে ৫৭) প্রথম উইকেটে ১১.১ ওভারে তুলে দিল ৯৭ রান, যা ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি পেসার দিলশান মদুশঙ্কা শুরুতে ও শেষে অসাধারণ বল করল। ভারতীয় বোলাররা আবার প্রথম ১০ ওভারে চাপই তৈরি করতে পারেনি।
ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল লেগস্পিনার যুজ়বেন্দ্র চহাল এবং অফস্পিনার আর অশ্বিন। শেষ দু’ওভারে তিন উইকেট তুলে নেয় চহাল। অশ্বিন একটি। ওই সময়ে সাত বলে এক রান দিয়ে তিন শিকার ছিল চহালের। ভারতীয় স্পিন জুটির সামনে ১৩ রানে পড়ে যায় চার উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা ঘুরছে। কিন্তু ভানুকা রাজাপক্ষে (১৭ বলে অপরাজিত ২৫) এবং শনকা (১৮ বলে অপরাজিত ৩৩) মিলে ম্যাচটা জিতিয়ে দিল শ্রীলঙ্কাকে।
ভারতীয় ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শূন্য রানে বিরাট কোহলির স্টাম্পটা যখন ছিটকে গেল, তখন স্কোর দু’উইকেটে ১৩। বিরাটকে ওই শট খেলতে দেখলে আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে এর আগের ম্যাচে ও রকম ব্যাটিং করার পরে। তিন ওভারের মধ্যে দু’উইকেটে ১৩। এই অবস্থায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে রোহিত।
কিন্তু ভারতের সমস্যা হয়ে গেল রোহিত উপযুক্ত সঙ্গী না পাওয়ায়। সূর্যকুমার যাদব (স্ট্রাইক রেট ১১৭.২৪), হার্দিক পাণ্ড্য (১৩০.৭৬), ঋষভ পন্থ (১৩০.৭৬)— কেউই আসল সময়ে দ্রুত রানটা তুলতে পারল না। যে কারণে ১৫-২০ রান কম থেকে গেল ভারতের।
আর মাস দেড়েক পরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতের পেস আক্রমণ আর রবীন্দ্র জাডেজার পরিবর্তে ষষ্ঠ বোলার কে হবে, তা ঠিক করে নিতে হবে। যশপ্রীত বুমরার সঙ্গী হিসেবে মহম্মদ শামির কথা ভাবতেই হবে। অস্ট্রেলিয়ায় মিডিয়াম পেসে বল করলে ব্যাটসম্যানরা কিন্তু সেই বোলারকে শেষ করে দেবে।