বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে চারদিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। আজ শুনানির শুরুতেই অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। তার বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি অনুব্রত মণ্ডলকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বলে দাবি করেন। আর ভরা এজলাসে অনুব্রত মণ্ডল বিচারককে জানান, তিনি সবসময় অসুস্থ থাকেন। তবে তার পরেও মেলেনি জামিন। বরং খারিজ হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কেমন সওয়াল–জবাব হয়েছিল? এদিন শুনানির শুরুতেই অনুব্রতের আইনজীবী বলেন, ‘আমার মক্কেলকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁর সিওপিডি–সহ নানা অসুস্থতা রয়েছে। ওঁর বিরুদ্ধে দুটো অভিযোগ তোলা হয়েছে। এক, গরু পাচার কাণ্ডে প্রভাব খাটানো। দুই, এনামুল হকের সঙ্গে ওঁর দেহরক্ষী ফোনে যোগাযোগ। তবে দুটো অভিযোগের একটিরও কোনও প্রমাণ নেই। আর রাইস মিলটি ওঁর শ্বশুর উপহার দিয়েছিলেন বহু বছর আগে। আর আমার মক্কেলের অ্যাকাউন্টে যে অর্থের কথা বলা হয়েছে, সেটা ওঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর পাওয়া এলআইসির টাকা।’
কী বললেন সিবিআইয়ের আইনজীবী? সিবিআইয়ের কৌঁসুলি পাল্টা দাবি করেন, ‘কোটি কোটি টাকা অনুব্রত মণ্ডলের নয়তো ওঁর মেয়ের। অথবা ওঁর পরিচিতের অ্যাকাউন্ট থেকে সরানো হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রমাণ হাতে আসার পর ওঁকে কথা বলার অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওঁকে বারবার ডাকা হয়েছে। কিন্তু উনি প্রভাবশালী। তাই বাধা দিয়েছেন। ওঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগ রয়েছে। ভুয়ো প্রেসক্রিপশন লিখতে চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওঁর দেহরক্ষী গরু পাচারের মধ্যস্থতাকারী। এটা একটা চক্র।’
এই সওয়াল–জবাব চলাকালীন বাদানুবাদ শুরু হয়। অনুব্রতর আইনজীবী সোচ্চার হয়ে বলেন, ‘বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও জবাব দেয়নি সিবিআই। পরদিন আবার নোটিশ পাঠানো হয়। সুতরাং সিবিআইয়ের স্বচ্ছতা নষ্ট হয়েছে। ১৪ দিনের বিশ্রামের কথা মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়। সিবিআই কী ব্যবহার করেছে সেটা দেখা উচিত। অনুব্রত পালিয়েও যাননি, গা–ঢাকাও দেননি। এমনকী সিবিআইকে এড়াননি। একবার উনি সুস্থ ছিলেন, তখন নিজেই সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন।’
বিচারক অনুব্রতকে কী জিজ্ঞাসা করেছিলেন? এদিন শারীরিক অসুস্থতার প্রসঙ্গ উঠতেই বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার শরীর কেমন আছে?’ উত্তরে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘শরীর বরাবর অসুস্থ। কাল জ্বর ছিল। কাশি হয়েছে। সবসময়ই অসুস্থ থাকি।’ তখন বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘চিকিৎসকদের বলেছিলাম, তাঁরা আপনাকে দেখছেন তো?’ জবাবে অনুব্রত বলেন, ‘ওষুধ খাচ্ছি।’ বিচারক বলেন, ‘অসুবিধা হলে চিকিৎসককে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না।’ অনুব্রত বলেন, ‘আচ্ছা।’ এরপরই ইডির আইনজীবীর তোলা অসহযোগিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুব্রতর আইনজীবীর যুক্তি, ‘যদি আমার মক্কেল সহযোগিতা নাই করে থাকে, তা হলে কি প্রমাণ যে তিনি এই চার দিনে সহযোগিতা করবেন?’