উনি কোনও রাজনৈতিক নেতা বা কোনও সেলিব্রেটি নন। তবে ওনার বয়স পার করেছে একশোর গণ্ডি। শতায়ু সেই বৃদ্ধাকে পালকিতে করে নিয়ে এসে তাঁকে দিয়েই উত্তোলন করা হলো জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এমনই অভিনব অনুষ্ঠান দেখল কোলাঘাট। কোলাঘাটের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সংকেত ক্লাবের পক্ষ থেকে এই বিশেষ আয়োজন করা হয়।
১০২ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধার নাম লক্ষ্মীবালা মাইতি। ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর। একটি কৃষক পরিবারের গৃহবধূ ছিলেন তিনি। এরপর একে একে স্বাধীনতার পঁচাত্তরটি বছর কেটে গেল। তা সবই নিজের চোখে দেখেছেন। লক্ষ্মীবালার ৬ ছেলে মেয়ে ১৮ টি নাতি-নাতনি রয়েছে। যার মধ্যে ৭ টি নাতজামাই ও ৭টি নাতবৌ রয়েছে। এত বড় পরিবারের এখনও বটবৃক্ষের মতো রয়েছেন লক্ষ্মীবালা। হাঁটতে গিয়ে নুইয়ে পড়লেও মানসিকভাবে এখনও তিনি শক্ত সবল রয়েছেন। কোলাঘাট নতুন হাটের বাজারে সবজি বিক্রি করে এখনও তিনি সংসার চালান। আর তৎকালীন ভারতের গল্প তো প্রায়ই তাঁর মুখে শোনা যায়। মনে করিয়ে দেন- ১৬ আনায় রূপনারায়নের ১৬ টি ইলিশ, ৭ আনায় একমন ধান, ৩ টাকায় সোনার নাকছাবি, সারাদিন গতর খাটিয়ে মজুরি দু-আনা আয় এইসব কথা।
আজ সকালে প্রথমে লক্ষ্মীবালাকে কোলাঘাট রাধামাধব মন্দিরে চন্দন, উত্তরীয় ফুলের মালায় বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর চাপানো হয় সুসজ্জিত চার বেয়ারার পালকিতে। সঙ্গে ছিল অসংখ্য জাতীয় পতাকা ও দেশমাতৃকার জয়ধ্বনি। ছিল খোল করতাল শঙ্খধ্বনী সহযোগে হরিনাম সংকীর্ণতের দল। এরপর সংকেত ক্লাব প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন শতায়ু লক্ষ্মীবালা মাইতি। সংস্থার পক্ষে শ্যামল আদক জানান, ‘স্বাধীনতা বর্ষের এবার হল ঐতিহাসিক বছর। এবার এই প্রবীনতম মাতৃসমাকে দিয়ে পতাকা উত্তোলন করিয়ে আমরা অমর শহিদ এবং দেশমাতৃকার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম।’