CWG 22: কমনওয়েলথের পরই বন্ধুত্বে ‘ইতি’, এবার মুখোমুখি লড়াই ২ সোনাজয়ী জেরেমি ও অচিন্ত্যের

এই মুহূর্তে ভারতীয় ভারোত্তোলনের দুই পোস্টার বয় অচিন্ত্য শিউলি এবং জেরেমি লালরিননুঙ্গা। সদ্য শেষ হওয়া বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে দুজনেই ভারতের হয়ে সোনা জিতেছেন। খেলার বাইরেও এই দুই ভারোত্তোলকের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে এবার কি সেই সম্পর্কেই চিড় ধরতে পারে! দুজনের স্পষ্ট বক্তব্য এর কোনও সুযোগই নেই। প্রসঙ্গত যে ৬৭ কেজি বিভাগে লড়াই করেন জেরেমি সেই বিভাগটি তুলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক ওয়েটলিফটিং ফেডারেশন। ফলে ১৯ বছর বয়সি জেরেমিকে এবার থেকে লড়তে হবে ৭৩ কেজি বিভাগে। উল্লেখ্য এই বিভাগেই আবার চিরাচরিতভাবে লড়েন অচিন্ত্য। ফলে অলিম্পিক গেমসের জন্য ‘সম্মুখ সমরে’ নামতে হবে এই দুই বন্ধুকে।

অচিন্ত্য অবশ্য মনে করছেন এটা কোনও সমস্যা নয়। বরং দুজনকে আরও ভালো করতে এটা উৎসাহিত করবে। তার মতে বেশ মজাও হবে। আমরা একসঙ্গে অনুশীলন করব। এবার থেকে আবার আমরা একে অপরের বিরুদ্ধেও লড়াই করব। জেরেমির মতে এটা একটা খেলা মাত্র। আমরা দুজনেই এখানে ভালভাবে জিততে চাই। যে ভালো পারফরম্যান্স করবে সেই অলিম্পিকে সুযোগ পাবে। আমাদের বন্ধুত্ব একরকমই থাকবে। তবে জেরেমি জানিয়েছেন খেলার ক্ষেত্রে আমি যদি আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধেও খেলি তাহলেও নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করব।

সদ্য শেষ হওয়া বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভারতকে ভারোত্তোলন থেকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছেন অচিন্ত্য শিউলি এবং জেরেমি লালরিননুঙ্গা। তবে ভারতের এই দুই ওয়েটলিফ্টারের মধ্যে সেইভাবে কোনও তুলনাই করা চলে না। একদিকে জেরেমি যখন অফুরন্ত এনার্জির ভাণ্ডার তখন অচিন্ত্য শিউলি অনেকটাই রিজার্ভ। জেরেমি যখন একদিকে ইংলিশ সিনেমা দেখতে ভালবাসেন তখন অচিন্ত্যর কাছে প্রিয় হিন্দি ছবি। ভারতীয় পুরুষ ওয়েটলিফ্টিংয়ের জন্য এই দুই নবীন প্রতিভাবান ভবিষ্যতে তারকা হয়ে উঠবেন বলেই আশা বিশেষজ্ঞদের।

প্রসঙ্গত পাতিয়ালার জাতীয় ক্যাম্পে এই দুই তরুণের মেন্টর হলেন দুবছর কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী সতীশ শিবালিঙ্গম। তার এই দুই ছাত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন ‘তারা নিঃসন্দেহে ভারতের ভবিষ্যত। আমরা পুরুষদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত কোনও মেডেল পাইনি। আশা করছি এই দুই লিফ্টারের হাত ধরে সেই খরা কাটবে। জেরেমি দুই বছর আগে শেষবার তার বাড়ি গিয়েছে। দেউলপুরে অচিন্ত্যর মাটির বাড়ির ছাদ উড়ে যাওয়ার পরেও ও বাড়ি ফেরেনি। এটা বুঝিয়ে দেয় ওদের জয়ের খিদেটা।’

সম্প্রতি জেরেমি সোনা জিতে ফিরেছিলেন আইজলে। আইজল এয়ারপোর্ট থেকে জেরেমির বাড়ির দূরত্ব মাত্র ৪৫ মিনিটের। সেদিনের জনজোয়ারে ওই পথ পেরতে তাদের সময় লেগেছিল ৩ ঘণ্টা। জেরেমি বলেন ‘আমাকে এইভাবে স্বাগত জানানো হবে তা আশা করিনি। অসাধারণ মুহূর্ত ছিল। আমি বাড়ি পৌঁছই তারপর ইউ টার্ন নিয়ে আবার দিল্লি ফিরে যাই।’ (হাসি)

২০ বছর বয়সি অচিন্ত্য জানিয়েছেন ‘আমাকে খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি অপেক্ষা করেছি দারিদ্রতা থেকে আমার পরিবারকে টেনে তুলতে। আমি আমার ভাইকে একটা স্থায়ী চাকরি পেতে সাহায্য করতে চাই। আমি চাই আমার মা যাতে করে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে আমি যে পাঁচ লাখ টাকাটা পেয়েছি তা আমি ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করব। কারণ আমাদের মাটির বাড়িটা সারাতে গিয়ে ভাইকে বেশ কিছু লোন করতে হয়েছিল। এই মেডেলটা আমার কাছে অনেক কিছু।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.