কিছুক্ষণ আগে একজন সাংবাদিক আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। কথাবার্তার মাঝে তিনি প্রশ্ন করলেন যে স্বাধীনতা আন্দোলনে সঙ্ঘের কী ভূমিকা ছিল? সম্ভবত তিনিও সঙ্ঘের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। আমি সরাসরি তাঁর উত্তর না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম যে আপনি স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখ্য নেতা হিসাবে কার নাম জানেন? সাংবাদিকটি কিন্তু এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তিনি প্রথমে কিছু বলতেও পারেননি। তারপর ধীরে ধীরে সন্ধিহান গলায় বললেন , – মহাত্মা গান্ধী আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন! আমি জিজ্ঞেস করলাম – লাল-বাল-পালের কি এখানে কোন ভূমিকাই নেই? স্বাধীনতা আন্দোলনে সুভাষচন্দ্রের ভূমিকা কি ছিল না? তাঁরা কোন উত্তর দিতে পারলে না। তারপর জিজ্ঞেস করলাম – গান্ধীজীর নেতৃত্বে কয়টি সত্যাগ্রহ হয়েছিল? তাঁরা এটারও উত্তর দিতে পারল না। আমি উত্তর দিলাম – তিনটি, যথা: ১৯২১-১৯৩০ এবং ১৯৪২। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ডাক্তারজীর মৃত্যু হয় ১৯৪০ সালে। আমি বললাম যে ডক্টর হেডেগেওয়ার RSS প্রতিষ্ঠার আগে এবং পরে সত্যাগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন এবং এর জন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়েছিল।
উপরের ঘটনাটি এই কারণেই উল্লেখ করলাম যে , কিভাবে আমাদের ইতিহাস কে পরিকল্পিতভাবে অর্ধসত্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে। ভারতের জনগণকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং হচ্ছে যে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল শুধুমাত্র কংগ্রেস এবং তাদের করা “কেবলমাত্র” ১৯৪২ সালের সত্যাগ্রহ বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণে এবং কংগ্রেস নেতারা ব্যতীত অন্য কোনো বিপ্লবী স্বাধীনতার জন্য কিছুই করেনি!
অবশ্যই , এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে সত্যাগ্রহ‚ চরকা এবং খাদির মাধ্যমে গান্ধীজি সারা ভারতের সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য একটি সহজ এবং সরল মার্গদর্শন করিয়েছিলেন। আর লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর প্রদর্শিত পথে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ করেছিলেন। কিন্তু সব কৃতিত্বই শুধুমাত্র একটি আন্দোলন বা একটি দলকে স্বীকৃতি দেওয়া অর্থ হল – ইতিহাস বিকৃত করা এবং বাকি সকলের স্বাধীনতার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করে সেই মহান ব্যক্তিদের অপমান করা।
আপনি যদি সঙ্ঘের কথা বলতে চান তবে, আপনাকে ডাক্তার হেডেগেওয়ারের কথা থেকে শুরু করতে হবে। কেশব বলিরাম হেডেগেওয়ার ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নাগপুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছিল ১৯০৪- ১৯০৫ সাল থেকে। এর আগে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের তেমন পরিবেশ সেখানে ছিল না বা বলতে পারেন তৈরি হয় নি। তবুও যখন ১৮৯৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনারোহনের জন্য স্কুলে স্কুলে যে মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছিল তখন সেটি শিশু হেডেগেওয়ার না খেয়ে আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেন। সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে তাঁর হৃদয়ে অত্যন্ত ঘৃণা শিশুকাল হতেই লালিত হয়েছিল। ১৯০৭ সালে রিস্লে সার্কুলারের নামে বন্দেমাতরম্ সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ করার যে অন্যায় আদেশ জারি হয়। সে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে কেশব তাঁর নীলসিটি স্কুলে নিজের ক্লাসের সমস্ত ছাত্রদের নিয়ে সরকারি পরিদর্শকের সামনে বন্দেমাতারাম্ স্লোগান দিয়েছিলেন। ফলে তিনি বিদ্যালয়ে কমিটির রোষের মুখে পড়েন। তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়।
মুম্বাইতে চিকিৎসা শিক্ষার সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তিনি বিপ্লবের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বঙ্গ তথা কলকাতাকেই বেছে নিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়ার জন্য। কলকাতায় এসে তিনি বিপ্লবীদের সংগঠন অনুশীলন সমিতির বিশ্বস্ত সদস্য হন।
১৯১৬ সালে ডাক্তারি পাশ করে তিনি নাগপুরে ফিরে যান। সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিখ্যাত সব নেতারাই ছিলেন বিবাহিত এবং গৃহস্থ! প্রত্যেকের কাছেই তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য উপার্জনের কিছু না কিছু উপায় ছিল। তবুও একই সাথে তাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনেও নিজেদের অমূল্য অবদান রেখেছিলেন। হয়তো ডাক্তারজীও তাদের মতই ভাবতে পারতেন। কিন্তু তিনি ভাবেন নি। মোটা অর্থ বা অবিদ্যা সংসারের মায়া কাটিয়ে ডাক্তারি প্র্যাক্টিস এবং বিয়ে – দুটোই না করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর হৃদয়ে স্বাধীনতা পাওয়ার নিমিত্ত এত গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, তিনি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করার সময়ই পেতেন না। ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সময় নষ্ট না করে তিনি তাঁর সমস্ত শক্তি – সময় ও সামর্থ্য জাতির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং স্বাধীনতার সব ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন।
লোকমান্য তিলকের প্রতি তাঁর মনে ছিল অগাধ সম্মান , শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস। তিলকের নেতৃত্বে নাগপুরে ১৯২০ সালে কংগ্রেস অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে ডক্টরজী এবং ডক্টর হর্ডিকরকে সমস্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই কাজের জন্য ১২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত হয়। সেই সময় ডাক্তারজী ছিলেন কংগ্রেসের নাগপুর সিটি ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক। সেই অধিবেশনে তিনি পাশ করানোর জন্য কংগ্রেস রেজুলেশন কমিটির সামনে এমন একটি প্রস্তাব রেখেছিলেন যাতে উল্লিখিত ছিল – কংগ্রেসের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভারতকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে একটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্র স্থাপন করা এবং বিশ্বকে পুঁজিবাদের কবল থেকে মুক্ত করা। এর নয় বছর পর ১৯২৯ সালে লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস স্বাধীনতার পূর্ণ প্রস্তাব পাস করে। এতে আনন্দিত হয়ে ডক্টরজী ২৬শে জানুয়ারি ১৯৩০ তারিখে কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানানোর জন্য সংঘের সমস্ত শাখা কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সংঘের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯২৫ সাল থেকে। নাগপুর ছিল তিলকপন্থীদের কাছে দুর্গ বিশেষ। ১৯২০ সালের পয়লা আগস্টে লোকমান্য তিলকের মৃত্যুর ফলে নাগপুরে সমস্ত তিলকপন্থীরা ভীষণ ভেঙ্গে পড়েন। এরপরে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২১ সালে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য আর মুসলমানদের মনকে ভারতবর্ষের সাথে যুক্ত করার লক্ষ্যে গান্ধী খিলাফত আন্দোলনের প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এই খিলাফত আন্দোলন ছিল শুধুমাত্র তুরস্কের খলিফার ব্রিটিশদের কাছে পরাজয়ের বিরুদ্ধে। ভারতের সাথে এর ন্যূনতম কোন সংস্পর্শ ছিল না। অনেক কংগ্রেস নেতা এবং জাতীয়তাবাদী মুসলমান এই আন্দোলন সম্পর্কে আপত্তি জানান। নাগপুর তিলকপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি হওয়ার কারণে এই খিলাফতের তেমন কোন প্রভাব সেখানে পড়েনি। সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার জন্য ডাক্তারজী আন্তরিকভাবেই আন্দোলনের অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অবস্থান থেকে দূরে সরে গিয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় এবং তিনি এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২১ এর ১৯শে আগস্ট থেকে ১৯২২ এর ১১ জুলাই পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। তাঁর মুক্তির পরে ১২ই জুলাই নাগপুরে তাঁর সম্মানে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রাদেশিক নেতাদের সাথে কংগ্রেসের অন্যান্য জাতীয় নেতারা যেমন – হাকিম আজমল খান, পন্ডিত মতিলাল নেহেরু, রাজা গোপালাচারী, ডঃ আনসারী, বিটঠলভাই প্যাটেল প্রমুখ তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকার বোঝার পরেও একটি প্রশ্ন তাকে ক্রমাগত তাড়া করে বেড়াত – ৭ হাজার মাইল দূর থেকে আগত মুষ্টিমেয় ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা কিভাবে এই বিশাল দেশকে শাসন করতে পারল? নিশ্চয়ই আমাদেরই কোন দোষের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। তার নজরে আসে যে আমাদের সমাজ আত্মবিস্মৃত জাতি। সমাজ বর্ণ -প্রদেশ – ভাষা – উপভাষা, রীতিনীতি ইত্যাদির মত অনেক কিছুতে বিভক্ত। এ সমাজ অযৌক্তিক এবং অনেক খারাপ নীতির নিয়ম দিয়ে পরিপূর্ণ যার সুযোগ নিয়েই ব্রিটিশরা এখানে শাসন করতে পারছে। স্বাধীনতা পাওয়ার পরেও যদি সমাজ একই থাকে তাহলে ভবিষ্যতেও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। তিনি বলতেন যে, “নাগনাথ যাবে তো সাম্পনাথ আসবে”। তাই আমাদের জাতীয় সমাজকে গর্বিত- জাগ্রত -সংগঠিত এবং সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে জাতীয় গুনাবলী সম্পন্ন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মৌলিক একটি কাজ। এ কাজটি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে করতে হবে অরাজনৈতিক ভাবে। এর জন্য ১৯২৫ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পরেও সকল রাজনৈতিক বা সামাজিক নেতৃত্ব এবং স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে তার সমান ঘনিষ্ঠতা ও নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
১৯৩০ সালে গান্ধীর ডাকে গুজরাটের ডান্ডিতে লবণ সত্যাগ্রহ আইন অমান্য আন্দোলন সূচিত হয়। ১৯২৯ সালের নভেম্বরে সংঘাচলকদের তিন দিনের বৈঠকে এই আন্দোলনকে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘের নীতি অনুসারে ব্যক্তিগতভাবে ডক্টর হেডেগেওয়ার অন্যান্য স্বয়ংসেবক দের সাথে এই সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং যাতে সংঘের কাজ নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে, তার জন্য তিনি তার পুরনো বন্ধু ডাক্তার পরাঞ্জপেকে সরসঙ্ঘচালক পদের দায়িত্ব দেন। বাবাসাহেব আপ্তে এবং বাপুরাও ভেদীকে শাখা সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথমদিকে একুশে জুলাই তিন চার হাজার মানুষ এই সত্যাগ্রহে তাঁর সঙ্গে ছিলেন । ওয়ার্ধা, ইয়াবাত্মল হয়ে মিছিল পুসদ পৌঁছালে ১০ হাজার লোক সত্যাগ্রহীদের সাথে যুক্ত হয়। এই সত্যাগ্রহের ফলে তিনি নয় মাস কারাবরণ করেন। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় সরসঙ্ঘচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করে আবারো সঙ্ঘের কাজে ফিরে আসেন।
১৯৩৮ সালে ভাগানগরে (হায়দরাবাদে) হিন্দুদের উপর নিজামের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হিন্দু মহাসভা এবং আর্য সমাজের পৃষ্ঠপোষকতায ভাগানগর নিঃশস্ত্র প্রতিকার মন্ডল নামে একটি সত্যাগ্রহের আহ্বান করা হয়েছিল। যেখানে স্বয়ংসেবকরা অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়েছিলেন। ডাক্তার জী সানন্দে তাদের অনুমতি দিয়েছিলেন। যাঁদের নিকট শুধুমাত্র সঙ্ঘর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল তাঁদের সংগঠনের কাজ দেখার জন্য বাইরে থাকতে বলা হয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে যাঁরা সত্যাগ্রহে অংশ নিতে চান তাদের অবশ্যই ব্যক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে হবে। ভাগনগর সত্যাগ্রহে সঙ্ঘ অংশ নিয়েছে এমন কথা বারবার উঠে আসলে তিনি চিঠি পাঠিয়ে লিখেছিলেন যাতে প্রশংসা পত্রে সঙ্ঘের নাম উল্লেখ করে না হয়।
রাজনৈতিক আন্দোলনের অবশ্যই গুরুত্ব আছে কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের তাৎক্ষণিক-নৈমিত্তিক এবং সংঘাতময় প্রকৃতির সাথে সঙ্ঘের অবিচ্ছিন্ন-অবিরত এবং গঠনমূলক প্রকৃতির পার্থক্য বুঝতে পেরে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েও চেয়েছিলেন সঙ্ঘের কাজ যেন চিরন্তন থাকে। সেজন্য নিজে জঙ্গল সত্যাগ্রহে যাওয়ার সময় ডক্টর পরাঞ্জপেকে সরসঙ্ঘচালকের দায়িত্ব অর্পণ করে নিজে একজন ব্যক্তি হিসেবে বহু স্বয়ংসেবকদেরর সাথে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট মুম্বাইয়ের গোহালিয়ার ট্যাংক ময়দানে কংগ্রেস অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার ডাক দিলেন। দ্বিতীয় দিন থেকে সারাদেশে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং জায়গায় জায়গায় নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হয়।
বিদর্ভের বাবলী (অমরাবতী), আস্টি ( ওয়ার্ধা) আর চিমুর ( চন্দ্রাবতী ) – তে বিশেষ আন্দোলন হয়েছিল। চিমুরের খবর বার্লিন রেডিও পর্যন্ত পৌঁছে গেছিল। সেখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতা কারেকার আর সঙ্ঘের অধিকারী দাদা নাইক, বাবুরাও বেগডে আর আন্নাজী সিরাস। এই আন্দোলনে ব্রিটিশদের গুলিতে একমাত্র মৃত্যু হয়েছিল এই সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক বালাজি রায়পুরকরের। কংগ্রেস, শ্রী তুকদো মহারাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শ্রী গুরুদেব সেবা মন্ডল এবং সংঘের স্বয়ংসেবকটা একসাথে মিলে ১৯৪৩ এর সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিল। এই আন্দোলনে ১২৫ জন স্বয়ংসেবক এর বিচার হয় এবং অসংখ্য স্বয়ংসেবককে কারারুদ্ধ করা হয়।
ভারতজুড়ে চলা এই আন্দোলন জায়গায় জায়গায় সঙ্ঘের প্রবীণকর্মী এবং প্রচারকরা তাদের নিজস্ব প্রেরণায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। এমন কিছু কর্মী যারা জায়গায় জায়গায় অন্যান্য স্বয়ংসেবকদের সাথে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন রাজস্থানের জয়দেব জী পাঠক, যিনি পরে বিদ্যাভারতীতে যুক্ত হন। বিদর্ভের ডক্টর আন্না সাহেব দেশপান্ডে। যশপুর (ছত্তিশগড়) এর রমাকান্ত কেশব (বালাসাহেব) দেশপান্ডে যিনি পরে বনবাসী কল্যাণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লির শ্রী বসন্তরাও ওক যিনি পরে, দিল্লির প্রান্ত প্রচারক হয়েছিলেন। পার্টনার একজন বিখ্যাত আইনজীবী কৃষ্ণ বল্লভ প্রসাদ নারায়ণ সিং (বাবুয়াজী), যিনি পরে বিহারের সঙ্ঘচালক হন। খোদ দিল্লিতে ছিলেন শ্রী চন্দ্রকান্ত ভট্টাচার্য , যাঁর পায়ে গুলি লেগেছিল এবং তা আর বের করা যায়নি। পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত কবি এবং সঙ্ঘের বহু গানের সুরকার ছিলেন। পূর্ব উত্তর প্রদেশে ছিলেন মাধবরাও যিনি পরে একজন প্রান্ত প্রচারক হয়েছিলেন এবং মধ্যপ্রদেশের উজ্জাইনে গঙ্গাধর ভাই কস্তুরের অবদান রয়েছে , যিনি পরের প্রচারক হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের দমন পীড়নের পাশাপাশি একদিকে সত্যাগ্রহ চলেছিল অন্যদিকে অনেক আন্দোলনকারিরা গুপ্ত অবস্থান করে আন্দোলনকে গতি ও দিকনির্দেশনা দিতে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এই সময় আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কর্মীদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া অনেক বিপজ্জনক ছিল। ১৯৪২ সালের আন্দোলনের সময় আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা অরুনা আশফ আলী দিল্লির প্রাদেশিক সঙ্ঘ চালক হংসরাজ গুপ্তের বাড়িতে থাকতেন এবং মহারাষ্ট্রে সাতারার আন্দোলনকারী নানা পাটেলকে অযোধ্যার সংঘচালক পন্ডিত সাতভালেকার তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এরকম আরো অনেক অনেক উদাহরণ আছে। সেই সময় এমন সমস্ত ঘটনার দলিল রাখার কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না।
ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডেগেওয়ার ডাক্তারি পেশা থেকে অব্যহতি নিয়ে নিজেকে উৎস্বর্গ করেছিলেন শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার নিমিত্ত। ডক্টরজীর জীবন অধ্যায়ন করলে দেখা যাবে যে শৈশব থেকে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তাঁর জীবন ছিল একমাত্র তাঁর দেশ ও দেশের স্বাধীনতার জন্য বলি প্রদত্ত। সেজন্য তিনি সমাজকে দোষ মুক্ত-সদাচারী ও জাতীয় ভাবনা থেকে জাগ্রত করে সংগঠিত করার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি সঙ্ঘের অঙ্গীকারেও ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত লক্ষ্য হিসাবে ছিল হিন্দু রাষ্ট্র ভারতকে স্বাধীন করা।
ডাক্তারজীর দৃষ্টি – সঙ্ঘ দৃষ্টি :
ভারতের মানুষ সব সময়ই যেকোনো চরমপন্থা বেছে নিতে পছন্দ করে। এমনকি ডাক্তারজীর সময়েও সমাজ ছিল কংগ্রেস- বিপ্লবী, তিলক-গান্ধী, সহিংস-অহিংস, হিন্দু মহাসভা-কংগ্রেস ইত্যাদি বিভেদে বিভক্ত। এঁদের নিজের মধ্যে বাক বিতণ্ডা এমনকি হাতাহাতি করার উদাহরণও আছে। অনেক সময় পারস্পরিক মতপার্থক্যের কারণে তাঁরা এমনভাবে নিজেদের বিরোধিতা করত যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে বিরুদ্ধে নয়, বদলে তাঁদের দেখা যেত নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে। ১৯২১ সালে লোক নায়ক আনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাদেশিক সভায় বিপ্লবীদের নিন্দা করার প্রস্তাব আসতে চলেছিল। কিন্তু ডাক্তারজী তাঁদের বুঝিয়েছিলেন যে বিপ্লবীদের পথে আপনাদের বিশ্বাস নাও থাকতে পারে কিন্তু তাঁদের দেশপ্রেমে সন্দেহ করা উচিত নয়। জীবনে কোন সংকীর্ণ পছন্দ-অপছন্দ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন ও নীতি কিংবা তিলক বনাম গান্ধী বা সহিংস বনাম অহিংস বা কংগ্রেস বনাম চরমপন্থী বিপ্লবী এসবের ভিত্তিতে ডাক্তারজীর আদর্শ নির্ধারিত হয়নি। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের থেকে তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য।
একশ্রেণীর মানুষ যারা ভারতকে শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক একক হিসেবে বিবেচনা করত, তাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সব কৃতিত্বই নিজেদের পকেটে রাখতে আগ্রহী ছিল। স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য অন্যরা যেন কিছুই করেননি। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন থেকে শুরু করে অহিংস সত্যাগ্রহ, সেনাবিদ্রোহ বা আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধ – এই সমস্ত প্রচেষ্টার ফল হল আমাদের আজকের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য- অব্যবস্থা এবং উপনিবেশ শাসনে তাদের অক্ষমতা এবং অনিচ্ছার অবদানও অস্বীকার করা যায় না। ভারতের মতো দীর্ঘ স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়নি তেমন উপনিবেশগুলোও এই সময়ে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পেয়েছে। ৪২ সালে সত্যাগ্রহ ছিল মহাত্মা গান্ধীর করা শেষ সত্যাগ্রহ, কিন্তু তারও বেশ কিছুটা পরে ১৯৪৭ এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই স্বাধীনতা এসেছে শুধুমাত্র ১৯৪২ এর কারণে এমন দাবি করা হাস্যকর। এই আন্দোলনে যাঁরা কারারুদ্ধ হয়েছিলেন স্বাধীনতা আনার কৃতিত্ব তাঁদেরও ছিল।
এই প্রসঙ্গে একটি রূপকগল্প বলা যেতে পারে। একজন কৃষক খুব ক্ষুধার্ত ছিল। তাঁর স্ত্রী তাঁকে খাবার পরিবেশন করছিলেন। কিন্তু সে যতই রুটি খাচ্ছিল তাঁর খিদে মিটছিল না। এইভাবে দশটি রুটি খাওয়ার পর যখন সে ১১ তম রুটি খেল তখন তাঁর ক্ষুদা মিটলো। তখন সে রেগে গিয়ে স্ত্রী কে বকাঝকা করতে লাগলো যে এই ১১ তম রুটিটি কেন তাকে আগে দেওয়া হয়নি ! তাহলে একটি রুটি খেয়ে তার পেট ভরে যেত! আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমস্ত কৃতিত্ব বিয়াল্লিশের আগস্ট আন্দোলনকে দেওয়াটাও উপরের গল্পের মতই হাস্যকর। এ সম্পর্কে ইতিহাস কি বলে সেটা দেখা যাক!
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – ভারতের স্বাধীনতার উপরে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনের প্রভাব কেমন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন – শূন্য। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং পশ্চিমবঙ্গের কার্যকরী রাজ্যপাল পিএম চক্রবর্তী স্বয়ং এই কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, এটলীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছিল ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন চলে যাওয়া বিষয়ে। তিনি এটলী কে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন যেহেতু ভারত ছাড়া আন্দোলন ততদিনের ম্লান হয়ে গেছিল এবং ১৯৪৭ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের তাড়াহুড়ো করে চলে যাওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাহলে তাঁরা কেন চলে গেল? জবাবে এটলী বেশ কিছু কারণ বলেছিলেন – যার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্রিটিশ রাজের প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী আনুগত্য কমে আসে। যাঁর প্রধান কারণ ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামরিক তৎপরতা। তাঁদের কথা শেষে প্রশ্ন করেন যে ব্রিটিশ সরকারের ভারত ছেড়ে যাওয়ার উপর গান্ধীর কতটা প্রভাব ছিল। প্রশ্ন শুনে একটি ব্যঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে তিনি বলেছিলেন – “মিনিমাল” (রঞ্জন বোরা, সুভাষচন্দ্র বসু, ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী, ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধ। জার্নাল অফ হিস্টোরিক্যাল রিভিউ, ভলিউম ২০, (২০০১), নং ১, রেফারেন্স ৪৬)
নেতাজি দ্যা ইন্ডিয়ান স্ট্যাগল বইতে লিখেছেন “………এবং মহাত্মাজীর নিজেরই তাঁর দ্বারা পরিচালিত এবং নির্ধারিত পরিকল্পনার বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না এবং ভারতকে তার স্বাধীনতার অমূল্য লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযানের সুশৃংখল পর্যায়গুলো সম্পর্কেও কোন পরিষ্কার ধারণা ছিল না।”
রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন “……এবং এটি তিনটি সম্মিলিত প্রভাব ছিল যা ভারতকে স্বাধীন করেছিল। এর মধ্যে বিশেষ করে আইএনের বিচারের সময় প্রকাশিত তথ্য এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সরকারের কাছে স্পষ্ট করে দেয় যে ভারত শাসন করার জন্য তাঁরা আর ভারতের আনুগত্যের উপর নির্ভর করতে পারবে না। সম্ভবত এটাই ছিল তার ভারতছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বড় কারণ। (মজুমদার, রমেশ চন্দ্র, – থ্রি ফেজ অফ ইন্ডিয়াস স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম, বিভিএন বোম্বে, ইন্ডিয়া ১৯৬৭, পৃ. ৫৮- ৫৯)
এই সমস্ত বিবরণ থেকে এটা মনে করা কখনোই ভুল নয় যে , ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না। জেলে যাওয়া যে দেশভক্ত হওয়ার একমাত্র পরিচয় তেমন ভাবাও ঠিক না। স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তির মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁরা নিজের পরিবার দেখাশোনা করেছেন, বিপ্লবীদের সাহায্য করেছেন, তাদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমী চেতনা জাগিয়েছেন, স্কুলের মাধ্যমে ছাত্রদের উজ্জীবিত করেছেন, স্বদেশীর মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ করেছেন, দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ভারতীয় বিকল্প দিয়েছেন, লোকশিল্প – সাংবাদিকতা- কথাসাহিত্য – উপন্যাস – নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে ভারতীয় জাতিকে জাগ্রত করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের সকলের অবদান রয়েছে।
ভারত শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সত্তা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক সত্তা যা হাজার হাজার বছরের চিন্তাভাবনার ভিত্তিতে তৈরি একটি চিরন্তন সামগ্রিক ও অবিচ্ছেদ্য জীবন দর্শনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এই জীবন-কৃষ্টি-সংস্কৃতি এই বৈচিত্র্যময় সমাজকে এক বিনি সুতোয় গেঁথে আসমুদ্রহিমাচলকে এক অনন্য পরিচয় দান করেছে। অতএব ভারতের ইতিহাসে যখনই সফল রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে তখনই ভারতের আধ্যাত্মিক শক্তির সাহায্য নিয়ে একটি সাংস্কৃতির জাগরণ ঘটেছে। পরিস্থিতি যত খারাপ হয়েছে আধ্যাত্মিক শক্তিও ভারতবর্ষের মনে একই ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কারণেই ১২ শতক থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত মুঘলদের শাসনের সাথে সাথে ভক্তি আন্দোলন ভারতবর্ষের তীব্র হয়ে উঠেছিল। উত্তরের স্বামী রামানন্দ থেকে শুরু করে সুদুর দক্ষিণের রামানুজাচার্য পর্যন্ত প্রতিটি অঞ্চলে সাধু সন্ন্যাসীদের মতো আধ্যাত্মিক মহাপুরুষরা একটি অবিচ্ছিন্ন ঐতিহ্যবুহ্য রচনা করেন। ব্রিটিশদের দাসত্বের পাশাপাশি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, রামকৃষ্ণ পরমহংস,স্বামী বিবেকানন্দের মতো আধ্যাত্বিক নেতৃত্বের ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল। ভারতের ইতিহাসে কোন সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন সফল হয়নি। তাই সংস্কৃতিক জাগরণের কাজকে রাজনীতির মাপকাঠি দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত নয়।
লেখক ড. মনমোহন বৈদ্য, আরএসএস-এর সহ-সর-কার্যবাহ (RSS joint general secretary Dr Manmohan Vaidya)
https://www.swadeshnews.in/swadesh-vishesh/swadheenta-samar-mein-sangh-amrit-mahotsav-830196