স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবীহুতাত্মা ক্ষুদিরাম বসু (জন্মঃ- ৩ ডিসেম্বর, ১৮৮৯ – মৃত্যুঃ- ১১ আগস্ট, ১৯০৮)

১৯০২-০৩ খ্রিস্টাব্দ, যখন বিপ্লবী নেতা শ্রী অরবিন্দ এবং ভগিনী নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী দলগুলোর সাথে গোপন পরিকল্পনা করেন, তখন তরুণ ছাত্র ক্ষুদিরাম বিপ্লবে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত হন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন ক্ষুদিরাম বসু। এ সময় ক্ষুদিরাম পরিচিত হন বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সাথে এবং তাঁর নেতৃত্বে গুপ্ত সংগঠনে যোগ দেন। সত্যেন্দ্রনাথ তাকে সে যুগের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন ‘যুগান্তর’ দলের সদস্য করে নেন। এই দল সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সত্যেন্দ্রনাথ এক তাঁতশালা স্থাপন করেছিলেন। তাঁতশালার আড়ালে তিনি তাঁর শিষ্যদের লাঠিখেলা, অসি চালনা, বোমা ফাটানো, পিস্তল, বন্দুক ছোড়া ইত্যাদি শিক্ষা দিতেন। এই গুপ্ত সংগঠনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্ষুদিরাম ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় জ্বালিয়ে দেন এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত লবণবোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দেন। এসব কর্মকান্ডে তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে ধীরে ধীরে গুপ্ত সংগঠনের ভেতরে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

১৯০৬ সালের দিকে দেশপ্রেমের একটা ছোট বই ছাপা হয়, এগুলো বিক্রির জন্য তরুণদের উপর দায়িত্ব পড়ে। ক্ষুদিরাম তাদের মধ্যে অন্যতম। মেদিনীপুর মারাঠা কেল্লায় প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে ক্ষুদিরাম বই হাতে বলছেন- “আসুন পড়ুন। দেশের দুর্দশার খবর জানুন। অত্যাচারী রাজশক্তির নির্মমতার নজির – এই বই আপনাদের জন্য”। এমন সময় একজন হাবিলদার এসে ক্ষুদিরামের হাত চেপে ধরল। শক্তি ও বয়সে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি হলেও হাবিলদারের মুখে এক ঘুষি মেরে দিলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। তৎক্ষনাৎ নাক ফেঁটে রক্ত বেরুলো। সত্যেন বসু ঠিক ওই সময় এসে হাজির হলেন। দেখলেন বিষয়টি। ছল করে সান্ত্বনা দিলেন হাবিলদারকে। ক্ষুদিরাম মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া। পুলিশ মারা ও নিষিদ্ধ বই বিলির অপরাধে ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মামলা করা হল। বাংলাসহ সারা ভারতবর্ষ এই প্রথম ক্ষুদিরামকে চিনলো। ১৩ এপ্রিল ক্ষুদিরাম মুক্তি পেলেন। খানিকটা শাস্তি পেলেন সত্যেন বসু। ক্ষুদিরাম এবার গুপ্ত সমিতির কাজে আরো উঠে পড়ে লাগলেন। ইতোমধ্যে বিলেতী পণ্য বর্জনের পালা শুরু হলো। বিলেতী পণ্য নৌকায় দেখলে ক্ষুদিরামসহ বাংলার অসংখ্য ক্ষুদিরাম বাহিনী তা ডুবিয়ে দিত। ১৯০৭ সালের শেষের দিকে কালী পুজার সময় একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে তিনি ডাকহরকরার কাছ থেকে সরকারি টাকা গুপ্ত সমিতির জন্য সংগ্রহ করে আনেন। সারাদেশে চলতে থাকে ব্রিটিশ শাসক আর সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের সংঘর্ষ, ধড়পাকড় আর নির্যাতন। একের পর এক বিপ্লবীকে ধরে ধরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু করে এবং তাঁদেরকে আন্দামান, আলীপুরসহ বিভিন্ন জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে পাঠানো শুরু করে। জেলে নেয়ার পর তাঁদের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
বিপ্লবীদের রাজদ্রোহ মামলায় কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড মরিয়া হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূলে কাঁপন ধরাতে বিপ্লবীরা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেন কিংসফোর্ডকে হত্যা করার। যথাসময় এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। আর তার সহযোগী করা হয় রংপুরের আরেক যুবক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে। বিপ্লবীদের সম্ভাব্য আক্রমণ এড়াতে কিংসফোর্ডকে বদলি করা হয় মজফফরপুরে। জীবনের কঠিন ব্রত পালন করতে তারাও রওনা দিলেন মজফফরপুর। দুজনে আশ্রয় নিলেন কিংসফোর্ডের বাসভবনের পাশের একটি হোটেলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কিংসফোর্ডের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন। কিংসফোর্ডের বাসভবনের পাশেই ইউরোপিয়ান ক্লাব। অফিস আর ক্লাব ছাড়া কিংসফোর্ড বাইরে যেতেন না।

১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল। বাইরে আগে থেকেই দুই বিপ্লবী প্রস্তুত ছিলেন। গাড়িটি ফটক পার হতে না হতেই প্রচণ্ড শব্দে পুরো শহর কাঁপিয়ে একটি বোমা বিস্ফোরিত হলো। কেনেডির স্ত্রী ও তার মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। বিধ্বস্ত গাড়িটি এক পাশে উল্টে পড়ে। যাকে হত্যার জন্য বোমার বিস্ফোরণ, সেই কিংসফোর্ডের গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে।

বোমা নিক্ষেপ করেই দুই বিপ্লবী ছুটলেন দুই দিকে। পরদিন সকালে ওয়াইসি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন ক্ষুদিরাম। ওদিকে প্রফুল্ল চাকীও পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করলেন।
ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা শহর যেন মুহূর্তে ভেঙে পড়ল। পুলিশবেষ্টিত ক্ষুদিরামকে একনজর দেখতে হাজারো লোক ভিড় জমাল ওয়াইসি রেলস্টেশনে। উৎসুক জনতার উদ্দেশে ক্ষুদিরামের কণ্ঠে তখন ধ্বনিত হলো বজ্রনিনাদ বন্দেমাতরম…!

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই তরুণ বিপ্লবীকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার অনেকটা বিপাকেই পড়ে যায়। যত দিন যাচ্ছিল, সারা ভারতে ক্ষুদিরামকে নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি হচ্ছিল।

ব্রিটিশের মাথা থেকে সেই বোঝা নেমে যায় সেদিন, যেদিন মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা মোতাবেক ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। ক্ষুদিরামকে তারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সেই রায় কার্যকর করেছিল ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট।

ক্ষুদিরাম বসু মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলক্যনাথ বসু ছিলেন নাদাজল প্রদেশের শহরে আয় এজেন্ট। তার মা লক্ষীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র আগেই মৃত্যুবরণ করেন। অপর পূত্রের মৃত্যুর আশংকায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠি খুদের (শস্যের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরাম বসু পরবর্তিতে তার বড় বোনের কাছেই বড় হন।

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি-র থেকে প্রাপ্ত সামগ্রী :-
ক্ষুদিরামের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল দুটি রিভলবার, কয়েক রাউন্ড গুলি, একটি কোট, একটি চেন, একটি ঘড়ি, কয়েক টুকরো কাগজ, দেশলাই, মোমবাতি, তিনটি দশ টাকার নোট, খুচরো ১ টাকা ৭ আনা ৩ পয়সা। আর প্রফুল্ল চাকির কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল, এক জোড়া পামশু, একটি পাঞ্জাবী, একটি রিভলবার, একখন্ড কাপড়, একটি বেনিয়ান, রেলের টিকিট, খুচরো ৮ টাকা ১০ আনা ৯ পয়সা। আর যেখানে বোমা ছোড়া হয়েছিল, সেখানে একটি টিন, বুটজুতো দুই জোড়া, একটি চাদর পাওয়া গিয়েছিল। আর মজফফরপুরে ধরমশালাতে পাওয়া গিয়েছিল, পিতলের থালা, হাতব্যাগ, আলু, নুন, হলুদ গুড়ো, রেলের টাইম টেবিল, কাপড়, ধুতি, তোয়ালে, কম্বল, চাল, পোড়া দেশলাই কাঠি, হাড়ি ও একটি খাটিয়া।

ক্ষুদিরামের পক্ষ অবলম্বনকারী সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর প্রশ্ন ও ক্ষুদিরামের উওর :
সতীশ : কাহাকেও তোমার দেখিতে ইচ্ছা হয় না ?
ক্ষুদি : হাঁ হয় বৈকি। মরণের আগে জন্মভূমি মেদিনীপুরকে দেখিতে সাধ হয় ; দিদির ছেলেমেয়েগুলিকে দেখিতে মন চায়।
সতীশ : তোমার মনে কোনো দুঃখ আছে কি ?
ক্ষুদি : না, কিছু না।
সতীশ : কোন আত্মীয়-স্বজনকে এখানে আসিতে বলিতে চাও !
ক্ষুদি : না, তবে তাঁরা ইচ্ছা করিলে আসিতে পারেন।
সতীশ : তোমার মনে কোন ভয় হয় কি ?
ক্ষুদি : কেন ভয় করিব ? ( হাসতে হাসতে )আমি কি গীতা পড়ি নাই ?
সতীশ : জেলে তোমার প্রতি কেমন ব্যবহার করা হয় ?
ক্ষুদি : একরকম ভালোই। জেলের খাবারটা খারাপ, আমার সহ্য হয় না, তাতেই শরীরটা খারাপ হয়েছে। একটা নির্জন ঘরে আমাকে বন্দি করে রাখে, কেবল একবার স্নানের সময় বাইরে আসতে দেয়। একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, কোন খবররের কাগজ বা বই পড়তে দেয় না। দিলে ভালো হতো।
সতীশ : তুমি কি জান রংপুর হইতে আমরা কয়েকজন উকীল তোমাকে বাঁচাইতে আসিয়াছি? তুমি তো নিজেই আপন কৃতকর্ম স্বীকার করিয়াছ।
ক্ষুদি : কেন স্বীকার করব না ?
সকলে স্তম্ভিত হয়ে গেল। বুঝলো এ আর কেহ নয়, স্বয়ং বালকরূপে মৃত্যুঞ্জয় মহাকাল। অন্তিম সময়ে সে ম্যাৎসিনী, গ্যারিবল্ডি ও রবীন্দ্ররচনাবলী পড়তে চেয়েছিল, অন্তিম দিনে উকীল কালিদাস বাবুকে বলেছিলেন, রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জওহরব্রত উদযাপন করত, আমিও তেমন নির্ভয়ে প্রাণ দিব। আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই। ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা প্রথমে ছিল এই যে – তিনি বোমা বানাতে পারেন, অনুমতি পেলে ওটা সবাইকে শিখিয়ে যেতে চান! বলাবহুল্য সে ইচ্ছা এককথায় বাতিল করে দিয়ে আবার জানতে চাওয়া হয় যে তাঁর শেষ ইচ্ছা কি। এবার ক্ষুদিরাম জানান যে তাঁর দিদিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয় নি কারণ ইচ্ছা থাকলেও স্বামীর অমতে অপরূপা দেবী ভাই ক্ষুদিরামকে দেখে যেতে পারেন নি। কিন্তু সেদিন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন তাঁর পাতানো দিদিটি। সেই পাতানো দিদিটি কে? জুবেদা খাতুন, তিনিই ক্ষুদিরামের মামলার খরচ যুগিয়েছিলেন। তিনি সব বাধা কাটিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মজঃফরপুরে ক্ষুদিরামের সাথে দেখা করতে। ইংরেজদের জল্লাদ পুষ্পমাল্যে ভূষিত হবার যোগ্য তার কন্ঠে ফাঁসির দড়ি পড়াচ্ছিল ; বাংলার দামাল ছেলে সে, সে দড়ি ধরে তাকে সহাস্যে শুধাল “ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন ?” – এটাই তার শেষ কথা।

ক্ষুদিরামের জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু ইতিহাস। আত্মবলিদানের সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর, ৮ মাস। ক্ষুদিরামের উকিল কালিদাস বসু ১১ আগস্টের চাক্ষুস বর্ণনা দিয়েছেন : ভোর ছয়টায় ফাঁসি হইবে। পাঁচটার সময় আমি খাটিয়াখানি ও সৎকারের বস্ত্রাদি লইয়া জেলের ফটকে উপস্থিত হইলাম। দেখিলাম নিকটবর্তী রাস্তা লোকারণ্য, ফুল লইয়া বহু লোক দাঁড়াইয়া আছে। আমরা জেলের ভিতর প্রবেশ করিলাম। ঢুকিতেই এক পুলিশকর্মী বলিলেন যান ভিতরে। জেলের আঙিনায় প্রবেশ করে আমরা দেখিলাম, ডান দিকে একটু দূরে ১৫ ফুট উঁচুতে ফাঁসির মঞ্চ। দুই দিকে দুটি খুঁটি আর একটা মোটা লোহার রড, তারই মধ্যস্থানে বাঁধা মোটা একগাছি দড়ি, শেষপ্রান্তে একটি ফাঁস। একটু অগ্রসর হতেই দেখিলাম চারজন পুলিশ ক্ষুদিরামকে নিয়ে আসছেন। ক্ষুদিরাম আগে আগে দ্রুত পদে আসিয়া যেন পুলিশগুলোকে টেনে আনছেন। আমাদের দেখিয়া ক্ষুদিরাম হাসিল। তারপর দৃঢ়ভাবে মঞ্চের দিকে অগ্রসর হইল। মঞ্চে উপস্থিত হইলে তাহার হাত দুখানি পিছন দিকে আনিয়া দড়ি দিয়ে বাধা হইল। একটি সবুজ রঙের পাতলা টুপি দিয়ে তাহার গ্রীবামূল অবধি ঢাকিয়া গলায় ফাঁসি লাগাইয়া দেওয়া হইল। ক্ষুদিরাম সোজা হয়ে দাঁড়াইয়া রহিল। উডম্যান সাহেব ঘড়ি দেখে একটি রুমাল উড়াইয়া দিলেন। একজন প্রহরী মঞ্চের অন্য প্রান্তে একটি হ্যান্ডেল টানিয়া দিল। ক্ষুদিরাম নীচে অদৃশ্য হয়ে গেল। কেবল কয়েক সেকেন্ড ধরিয়া উপরের দড়িটি নড়িতে লাগিল। তারপর সব স্থির। আধঘন্টা পর দুজন বাঙালি ডাক্তার আসিয়া খাটিয়া ও নতুন বস্ত্র নিয়ে গেল। নিয়ম অনুসারে ফাঁসির পর গ্রীবার পশ্চাদদিক অস্ত্র করিয়া দেখা হয়, পড়বার পর মৃত্যু হইল কিনা। ডাক্তার সেই অস্ত্র করা স্থান সেলাই করিয়া, ঠেলিয়া বাহির হওয়া জিহ্বা ও চক্ষু যথাস্থানে বসাইয়া, নূতন কাপড় পড়াইয়া জেলের বাহিরে আনিলেন।

“একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী।
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি”
………………….
তথ্য সংগৃহীত – প্রতাপ সাহা (https://www.facebook.com/pratapcsaha)। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.