Nirmala Mishra: হাসিখুশি মানুষটা সাত বছর ধরে শয্যাশায়ী! সহ্য করা যাচ্ছিল না: সৈকত মিত্র

আমাকে ছেলের মতো নয়, ছেলেই মনে করতেন। নিকট আত্মীয় বললেও কম বলা হয়। ওঁর মতো প্রাণবন্ত মানুষ খুব কম দেখেছি। শিল্পী হিসাবে উনি কেমন, সেটা বলার যোগ্যতা আমার নেই। সাত বছর ধরে তিনি বিছানায় শুয়ে, সারাদিন যে মানুষটা গানের মধ্যে ডুবে থাকতেন, তিনি কথাও বলতে পারছেন না। এটা দেখতে ভাল লাগত না। যত বার দেখা করতে গিয়েছি, উনি কথা বলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। খুব কষ্ট হত এই অবস্থায় নির্মলা পিসিকে দেখতে।একেবারে ছোট্ট শিশু মতো ছিলেন। এক বার একটা অনুষ্ঠানে আমার বৌয়ের শাড়ি খুব পছন্দ হল পিসির। আমার কাছে বায়না, ওঁকে ওই শাড়িটাই কিনে দিতে হবে। আমি তো আর খুঁজেই পেলাম না একই রকম শাড়ি। অন্য একটা শাড়ি নিয়ে গেলাম। পিসি তত দিনে ভুলে গেছেন কোন শাড়িটা তাঁর পছন্দ হয়েছিল, আমার নিয়ে যাওয়া শাড়ি দেখে বললেন, এই শাড়িটাই তো চেয়েছিলাম তোর কাছে!

লাল রং খুব ভালবাসতেন নির্মলা পিসি। ওঁর চশমাতেও লাল নেলপলিশের চিহ্ন দিয়ে রাখতেন। অনেক বার জানতে চেয়েছি এই বিষয়ে অনর্গল কথা বলা ‘ঝামেলা পিসি’ কিন্তু চুপ করে থাকতেন, কিছু বলতেন না। অসম্ভব রেগেও যেতেন। তখন ‘চিরদিনের গান’ এই শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয় ছিল। রিহার্সাল চলছে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একটা গান ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ গাইবেন নির্মলা পিসি। কোনও একটা জায়গায় সমস্যা হচ্ছিল, আমাদের সমসাময়িক এক জন পিসিকে গিয়ে বলেছিল, এই জায়গাটা হচ্ছে না দিদি, এটা এ রকম হবে। ব্যস আর যায় কোথায়! পিসি তো রেগে আগুন। সামলানোই যাচ্ছিল না। এই ভাবে রেগে যেতে আগে কখনও দেখিনি। উনি তো সাত বছরের কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেলেন, আমাদের অভাবী করে দিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.