অধিনায়ক হিসাবে নতুন নজির গড়লেন শিখর ধবন। পিছনে ফেলে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলী, সুরেশ রায়নাদের। ভারতের প্রথম অধিনায়ক হিসাবে এক দিনের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবিয়ানদের চুনকাম করলেন। সিরিজের শেষ ম্যাচে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ভারত জিতল ১১৯ রানে।
দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচ জেতার পরেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ভারতের। বুধবারের তৃতীয় এক দিনের ম্যাচ ছিল নিয়মরক্ষার। তাও পরীক্ষার পথে হাঁটেনি ভারত। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে সহজ জয় তুলে নিল ধবনের ভারত। প্রথম দুই ম্যাচের মতো লড়াই করতে পারল না নিকোলাস পুরানের দল। ৩-০ ব্যবধানে এক দিনের সিরিজ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিল সফরকারীরা। যদিও অপরাজিত থেকেও এক দিনের ক্রিকেটে জীবনের প্রথম শতরান মাঠেই ফেলে এলেন শুভমন গিল।
বুধবার পোর্ট অব স্পেনের বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। পূর্বাভাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বৃষ্টি নামল দফায় দফায়। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ধবন। অভিজ্ঞ ব্যাটার জানেন ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচ গেলে রান তাড়া করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। হলও তাই। ঘরের মাঠে রানের চাপেই হেরে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের ইনিংস ৩৬ ওভার খেলা হওয়ার পর বৃষ্টি নামে। তখন ভারতের রান ৩ উইকেটে ২২৫। সময়ের হিসাবে ম্যাচের ওভার সংখ্যা কমে হয় ৩৫। ফলে আর ব্যাট করার সুযোগ পাননি ধবনরা। কিন্তু ডাকওয়ার্থ সুইস পদ্ধতিতে ৩৫ ওভারে জয়ের জন্য ক্যারিবিয়ানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫৭ রান। তখনই ভারতের চুনকাম করার সম্ভাবনা কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। তার উপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসেই মহম্মদ সিরাজ কাইল মেয়ার্স (০) এবং শামার ব্রুকসকে (০) সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়ে পুরানদের অবশিষ্ট আশা টুকুও শেষ করে দেন। ম্যাচের বাকি সময়টা ক্যারিবিয়ানরা লড়াই করলেন মুখ রক্ষার্থে। অন্য ওপেনার সাই হোপ করলেন ২২ রান। তাঁকে ফেরান যুজবেন্দ্র চহাল। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানর পর দলের হাল ধরেন ব্যান্ডন কিং এবং পুরান। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের জুটিতে উঠল ২৭ রান। দুই ব্যাটারই করলেন ৪২ রান। তাঁদের ফেরালেন যথাক্রমে অক্ষর পটেল এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের ব্যাটাররা উইকেটে এলেন এবং সাজঘরে ফিরলেন। শেষ ছয় ব্যাটারের অবদান মাত্র ২৫ রান। ভারতের কোনও বোলারের সামনেই এ দিন স্বচ্ছন্দ দেখায়নি ক্যারিবিয়ানদের। শেষ পর্যন্ত আয়োজকদের ইনিংস শেষ হল ১৩৭ রানে।
শুভমন গিল।
ছবি: টুইটার।
ভারতের সফলতম বোলার চহাল ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন। ২টি করে উইকেট সিরাজ এবং শার্দুল ঠাকুরের। ১টি করে উইকেট নিলেন প্রসিদ্ধ এবং অক্ষর।
দিনের শুরুতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েও ধবনদের চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখা যায়নি। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে উইকেট বাঁচিয়ে খেলার পরিকল্পনা নেয় ভারতীয় দল। পূর্বাভাস মতোই প্রথম বার বৃষ্টি নামার আগে ভারত ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১১৪ রান করে। অধিনায়ক ধবন ৭টি চারের সাহায্যে ৭৪ বলে ৫৮ রান করে ফিরে যান। তাঁকে আউট করলেন লেগ স্পিনার হেডেন ওয়ালস। খেলা বন্ধের সময় উইকেটে ছিলেন অন্য ওপেনার শুভমন (৫১) এবং শ্রেয়স আসার (২)। বৃষ্টির জন্য প্রায় দু’ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায় ওভার সংখ্যা কমিয়ে ৪০ করা হয়। কিন্তু ভারতীয় ইনিংসের ৩৬ ওভারের পর আবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। সে সময় ভারতের রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২২৫। শ্রেয়স ৪টি চার ১টি ছয়ের সাহায্যে করেন ৩৪ বলে ৪৪ রান। চার নম্বরে নেমে সূর্যকুমার যাদব (৮) রান পেলেন না। তখনও ৯৮ বলে ৯৮ রান করে উইকেটের এক দিন আগলে ছিলেন শুভমন। ৭ বলে ৬ রান করে তাঁর সঙ্গে ২২ গজে ছিলেন সঞ্জু স্যামসন। ভারত আর ব্যাট করার সুযোগ না পাওয়ায় এক দিনের ক্রিকেট প্রথম শতরানও অধরা থাকল শুভমনের। আর একটু চালিয়ে খেললে নিশ্চিত শতরান মাঠে ফেলে আসতে হত না তাঁকে। চোট না সারায় এই ম্যাচেও খেলতে পারলেন না সহ-অধিনায়ক রবীন্দ্র জাডেজা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফততম বোলার ওয়ালস ৫৭ রানে ২ উইকেট নেন। ৪৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন আকেল হোসেন।